ঢাকা, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১

ব্যবসা-বাণিজ্যে অস্থিরতা কাটাতে দ্রুত পদক্ষেপ দরকার 

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২৪, ০৩:৪১ দুপুর  

চলমান অস্থিরতা মধ্যে ডলার সংকট ও দাম বৃদ্ধি, উচ্চ সুদের হার এবং রপ্তানিতে নগদ সহায়তা কমানোর ফলে সম্প্রতি শিল্পে বিনিয়োগের আগ্রহ কমেছে অনেকের। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংকোচনমুখী নীতি, তারল্য সংকট ও খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণে ব্যাংকগুলোও অর্থায়ন কমিয়ে দিয়েছে। ফলে শিল্পে বাড়তে থাকা ঋণের প্রবাহে হঠাৎ ছন্দপতন হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ বিভিন্ন কারণে দীর্ঘ সময় স্থবিরতার পর টানা এক বছরের বেশি সময় ধরে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি কমছে। এতে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধিতে হঠাৎ করে ছন্দপতন ঘটছে। নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছুটা ভাটা পড়েছে। কারণ হিসেবে ঊর্ধ্বমুখী সুদহার, আমদানি কমা ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নতুন করে বিনিয়োগেও আগ্রহ হারাচ্ছে বেসরকারি খাত। ফলে ঋণ নিচ্ছে না বেসরকারি খাত গত ৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি। সেপ্টেম্বরে প্রবৃদ্ধি কমে ৯ দশমিক ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। গত আগস্টে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। 

বলা বাহুল্য, লোডশেডিং ও জ্বালানি সংকটের কারণে উৎপাদন ক্ষমতা কমেছে। তাই আমদানির ব্যয় টাকার অঙ্কে বেড়েছে। এতে বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে পণ্য আমদানির এলসি (ঋণপত্র) খোলা ও নিষ্পত্তি উভয়ই কমেছে। গত জুলাই-সেপ্টেম্বর তিন মাসে ১৫ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানির এলসি খোলা হয়েছে। তা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার কম। শতাংশের হিসাবে তা ৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ কম। গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর এলসি খোলা হয়েছিল ১৬ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলারের। দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি বোঝার অন্যতম একটি সূচক হলো মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি নিরূপণ। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলা কমেছে প্রায় ৪১ শতাংশ।

বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে এক রকমের অস্থিরতা দেখা গেছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। এমন পরিবেশে স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করবেন না। এ কারণে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমেছে। আন্দোলন ছাড়াও সুদহার বৃদ্ধি, গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়া এবং অনেক জায়গায় ঠিকমতো বিদ্যুৎ না পাওয়ার বিষয়ও বিনিয়োগে প্রভাব ফেলছে। এসব কারণে কয়েক মাস ধরেই ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে সময় নিচ্ছেন। তাছাড়া আমদানি কমে যাওয়ায় এর একটা প্রভাব পড়ছে। আবার রপ্তানি আশানুরূপ না বৃদ্ধিরও প্রভাব রয়েছে। এরপর বিভিন্ন কারণে মূল্যস্ফীতির পারদ চড়তে থাকলে তা কমিয়ে আনতে নীতি সুদহার রেপো বৃদ্ধি করা হয়। মুদ্রানীতিতে আরও সংকোচনমূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়। তাই আমাদের প্রত্যাশা, ব্যবসা-বাণিজ্যে অস্থিরতা কাটিয়ে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে কর্তৃপক্ষ। 

দৈনিক সরোবর/কেএমএএ