ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১

কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে সব বাধা দূর করা প্রয়োজন

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: মার্চ ১৪, ২০২৫, ০৫:০৭ বিকাল  

বর্তমান কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নে আধুনিক প্রযুক্তির প্রসার, যান্ত্রিকীকরণ, উন্নত কৃষি উপকরণের সহজলভ্যতা (বীজ, সার ও সেচ), উন্নত গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন কৃষিপ্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং কৃষকের দ্বারপ্রান্তে কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে কৃষির উৎপাদনশীলতা ও মোট উৎপাদন প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ফলে খোরপোশ কৃষি বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, কুয়েত, সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা ও নেপালে সবজি রপ্তানি হয়। কাতার, ভারত, ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, সৌদি আরব ও অস্ট্রেলিয়ায় ফল রপ্তানি হয়। অন্যান্য দেশের রপ্তানির সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশ এখনো কৃষিপণ্য রপ্তানির বাজারে উল্লেখযোগ্য হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেনি। কৃষিপণ্য রপ্তানির সম্ভাবনার পাশাপাশি অনেক প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। পণ্য রপ্তানির জন্য অনেক সময় বিমানে পর্যাপ্ত জায়গা মেলে না। এছাড়াও বিভিন্ন পণ্যের জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগারের অভাব, বিমানবন্দরে হিমাগারের পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকা; বিভিন্ন কৃষিপণ্যের কাঙ্ক্ষিত জাতের অভাব এসব বিষয় রয়েছে। এছাড়া আমদানিকারক দেশগুলোয় কী কী পণ্যের চাহিদা রয়েছে; সে বিষয়ে তথ্য সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ নতুন নতুন বাজার অন্বেষণ করা দরকার।

বলার অপেক্ষা রাখে না, কৃষিপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন নতুন পণ্য যুক্ত হচ্ছে এবং প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যও রপ্তানির তালিকায় অধিকহারে যুক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে নানাবিধ কৃষিপণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এরমধ্যে পাট ও পাটজাত দ্রব্য, চা পাতা, আম, কাঁঠাল, লেবু, লিচু, লটকন, ফুড স্টাফ প্রভৃতি রয়েছে। কৃষিপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শাকসবজি এগিয়ে রয়েছে। তবে ফলমূলও রপ্তানির ক্ষেত্রে আগামী দিনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।  প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন ধরনের উপকরণ উচ্চ শুল্ক দিয়ে আমদানি করতে হয়। গত বছর বাংলাদেশের প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের বাজার (দেশীয় চাহিদা ও রপ্তানি) ছিল ৪৮০ কোটি ডলারের। আর কৃষিপণ্যের বাজার ছিল ৪ হাজার ৭৫৪ কোটি ডলারের। দেশে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের প্রায় এক হাজার কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই অতি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র। বাকি ১০ শতাংশ মাঝারি ও বড়। এর মধ্যে রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ২৫০ কারখানা।

বলা বাহুল্য, কৃষকরা প্রচলিত চাষাবাদ পদ্ধতির পাশাপাশি বিপুল পরিমাণে শাকসবজি ও ফলমূল আবাদ করছেন। ফলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন শাকসবজি ও ফলমূল বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানি কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানি করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের নামিদামি ব্র্যান্ডের বিক্রয়কেন্দ্রে বাংলাদেশে তৈরি ট্যাগ লাগানো পোশাকের আধিক্য নতুন কিছু নয়। তবে মধ্যপ্রাচ্য, ইইউ, এমনকি আফ্রিকা অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের সুপারশপে এখন ‘বাংলাদেশে তৈরি’ প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের দেখাও মেলে। এই প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যই নতুন রপ্তানি খাত হিসেবে আশা দেখাচ্ছে। সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ওতপ্রোতভাবে কৃষি উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমাদের প্রত্যাশা, কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে সব বাধা দূর করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় নিশ্চিত করবে সরকার।

দৈনিক সরোবর/কেএমএএ