বদলে যাবে পদ্মা পাড়ের চালচিত্র
প্রকাশিত: জুন ০৭, ২০২২, ১২:৩৮ রাত

ফাইল ফটো
স্বপ্নের পদ্মাসেতু এ মাসের ২৫ জুন যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এই সেতু খুলে দেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২৫ জুন সেতু উদ্বোধনের দিন প্রায় দশ লাখ মানুষের উপস্থিতির চেষ্টা করা হবে। দেশের সব জেলায় সেতু খুলে দেওয়া উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুর উদ্বোধন করবেন। আর মাত্র কয়েকদিন পর সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে, এ কারণে পদ্মার দুই পারের মানুষের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। সেতু দেখার জন্য প্রতিদিনই প্রায় ভ্রমণপিপাসুদের ভিড় জমছে পদ্মাসেতু এলাকায়। অনেক চড়াই উৎরাই পাড়ি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের পদ্মাসেতুর কাজ শেষ করে এনেছেন। সেতুর কাজ শুরু থেকেই নানা ষড়যন্ত্র করা হয়। কিন্তু কোনো বাধা ষড়যন্ত্র শেষ পর্যন্ত তল পায়নি। হেরে গেছে ষড়যন্ত্র ও বাধা সৃষ্টিকারীরা। আপন গৌরব ও মহিমা নিয়ে স্বপ্নের পদ্মাসেতু মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। এরই মধ্যে পদ্মাসেতুর ল্যাম্পপোস্টে বাতি জ্বালানো হয়েছে।
পদ্মাসেতু চালুর পর থেকে বৃহত্তরও বরিশালের মানুষ ঢাকা থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে বরিশালে নিজের বাড়িতে পৌঁছাতে পারবেন। আবার এই সময়ের মধ্যেই বরিশাল থেকে ঢাকায় আসতে পারবেন। এরই মধ্যে পদ্মাসেতুর যান চলাচলের ওপর টোল নির্ধারণ করা হয়েছে।
ঢাকা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শত শত যান নির্বিঘ্নে পদ্মাসেতু দিয়ে চলতে পারবেন। তার কারণেই নতুন নতুন বাস নির্মাণের হিড়িকও পড়ে গেছে। আরামদায়ক সব উন্নত বাস চলাচল করবে এ সেতু দিয়ে।
পদ্মাসেতু স্বপ্নের বলার কারণ কি? স্বপ্ন সহজে পূরণ হয় না। স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। পদ্মাসেতু বানাতে গিয়েও বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছে। সহজেই পদ্মাসেতু বানানোর স্বপ্নকে পূরণ করা যায়নি। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ২১ জেলার মানুষ এই সেতু দ্বারা উপকৃত হবেন। অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন এ এলাকার মানুষ। তাদের আর্থসামাজিক অবস্থা দ্রুত বদলে যাবে।
দেশের জিডিপি ২ শতাংশ বেড়ে যাবে। নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে পদ্মাসেতুকে ঘিরে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদ্মাসেতু নির্মাণ করে যেমন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ গোটা দেশকে আরো উন্নতি সোপানে নিয়ে যাওয়ার কাজটি করে দেখাচ্ছেন। তেমনই পদ্মা পাড়ে মাদারিপুরের শিবচর উপজেলায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। এই বিমানবন্দর নির্মাণ করা হলে দেশের অর্থনীতির চাকাকে আরো বেগবান করে তুলবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মার দুই পাড়কে ঘিরে হংকং নগরী নির্মাণের যে স্বপ্ন দেখেছেন, সেই স্বপ্ন তার পূরণ হবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
পদ্মাসেতু নির্মাণের মাধ্যমে বদলে দেবে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক চালচিত্র। বাড়বে বাণিজ্য ও রপ্তানির সম্ভাবনা। তৈরি হবে নতুন কর্মসংস্থান। সেতুর ওপর দিয়ে যাচ্ছে গ্যাসের পাইপলাইন। সেতু ঘিরে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এরই মধ্যে। এতে সেতু এলাকার মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে। এমন স্বপ্নই দেখছেন অবহেলিত এ জনপদের সাধারণ মানুষ। এক সময়ের অজপাড়া গাঁ ফরিদপুরের ভাঙা এখন জংশন।
ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে নদী পার হয়ে গাড়ির গতি গিয়ে থামবে এখন ভাঙায়। কারণ এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম ধাপ গিয়ে শেষ হয়েছে ভাঙায়। সেখান থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের তিনদিকে যাওয়া তিনটি সড়ক দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলাকে যুক্ত করেছে সেতুর সঙ্গে। ফলে শিল্পায়নের নজর এখন পুরো দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে হলেও শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও বরিশালকে কেন্দ্রবিন্দু মনে করছেন শিল্পপতিরা। এরই মধ্যেই সেতু ঘিরে আশপাশের জেলাগুলোতে শুরু হয়েছে শিল্পায়ন। দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলা, বিশেষ করে মাদারীপুর, ফরিদপুর, শরীয়তপুরের মানুষের মধ্যে এখন পরিবর্তনের উন্মাদনা কাজ করছে।
এসব এলাকায় জমির দাম যেমন বেড়েছে, তেমনই বাড়ছে স্থাপনা। এখন সেখানে এক বিঘা জমির দাম স্থানভেদে পঞ্চাশ লাখ থেকে এক কোটি টাকায় গড়িয়েছে। অনেকে শিল্প-প্রতিষ্ঠানের জন্য জমি কিনে রেখেছেন। এখানে গড়ে উঠছে তাঁতপল্লী। প্রধানমন্ত্রীর নামে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা মৌজায় ৫৯ দশমিক ৭৩ একর ও মাদারীপুর জেলার শিবচরের কুতুবপুর মৌজায় ৬০ একর করে ১১৯ দশমিক ৭৩ একর জমিতে নির্মাণ হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় তাঁতশিল্প ‘শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী’।
প্রকল্পের আওতায় ৮ হাজার ৬৪টি তাঁত শেড নির্মাণ করা হবে। যেখানে ৮ হাজার ৬৪ তাঁতীকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হবে। এই তাঁতপল্লীতে বার্ষিক উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৪ দশমিক ৩১ কোটি মিটার কাপড়ের। বৃহত্তরও বরিশাল ও খুলনাতেও শিল্পকারখানা হু হু করে গড়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে। ঢাকা থেকে পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত রেললাইন হচ্ছে।
পায়রার কারণে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের পালক আরো বেগমান করবেন। পায়রাকে ঘিরে যে অর্থনৈতিক উন্নতি দেখা দেবে তা এক কথায় বিস্ময়কর হবে। এসব কারণেই পদ্মাসেতুর দুই পারের মানুষের আনন্দের শেষ নেই। ফলে পদ্মাসেতু এক মহাকাব্যের নাম, আর এই মহাকাব্যের রচয়িতা জাতির পিতার সুযোগ্যকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বাংলাদেশকে আরো গৌরবোজ্জ্বল স্থানে পৌঁছে দিতে এই মহাকাব্য পদ্মাসেতু সৃষ্টি করেছেন।
দৈনিক সরোবর/এমকে