ঢাকা, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১

পদ্মা পাড়ে অহংকারের জাদুঘর

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০২২, ১০:৫২ দুপুর  

বাঙালির স্বপ্নের পদ্মাসেতু- ছবি: সংগৃহীত

স্বপ্নের পদ্মাসেতু আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন হবে। পরের দিন ২৬ জুন থেকে যান চলাচল শুরু হবে। এরই মধ্যে এ সেতু খুলে দেওয়া নিয়ে দুই পাড়ের মানুষের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন ধরেই পদ্মাসেতু দেখার জন্য বহু ভ্রমণপিপাসুরা ভিড় করছেন।

দেশের মধ্যে স্বপ্নের পদ্মাসেতু সবচেয়ে নান্দনিক ও বড়। বিশ্বের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এ সেতু নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনেক সংগ্রাম লড়াই চালিয়ে যেতে হয়েছে। কোনো কিছুর কাছেই তিনি নত হননি। এ সেতু নির্মাণ নিয়ে যত ধরনের ষড়যন্ত্র ও বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে, সেতু নির্মাণে এমন ঘটনার দ্বিতীয় নজির আছে বলে আমাদের জানা নেই। ফলে দেশের মানুষের কাছে এ সেতুর মূল্য অনেক।

সরকার প্রধান পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত যন্ত্র-যন্ত্রাংশ দিয়ে মাদারীপুরের ভাঙা অংশে একটি জাদুঘর নির্মাণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা মনে করি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ নিদেশ দিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছেন। মঙ্গলবার (১৪ জুন) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন বলে বৈঠক শেষে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে শামসুল আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদ্মাসেতু নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শ্রমিক থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারী; তাদের সঙ্গে ছবি তুলবেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া সচিব-মন্ত্রীদের সঙ্গেও ছবি তুলবেন প্রধানমন্ত্রী। প্রয়োজনে গ্রুপে-গ্রুপে ভাগ হয়ে ছবি তুলবেন। শুধু ছবি তোলা নয়, সেই সঙ্গে একটা মিউজিয়ামও হবে; সেই মিউজিয়ামে ছবিগুলো রাখা হবে।

তিনি বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বড় বড় সেতুর পাশে মিউজিয়াম থাকে। পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত যন্ত্র-যন্ত্রাংশও ওই মিউজিয়ামে থাকবে। মাদারীপুরের ভাঙা অংশে এটি নির্মাণ করা হবে।

আগামী প্রজন্ম যখন পদ্মাসেতু জাদুঘরে আসবেন এবং তারা ঘুরে ঘুরে জাদুঘরের প্রত্যেকটি জিনিস দেখবেন, অনুভব করতে পারবেন, এই সেতু নির্মাণ সম্পর্কে। স্বপ্নের পদ্মাসেতু নির্মাণ করায় রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যে মেলবন্ধন রচিত হলো, তা বড়ই প্রয়োজন ছিলো। ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ায় গোটা দেশের ওপর এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আরো গতিশীল করে তুলবে অর্থনীতি। পদ্মাসেতু হওয়ার ফলে পদ্মার ওই পাড়ে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠার যে সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হয়েছে, ব্যবসায়ীরা তা শতভাগ কাজে লাগাবেন বলে আশা করা যায়। পদ্মার দু-পাড় ঘিরে হংকং এর মতো অত্যাধুনিক নগর গড়ে তোলার যে ঘোষণা বেশ আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছিলেন, সেই ঘোষণার প্রতিফলন ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠবে, অত্যাধুনিকভাবে শহর গড়ে তোলার মধ্যদিয়ে। 

পদ্মাসেতু উদ্বোধনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই মানুষের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য বাড়তে শুরু করেছে। এটাই স্বাভাবিক। আশা করা হচ্ছে, পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া দ্বিতীয় পদ্মাসেতু নির্মাণে সরকার ঝুঁকবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রকৃত উন্নতি ঘটাতে হলে এই সেতু নির্মাণ খুবই জরুরি। সর্ব মহলেই পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া দ্বিতীয় পদ্মাসেতু নির্মাণের দাবি রয়েছে। তবে এর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যে দাবিটি ঝুঁলছে সেটি হলো- পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া-ঢালারচর ত্রিমুখী সেতু নির্মাণের দাবি। এতে যে কাজটি হলো তা ত্রিমুখী সেতু হলে একই সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সংযোগ তৈরি হবে।

ঢালারচর হলো সেই স্থান, যেটি পদ্মা-যমুনার সঙ্গমস্থল। এ স্থানটি পাবনা জেলার অন্তর্গত বেড়া উপজেলায়। অবশ্য পদ্মা যুমনার তীরমুখে সরকার নতুন ফেরিঘাট নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। আরিচা ফেরিঘাট টু ঢালারচর ফেরিঘাট (পদ্মা-যমুনাতীরমুখ) নির্মিত হলে উত্তরবঙ্গে ১৬ জেলার জন্য যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুট হিসেবে গণ্য হবে। মনে রাখার বিষয় হলো, ২০ বছর পর আরিচা টু কাজীর হাট ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে।

উল্লেখ্য, নগরবাড়ী ঘাটকে সরিয়ে কাজীর হাটে আনা হয়েছে। কিন্তু আরিচা-টু ঢালারচর ফেরিঘাট চালু হলে দূরত্ব ও সময় ৪ ভাগের ১ ভাগে নেমে আসবে। সুতারং এ স্থানে যদি ত্রিমুখী সেতু করা হয়, তাহলে সরাসরি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের যে মেলবন্ধন তৈরি হবে, তা এক বিস্ময়কর হিসেবে ধরা হবে। পরিশেষে বলা যায়, প্রধানমন্ত্রী পদ্মাসেতুর পাশে জাদুঘর নির্মাণের যে নির্দেশ দিয়েছেন তা দ্রুত বাস্তবায়িত হোক এমনই প্রত্যাশা দেশবাসীর।

দৈনিক সরোবর/এমকে