ঢাকা, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১

বর্ষার আগেই পাহাড়ধস ঠেকাতে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: মার্চ ০৫, ২০২৫, ০৬:৪৭ বিকাল  

যেখানে পাহাড় আছে, সেখানে ভূমিধস হবেই। এটি রূপান্তর, আগ্নেয় বা পাললিক শিলা- যেটিই হোক না কেন, সব ক্ষেত্রেই সাধারণত পাহাড়ধস হয়। বরাবর এমনটিই হয়ে আসছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ পাহাড় গঠিত পাললিক শিলা দিয়ে। এখানে ভূমিধস বেশি হবে। এটিই স্বাভাবিক। কয়েক দশক আগেও ভূমিধস হতো। কিন্তু তখন এভাবে মানুষের মৃত্যু হতো না। তাই এ বিষয়টি নিয়ে এত আলোচনা হতো বলে মানুষ তা জানতেও পারত না। অতীতের চেয়ে বর্তমানে পাহাড়ধস আগের থেকে বেড়ে গেছে। সিলেট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত পাহাড়ের বিন্যাস হলো উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত। দেশের পূর্বে ভারতের মণিপুর, মিজোরাম। এরও পূর্বে মিয়ানমারের পাহাড়গুলোর গঠন একই রকম। এর মধ্যে কিছু পাহাড় উচ্চতা ও কিছু পাহাড় ভ্যালি তৈরি করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাহাড়গুলোর মধ্যে ভূতাত্ত্বিক গঠন রয়েছে তিন ধরনের। এগুলো হলো বালুপ্রধান, স্যান্ডশেল অল্টারনেশনস (বালুমাটির স্তরবিশিষ্ট) ও কাদাপ্রধান পাহাড়। স্যান্ডশেল অল্টারনেশনস পাহাড়গুলো ভূমিধসের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। দেশের পাহাড়গুলোর পূর্বে ও পশ্চিমে ঢাল রয়েছে। যে পাহাড়গুলোর ঢাল ও এর ভেতরের ভূতাত্ত্বিক স্তর যখন একই দিকে থাকবে, সে পাহাড় বেশি ঝুঁকিপূণ

বলা বাহুল্য, মূলত বর্ষা এলেই পাহাড়ধস বেশি হয়। প্রতি বছরই এ ধরনের ভয়াবহ ঘটনা ঘটে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট অঞ্চলে। এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, পাহাড়ধসের ঘটনায় গত ১৫ বছরে শুধু চট্টগ্রাম জেলাতেই প্রাণহানি ঘটেছে তিন শতাধিকের বেশি। এর মধ্যে ভয়াবহ পাহাড়ধসের ঘটনাটি ঘটে ২০০৭ সালের ১১ জুন। ওই ঘটনায় ১২৭ জনের প্রাণহানি হয়। একই বছরে তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড়ধসে ১৫৬ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান। গত বছরও ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ব্যাপক প্রাণহানির সংবাদ জানা গেছে। পাহাড়ধস রোধে করণীয় সম্পর্কে এখনই ভাবতে হবে। বর্ষার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাহাড়ি এলাকায়, বিশেষ করে যেখানে যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে ঘনবসতি রয়েছে; সেখানে বিশেষ নজরদারি ও তদারক প্রয়োজন। এছাড়া পাহাড় কাটার ফলে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় হচ্ছে। তাই পাহাড় কাটা বন্ধ এবং পাহাড়ধস রোধে যা যা করণীয়, এ বিষয়ে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ পরিবেশ রক্ষায় এর কোনো বিকল্প নেই।

বলার অপেক্ষা রাখে না, পাহাড়-পর্বত পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। কিন্তু বর্তমানে পরিবেশগত বিপর্যয়ের একটি আতঙ্ক জাগানো প্রপঞ্চের নাম পাহাড়ধস। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে পাহাড় ধস বেড়েছে। এসব এলাকায় পাহাড় ধসজনিত ভয়াবহতা পরিবেশবিদ, নগর পরিকল্পনাবিদ ও সাধারণ মানুষকে নতুন বাস্তবতার সামনে দাঁড় করিয়েছে। ভাবতে বাধ্য করেছে, পরিবেশের ব্যবহার কেমন হওয়া উচিত এবং ধসজনিত বিপর্যয় মোকাবিলায় আমাদের করণীয়গুলো কেমন হওয়া উচিত। বর্ষার সময় ভারী বৃষ্টি হতে পারে। ওই সময় নেমে আসতে পারে বড় ধরনের বিপর্যয়। এছাড়া শুধু ভারী বৃষ্টির জন্যই পাহাড়ধস হয় না। কয়েক দশক ধরে বন-পাহাড় ধ্বংস করা, মাটি কাটা, বসতি স্থাপন করা, প্রাকৃতিক গঠনকে বিবেচনায় না নিয়ে রাস্তাঘাট তৈরির কারণেও পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে আছে পাহাড়ে উন্নয়নের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অভাব। অপরিকল্পিত জুমচাষও পাহাড়ধসের কারণ বলে কেউ কেউ মনে করেন। আমাদের প্রত্যাশা, পাহাড়ধসের মতো বিপর্যয় ঠেকাতে বর্ষার আগেই ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ।

দৈনিক সরোবর/কেএমএএ