ঢাকা, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১

গলছে হিমালয়ের বরফ, ঝুঁকিতে এশিয়ার ২০০ কোটি মানুষ

সরোবর ডেস্ক

 প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২৩, ০৬:৫৪ বিকাল  

ছবি: ইন্টারনেট

হিমালয় পবর্তমালায় জমে থাকা বরফ অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত গলে যাচ্ছে। ফলে বন্যা, বিশুদ্ধ পানির সংকট, ভূমিধসের মতো নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের বড় ঝুঁকিতে পড়েছে বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের অন্তত ২০০ কোটি মানুষ। 

মঙ্গলবার এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই সতর্কবাণী দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্টের (আইসিআইএমওডি) ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগের দশকের তুলনায় ২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে হিমালয়ের হিমবাহগুলো ৬৫ শতাংশ দ্রুত গলে গেছে।

প্রতিবেদনের প্রধান লেখক ফিলিপাস ওয়েস্টার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বরফ গলতে থাকবে, এটি প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু অপ্রত্যাশিত এবং খুবই উদ্বেগজনক বিষয়টি হলো এর গতি। আমরা যা ভেবেছিলাম তার চেয়ে অনেক দ্রুত বরফ গলছে।

আইসিআইএমওডি মূলত নেপালভিত্তিক একটি আন্তঃসরকার সংস্থা। এর বাকি সদস্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, চীন, ভারত, মিয়ানমার ও পাকিস্তান।

প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানিয়েছে, হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চলের হিমবাহগুলো পার্বত্য অঞ্চলের প্রায় ২৪ কোটি এবং নিচের নদী উপত্যকার আরো ১৬৫ কোটি মানুষের জন্য পানির গুরুত্বপূর্ণ উৎস। কিন্তু নির্গমন গতিপথ বলছে, চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ বর্তমান আয়তনের ৮০ শতাংশই হারাতে পারে এসব হিমবাহ।

হিমালয়ের এই হিমবাহগুলো গঙ্গা, সিন্ধু, ইয়েলো, মেকং, ইরাবতিসহ বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ১২টি নদী ব্যবস্থায় পানি সরবরাহ করে এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোটি কোটি মানুষের জন্য খাদ্য, বিদ্যুৎ, বিশুদ্ধ বায়ু এবং রোজগারের ব্যবস্থা করে। হিমালয়ের বরফ গলে গেলে ১৬টি দেশের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া এসব নদীতে সুপেয় পানির সরবরাহ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আইসিআইএমওডির ডেপুটি চিফ ইজাবেলা কোজিয়েল বলেন, এশিয়ার ২০০ কোটি মানুষ এই হিমবাহগুলোতে থাকা পানির ওপর নির্ভরশীল। এই ক্রায়োস্ফিয়ার (হিমায়িত অঞ্চল) হারানোর পরিণতি হবে ধারণারও বাইরে।

কী বিপদ অপেক্ষা করছে
ইজাবেলা বলেন, হিমবাহগুলো সামান্য তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রতিও খুবই সংবেদনশীল। তুষার, হিমবাহ এবং পারমাফ্রস্ট (ভূগর্ভস্থ হিমায়িত অঞ্চল) গলে গেলে বিপর্যয়গুলো আরও নিয়মিত ঘটতে পারে এবং তা হবে আরও প্রাণঘাতী ও ব্যয়সাপেক্ষ।

আইসিআইএমওডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আকস্মিক বন্যা, ভূমিধস ছাড়াও এই অঞ্চল হিমবাহ হ্রদ বিস্ফোরণে (গ্লেসিয়াল লেক আউটবার্স্ট) সৃষ্ট বন্যার উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে। হিন্দুকুশ হিমালয়জুড়ে এ ধরনের ২০০টি হিমবাহ হ্রদকে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এছাড়া হিমালয়ের বরফ গলে যাওয়া এ অঞ্চলের কৃষি, খাদ্যনিরাপত্তা, বিশুদ্ধ পানির প্রাপ্যতা এবং বিদ্যুৎশক্তির উৎসগুলো হুমকিতে ফেলেছে। এমনকি এটি জীববৈচিত্র্যের হটস্পটগুলোতে বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতিকে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে পারে। সূত্র: এএফপি, ব্লুমবার্গ

দৈনিক সরোবর/আরএস