ঢাকা, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১

‘দাবায় রাখতে পারবা না’

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০২২, ১০:৪৯ রাত  

ছবি: সংগৃহীত

পদ্মাসেতুর আগল খুলে দেওয়া হলো। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে এই পদ্মাসেতু যান চলাচলের জন্য শনিবার (২৫ জুন) উন্মুক্ত করে দিলেন। অবসান হলো প্রতিক্ষার দীর্ঘ প্রহরের। দৃঢ়মনোবল নিয়ে গড়ে তোলা হয় এই সেতু। বিশ্ব আজ বঙ্গবন্ধুকন্যার দৃঢ়মনোবলের জয়কে অভিনন্দনে ভরে তুলেছে।

বাঙালি জাতি ফের আর এক মহাবিজয়কে দু-চোখ ভরে দেখতে পেল। এ বিজয় এমন এক বিজয় রাজধানীর ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সংযোগ গড়ে তুললো পদ্মাসেতু। ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার পথের দূরত্ব বহুলাংশে কমিয়ে আনলো। পথের বিড়ম্বনা তা দূর করে তুললো।

আমরা আগেই বলেছি, পদ্মাসেতু হলো গণতন্ত্রের মানসকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসের প্রতীক। এই সাহসকে ভেঙে চুরমার করার জন্য দেশে-বিদেশে ষড়ন্ত্রকারীর অনেক চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু তারা পারেনি। তারা বিছানো কণ্টকিতপথ মারিয়েই জাতির পিতার সুযোগ্যকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মাসেতু নির্মাণ করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিলেন। তিনি বাঙালি জাতিকে ভালোবাসেন। তাই বাঙালি জাতির জন্য যেকোনো কঠিন দুর্গম পথে হাঁটতে ভয় পান না। কণ্টকিত পথে হাঁটতে ভয় পান না। তিনি সাহসীকা। বাঙালি জাতির মুখ পরাজয়ে আনত হোক, তা তিনি মেন নিতে রাজি নন, তাই কঠিন প্রতিজ্ঞার মধ্যদিয়ে পদ্মাসেতু নির্মাণ করে দেখালেন। দেখালেন, শত বাধা-ষড়যন্ত্রের মধ্যেও বাঙালি জাতি তার কাঙ্ক্ষিত বিজয় ছিনিয়ে আনতে জানে। যেমন মহান স্বাধীনতার বিজয়কে ছিনিয়ে এনেছিলো।

পদ্মাসেতু উদ্বোধনের ঘটনায়, আজ প্রশ্ন জাগে, যারা এ সেতু নির্মাণের বিরোধী ছিলো। তারা আজ কোথায়, তারা কি বলবেন, তারা কি এ কথা বলবেন, পদ্মাসেতুর কোনো শক্র নেই, ষড়যন্ত্রকারী নেই। তাদের এ কথা বলার মধ্যদিয়ে এ সত্যই বের হয়ে আসে তারা বিরোধীতা করেছিলো। কঠিন বিরোধীতা করেছিলো। সেই বিরোধীতার দিনগুলো দেশের মানুষের মনে আছে। তাদের বিরোধীতার ধরন কেমন ছিলো বাঙালি জাতি মোটেই ভুলে যায়নি। তাদের মনে ভাস্বর হয়ে আছে। দেশের শক্র-মিত্র কারা তা ফের পরিষ্কার হয়ে উঠেছে পদ্মাসেতু নির্মাণের বিরোধী অবস্থান নেওয়ার মধ্যদিযে। সেই বিরোধীতাকারী ব্যক্তিরা আজ কোথায় মুখ লুকাবেন। ফের তারা কোন কথা নিয়ে হাজির হবেন, তারা কি মনে করেন না, পদ্মাসেতু নির্মাণ নিয়ে তাদের কথাগুলো মনে গেঁথে আছে?

দেশের মানুষকে ভালোবাসেন বলেই বঙ্গবন্ধুকন্যা পদ্মাসেতু নির্মাণে উদ্যোগী হয়েছিলেন। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়নবঞ্চিত। এবার তার অবসান হতে চললো। পদ্মাসেতু চালুর কারণে ঢাকা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দ্রুত আসা-যাওয়া করা যাবে। উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাবে। গড়ে উঠবে শত শত শিল্পকারখানা।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর ও মোংলা সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সারাসরি যোগাযোগে পদ্মাসেতুই মূল ভূমিকা রাখবে। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ঢাকা থেকে ২৭০ মাইল দূরে। অন্যদিকে পদ্মাসেতুর কারণে পায়রা ও মোংলার দূর এর অর্ধেকে নেমে এসেছে। খুব বেশি সময় নেবে না দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়ন চালচিত্র দেখার।

অর্থনীতিবিদরা এরইমধ্যে বলেছেন, পদ্মাসেতু চালু হলে জিডিপির ২ শতাংশ বেড়ে যাবে। এটা কম বড় কোনো কথা নয়। পদ্মাসেতুকে ঘিরে অর্থনৈতিক করিডোর গড়ে তোলার যে দাবি জানানো হচ্ছে, সরকার যদি সেটি করে উঠতে পারে, তাহলে বিশাল অর্থনৈতিক দিগন্ত খুলে যাবে।

পদ্মাসেতু উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষকে স্যালুট জানিয়ে বলেছেন, স্বাধীনতার পর এক বিদেশি সাংবাদিক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, বাংলাদেশের কোনও সম্পদ নেই, ‘আপনি কীভাবে দেশ গড়ে তুলবেন?’ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমার মাটি আছে, মানুষ আছে, তাই দিয়ে দেশ গড়বো। বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থবির হয়ে যায়নি। বাংলাদেশের অর্থনীতি করোনা মোকাবিলা করেছে।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ মোকাবিলা করেও গতিশীল আছে। বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে, বাংলাদেশ জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ। জনগণ সাহসের ঠিকানা। বাংলাদেশের জনগণকে আমি স্যালুট জানাই। অনেকে বলেছিলো, পদ্মাসেতু সম্ভব না। বিরোধিতা করেছিলো, ষড়যন্ত্র করেছিলো। আমি মনে করি, তাদের চিন্তার ও আত্মবিশ্বাসের দৈন্যতা আছে। তবে আজকের পরে তাদেরও আত্মবিশ্বাস বাড়বে বলে বিশ্বাস করি না, বাংলাদেশ পারে।

রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধুকন্যা বাংলাদেশের উন্নতি-সমৃদ্ধি অর্জনে কোনো বাধাকে পাত্তা দেননি। কোনো চোখ রাঙানিকে ভয় পাননি। কারণ তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্যকন্যা। দেশের মানুষের জন্য তার প্রাণ কাঁদে। দেশের মানুষকে কতটা উন্নতির সোপানে পৌঁছে দেওয়া যায়, সেই ভাবনাই তিনি ভাবেন আর কাজ করেন।

দৈনিক সরোবর/এমকে