মন্ত্রিসভায় সড়ক আইন অনুমোদিত
যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি
প্রকাশিত: মার্চ ১৪, ২০২৪, ০৮:৩৫ রাত

দেশে সড়কে মৃত্যুর মিছিল যেভাবে লেগে রয়েছে, এতে সড়ক পরিবহন আইন কঠোর করার দাবি চারদিক থেকে উঠেছিল। কিন্তু কারোর কোনো দাবিই সরকার পাত্তা দেয়নি। মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত সড়ক পরিবহন আইন অনুমোদন করেছেন সরকারপ্রধান। এতে চালক-সহকারীর জেল ও জরিমানায় বড় ছাড় দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় সড়কে মৃত্যুর মিছিল কমবে, না আরও বাড়বে; তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সড়কের নিরপাত্তা বিধানে অনুমোদিত সড়ক পরিবহন আইন কার্যত কোনো ভূমিকা রাখবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থেকে যায়। কারণ বিদ্যমান যে সড়ক পরিবহন আইন ছিল, এর আসলে কোনো কার্যকারিতা ছিল না। কোনো ধরনের সড়ক আইনের বাস্তবায়ন চোখে পড়েনি। কিন্তু নানা সংগঠন ও মহল থেকে বারবার দাবি উঠেছে, সড়ক আইন যথার্থভাবে বাস্তবায়িত হোক। তাহলে সড়কে নিরাপত্তা ফিরবে। অথচ কর্তৃপক্ষ পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের ভয়ে সড়ক আইন কড়াকড়িভাবে কার্যকর করেনি। তাই সড়কের নিরাপত্তা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে।
প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ সড়কে মারা পড়ছে। এত মানুষের মৃত্যু ঘটনা কাউকেই আর ব্যথিত করছে না। কর্তৃপক্ষ পুরোপুরিভাবেই নির্বিকার। অথচ সড়কে দুর্ঘটনার রাশ টেনে ধরার জন্য সচেতন মহল থেকে বারবার সরকারকে অনুরোধ করা হচ্ছে সড়ক পরিবহন আইন যেন সঠিবভাবে কার্যকর করা হয়। এ জন্য যে মূলত দায়ী বাস মালিক ও শ্রমিকরা, তা বলাই বাহুল্য। কিছুদিন আগেই সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন নিয়ে সরকারের দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে টানাপড়ন দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত সড়ক আইন কঠোর না করে আগের চেয়ে আরও দুর্বল করে দেয়া হলো। এতে সড়কে দেশের মানুষের জান-মাল কতটা নিরাপত্তা পাবে, সেটিই বড় কথা। এ নিয়ে সরকারের কোনো মাথা ব্যথা আছে কি না, তা আমরা জানি না। তবে এটুকু বলতে পারি, সড়কে দুর্ঘটনা হ্রাসে সরকার কতটা আন্তরিক; তা বোঝা গেল নতুন সড়ক পরিবহন আইন অনুমোদনের মধ্য দিয়ে।
গত বুধবার (১৩ মার্চ) ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০২৪’ সংশোধনী খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনটির অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই সড়ক পরিবহন আইনের বিভিন্ন ধারায় সাজা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর পাশাপাশি দুটি ধারা অজামিনযোগ্য থেকে জামিনযোগ্য করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের অপরাধের জন্য চালক ও তার সহকারীদের জেল-জরিমানায় বড় ছাড় দেয়া হয়েছে। ১২টি ধারায় অপরাধের শাস্তি কমানো ও ৮টিতে জরিমানার পরিমাণ কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সড়ক পরিবহন আইনে আগে তিনটি ধারার অপরাধ অজামিনযোগ্য ছিল। এখন একটি ধারার অপরাধকে অজামিনযোগ্য রেখে অন্যগুলোকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে। এই আইন পাস হলে শুধু দুর্ঘটনায় মারা গেলে বা গুরুতর আহত হলে তা অজামিনযোগ্য অপরাধ হবে বলে গণ্য হবে। কারিগরি নির্দেশ না মানলে এত দিন তিন বছর জেল দেয়ার বিধান ছিল। এ অপরাধের সাজা আগের মতো রাখা হলেও এক্ষেত্রে অজামিনযোগ্য থেকে জামিনযোগ্য করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে খসড়ায়। একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বা অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে গাড়ি চালানোর পর দুর্ঘটনা ঘটলে সেটিকে অজামিনযোগ্য থেকে জামিনযোগ্য অপরাধের বিধান রাখা হচ্ছে। এর আগে বেপরোয়া মোটরযানের কবলে পড়ে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের সাজার বিধান রেখে ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ সংসদে পাস হয়। তখন নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে চালকের সাজা দুই বছর বাড়িয়ে আইনটি প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় সরকার।
অনুমোদতি সড়ক পরিবহন আইন একটি বিষয় পরিষ্কার করেছে, দেশের বাস মালিক ও শ্রমিক সংগঠনকে সরকার বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। দেশের মানুষের জীবনের মূল্য সরকারের কাছে তেমন নয়। আমরা মনে করি, সড়ক নিরাপদ সরকারের স্বার্থেই করা দরকার ছিল। সেটি সরকার এখনো করতে পারল না। তাই আমরা চাই, অনুমোদিত সড়ক পরিবহন আইনটির যথাযথ প্রয়োগ করা হবে।