সৌদি আরবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে শীর্ষ বৈঠক বসছে
প্রকাশিত: মার্চ ০৭, ২০২৫, ০৮:৩৫ রাত

সৌদি আরবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সমাপ্তির লক্ষ্যে শান্তি চুক্তির কাঠামো নিয়ে আলোচনা করতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে শীর্ষ বৈঠক হতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে রিয়াদ বা জেদ্দায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউজে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্তপ্ত আলোচনার পর এই বৈঠক আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে উইটকফ বলেন, আমরা রিয়াদ বা জেদ্দায় ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছি। শান্তি চুক্তির কাঠামো এবং প্রাথমিক যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা হবে। তিনি জানান, বৈঠকের স্থান এখনও চূড়ান্ত হয়নি, তবে এটি সৌদি আরবেই হবে।
জেলেনস্কিও সৌদি আরবে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। তিনি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক ভাষণে বলেন, আমি সৌদি আরবে যাচ্ছি যুবরাজের সঙ্গে দেখা করতে। এরপর আমার দল সেখানে থেকে যাবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করবে। ইউক্রেন শান্তি চাইছে।
সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন বৈঠক আয়োজনের সম্ভাবনাকে স্বাগত জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, লোহিত সাগরের শহর জেদ্দায় এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। ইউক্রেন সংকটের স্থায়ী শান্তি অর্জনে সৌদি আরবের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউজে জেলেনস্কি ও ট্রাম্পের মধ্যে উত্তপ্ত আলোচনার পর এটিই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে প্রথম উচ্চপর্যায়ের বৈঠক। ওই বৈঠকের পর ট্রাম্প ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য বন্ধ করে দেন। তবে মঙ্গলবার তিনি জানান, জেলেনস্কির কাছ থেকে একটি চিঠি পেয়েছেন, যাতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট যত দ্রুত সম্ভব আলোচনায় বসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
ট্রাম্প বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, তার প্রশাসন ইউক্রেন ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্প্রতি ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ করেছে। তিনি বলেন, ইউক্রেন চুক্তি করতে চায়, কারণ তাদের আর কোনও বিকল্প নেই। রাশিয়াও চুক্তি করতে চায়, কারণ তাদেরও কোনও বিকল্প নেই।
ট্রাম্পের দূত উইটকফ জানান, জেলেনস্কি হোয়াইট হাউজে উত্তপ্ত আলোচনার জন্য সম্প্রতি ক্ষমা চেয়েছেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তবে সৌদি আরবে বৈঠকের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত খনিজ সম্পদ চুক্তি সই হবে কি না, তা নিয়ে তিনি সন্দিহান।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের সমর্থন পেতে এই চুক্তির প্রস্তাব করেছে। চুক্তিটি যুক্তরাষ্ট্রকে ইউক্রেনের বিরল মৃত্তিকা খনিজ সম্পদে প্রবেশাধিকার দেবে, যা মার্কিন মহাকাশ, বৈদ্যুতিক যান ও চিকিৎসা শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
এদিকে, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা অব্যাহত রয়েছে। ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়া ৬৭টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ১৯৪টি ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে ৩৪টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ১০০টি ড্রোন ইউক্রেন ধ্বংস করেছে। উত্তর-পূর্বের খারকিভ থেকে পশ্চিমের টারনোপিল পর্যন্ত বিভিন্ন অঞ্চলে শক্তি ও গ্যাস অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খারকিভে আটজন ও পোলতাভায় দুজন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একজন শিশুও রয়েছে।
জেলেনস্কি টেলিগ্রামে এক বার্তায় বলেন, প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ হবে এই যুদ্ধের একমাত্র উৎস রাশিয়াকে হামলা বন্ধ করতে বাধ্য করা। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা বন্ধের পর এটিই রাশিয়ার প্রথম বড় আকারের হামলা।
দৈনিক সেরোবর/ইএইচপি