বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থদের পদ থেকে সরে যাওয়া উচিত
সম্পাদকের কলম
প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২৪, ১১:০৫ দুপুর

দেশে চালের উৎপাদন ভালো হওয়া সত্ত্বেও বাড়ছে চালের দাম। কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা নেই; এরপরও দাম বাড়ছে ডিমের। কারসাজির বাজারে এখন সবচেয়ে আলোচিত পণ্য ডিম। ফার্মের মুরগির ডিম এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা হালি। নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সবজিসহ বেশকিছু পণ্যের দাম রাতারাতি কমে আসে। কিন্তু তা ছিল খুবই স্বল্প সময়ের জন্য। কয়েকদিন পরই আগের চিত্রে ফিরে আসে বাজার। বন্যার অজুহাতে ডিমের মতো চালের দামও অত্যধিক হারে বেড়ে যায়, যা আর কমেনি। ৬২ থেকে ৬৪ টাকায় বিক্রি হওয়া সরু চাল এখন ৭২ থেকে ৭৪ টাকা। মধ্যবিত্তের চাল হিসেবে পরিচিত মাঝারি আটাশ চালের দাম ৬০ টাকা ছাড়িয়েছে এবং গরিবের মোটা চাল ৫৫ টাকায় গিয়ে উঠেছে। অন্তর্বর্তী এই সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বাজার নিয়ন্ত্রণে বেশ জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের ইঙ্গিত দেয়। তবে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের দাম তো কমেইনি; বরং বেড়েছে। বাজারে চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। শুধু হাত বদল হয়েছে। বছরের ব্যবধানে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমেছে। তবে বাজারে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। কম মূল্যস্ফীতির এই সময়ে মানুষ এখন বাজারে গিয়ে হাঁসফাঁস করছেন।
বলা বাহুল্য, নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির পেছনে সিন্ডিকেটের কারসাজির বিষয়টি অনেকটা ওপেন সিক্রেট। কারসাজি করে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে। এর নেপথ্যে আছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেট ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে দেশের মানুষের পকেট ফাঁকা করছে। অথচ কোনো প্রতিকার মিলছে না। এ বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। চাঁদাবাজি চলছে আর পণ্যের দামও অযৌক্তিকভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে সরবরাহকারীরা। বন্যার প্রভাবে ডিমের দাম যেভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে, তা সত্যিই অস্বাভাবিক। ভোক্তার পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। জীবনযাত্রার খরচ যেভাবে বেড়েছে, সেভাবে আয় বাড়েনি। ফলে সংসারের প্রয়োজন মেটাতে মানুষ ঋণগ্রস্ত হচ্ছে। বাজারে গিয়ে মানুষ ক্ষোভ ঝাড়ছেন সরকারের বিরুদ্ধে। চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও কেন প্রতিনিয়ত নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে, তা নিয়ে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে। শুধু ডিম কিংবা মুরগি নয়; চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, আলু থেকে শুরু করে বিভিন্ন পণ্যে গেঁড়ে বসে আছে পুরনো সিন্ডিকেট। অসাধু ব্যবসায়ী চক্রগুলো যে কোনো অজুহাতে পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দিতে মরিয়া। আর বাজারে জিম্মি হয়ে আছেন ভোক্তারা।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বাজারে কিছুই বদলাচ্ছে না। হয়তো হাত বদলাচ্ছে। হাতে গোনা কয়েকজনই খেলছেন। তাদের হাতেই বাজারের নিয়ন্ত্রণ। এটা হলে এমন পরিস্থিতিই সৃষ্টি হবে। নতুনরা যাতে প্রতিযোগিতা করতে পারে, এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে। বাজার ব্যবস্থাপনায় যেসব ত্রুটি রয়েছে, তা দূর করা প্রয়োজন। চাঁদাবাজি বন্ধের যে সুুযোগ তৈরি হয়েছিল, তা ধরে রাখতে না পারাটা বর্তমান সরকারের বড় ব্যর্থতা। তাই সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ার বিকল্প নেই। আমরা মনে করি, বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব যাদের; তারা ব্যর্থ হলে তাদের পদ থেকে সরে যাওয়া উচিত।
দৈনিক সরোবর/কেএমএএ