ঢাকা, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১

স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি

চিকিৎসা সংক্রান্ত অভিযোগের নিষ্পত্তি জরুরি 

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: মে ০৪, ২০২৪, ০৮:০৬ রাত  

দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে এ পর্যন্ত কম কথা খরচ হয়নি। এখনো হচ্ছে। এতে কি স্বাস্থ্য খাতের সত্যিকারের কোনো উন্নতি হয়েছে? এ প্রশ্ন যখন ওঠে তখন; একটি কথা জোর দিয়ে বলা যায়, বর্তমান সরকার স্বাস্থ্য খাতের উন্নতি বিধানে যথেষ্ট আন্তরিক ও যত্নশীল। আগের সরকারগুলো স্বাস্থ্য খাতের উন্নতিতে কতটা অবদান রেখেছে, তা ভুলে গেলে চলবে না। স্বাস্থ্য খাতকে তারা একটি উন্নতির জায়গায় পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা না করে যত অনিয়ম-দুর্নীতির মচ্ছব চলতে পারে, এর ব্যবস্থা করেছে। তাই এ খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করে স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে সময় লাগছে বলে ধরে নেয়া যায়। নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী যে এ খাতকে সঠিকভাবে চালাতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছেন, তা দৃশ্যমান। এরপরও কথা থাকে। সেটি হলো কতিপয় দুর্নীতিবাজ রয়েছে। তাদের কারণে মূলত সরকার দেশের স্বাস্থ্য খাতের মান উন্নতির পর্যায়ে নিয়ে যেতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। আমরা চাই, এসব দুর্নীতিবাজকে আগে ধরা হোক। কোনো দুর্নীতিবাজ রেখে স্বাস্থ্য খাতের উন্নতি সম্ভব নয়। 

এদিকে এক সমীক্ষায় চিকিৎসা খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির বিচার পিছিয়ে থাকার চিত্র পাওয়া গেছে। এতে উঠে এসেছে এ খাতের হর্তাকর্তাদের অসহযোগিতায় সম্ভব হচ্ছে না সঠিক বিচার করা। অনিয়ম-দুর্নীতির বিভিন্ন ঘটনার তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। কিন্তু সংস্থাটি এতে কাঙ্ক্ষিত ব্যবস্থা গ্রহণে পিছিয়ে আছে। গত পাঁচ বছরে এ খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের ৩৫ শতাংশ নিষ্পত্তি করেছে সংস্থাটি। অন্যদিকে ৬৫ শতাংশ অভিযোগ নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। কমিশনের ওয়েবসাইটে দেয়া ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। অভিযোগ নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রতার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর আগ্রহে ঘাটতি রয়েছে। দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে চিকিৎসাসেবা সংক্রান্ত ৬৬টি অভিযোগ নিয়ে কাজ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এ সময় নিষ্পত্তি হয়েছে ২৩টি অভিযোগ। নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে ৪৩টি অভিযোগ। 

২০২৩ সালে চিকিৎসাসেবা সংক্রান্ত ২৫টি অভিযোগ নিয়ে কাজ করেছে মানবাধিকার কমিশন। তা গত পাঁচ বছরে সর্বোচ্চ। এসব অভিযোগের মধ্যে ভুক্তভোগী কর্তৃক করা অভিযোগ দুটি। অন্যদিকে কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত (সুয়োমটো) হয়ে গ্রহণ করা অভিযোগের সংখ্যা ২৩। তা এ সময় কমিশন কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন সুয়োমটো অভিযোগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ। ভুক্তভোগীদের করা দুটি অভিযোগ নিষ্পত্তি হলেও কমিশন কর্তৃক গৃহীত ২৩টি অভিযোগের মধ্যে মাত্র তিনটি অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে। নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে ২০টি অভিযোগ। ওই হিসাবে গত বছর চিকিৎসাসেবা সংক্রান্ত অভিযোগের ৮০ শতাংশ নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর। তাই চিকিৎসা খাতের অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িতদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতেই হবে। আমাদের মনে হয়, স্বাস্থ্যসেবা খাতের দুর্নীতিবাজদের সরকারের মান ক্ষুণ্ন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আমরা আশা করি, চিকিৎসাসেবা সংক্রান্ত অভিযোগের নিষ্পত্তি দ্রুত শেষ করা হবে। এছাড়া অনিয়ম ও দুর্নীতিবাজদের বিচারও জরুরি ভিত্তিতে করা উচিত।