জনমনে স্বস্তি ফেরাতে আইনি পদক্ষেপ দ্রুত প্রয়োজন
প্রকাশিত: মার্চ ১২, ২০২৫, ০২:৫৪ দুপুর

আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে একশ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল এই হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। তবে দ্রুত এসব অপকর্ম নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। দেশজুড়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড জনমনে আতঙ্ক তৈরি করছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির জানান দিচ্ছে; যা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। গত সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর, হামলা, ডাকাতি ও প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার মতো ঘটনাও ঘটেছে। একদিকে সেই রেশ, অন্যদিকে নতুন ঘটনা জনমনে ভয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে আতঙ্কে দিন কাটছে সাধারণ মানুষের। এভাবে কেন মানুষ বারবার আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এসব ঘটনাকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা যাই বলি না কেন- সরকার দায় এড়াতে পারে না। এসব ঘটনা আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করে এবং সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। অনেক সময় নিরপরাধ লোকজনও এমন ঘটনার শিকার হয়; যা দেশের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত করে। যে কোনো অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির ন্যায়বিচার প্রাপ্তি যেমন অধিকার, তেমনি তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতা আগেও দেখা গেছে। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। জনতা দ্বারা নিজ হাতে বিচার, একটি গুরুতর সমস্যা যা অনেক দেশেই দেখা যায়। এটি হলো যখন একটি উত্তেজিত জনতা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা বিচার বিভাগের হস্তক্ষেপ ছাড়াই কাউকে শাস্তি দেয়। জননিরাপত্তা নিয়ে আজ নতুন নয়। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা ছিল নিরাপদ জীবন বিধানে কঠোর হবে। কিন্তু কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না অপরাধ, কাটছে না আশঙ্কা। হত্যার তালিকা দীর্ঘ হলেও আইনি ব্যবস্থার তৎপরতা চোখে পড়ছে না। অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তাদের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা; যা এখনো সম্ভব হয়নি। বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
বলা বাহুল্য, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয় এবং সব অপরাধের বিচারের দায়িত্ব আদালতের। যারা আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে, তারা অপরাধ করছে এবং দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলছে; যা দেশের জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি করছে। দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং দেশের সুনাম রক্ষায় কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতিটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রেরই নিজস্ব আইন রয়েছে এবং তা অনুযায়ী যাবতীয় বিচার প্রক্রিয়া সম্পাদিত হয়। এর ব্যত্যয় ঘটলে বিচারকার্য বিঘ্নিত হয়, সৃষ্টি হয় অপ্রত্যাশিত বিশৃঙ্খলা। তাই মব ভায়োলেন্সের মতো সব ব্যবস্থা ও উপাদানের শিগগিরই বিলোপ করতে হবে। যারা এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাদের গ্রেপ্তার করে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা না নিলে রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থা আরও ভেঙে পড়ার আশঙ্কা স্পষ্ট হয়ে যাবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে বিচারের প্রতি জনতার আস্থা সৃষ্টি এবং অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। আমাদের প্রত্যাশা, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিয়ে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
দৈনিক সরোবর/কেএমএএ