আমদানিকারকদের কঠোর নজদারিতে রাখা দরকার
প্রকাশিত: অক্টোবর ০৫, ২০২৪, ১১:৩২ দুপুর

গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় চালের দাম বাড়তে থাকে। সেই দর আর কমেনি। বর্তমানে খুচরায় মাঝারি মানের বিআর-২৮ ও পাইজাম জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬৪ টাকা কেজি দরে। মোটা চালের (গুটিস্বর্ণা ও চায়না ইরি) কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। আর চিকন চাল (মিনিকেট) বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে। দুই মাস আগে প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, মাঝারি ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা এবং চিকন চাল ৬৮ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়। সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাবে এক বছরে সব ধরনের চালের দর বেড়েছে গড়ে ৮ শতাংশ। এ পরিস্থিতিতে শুল্ককর কমানোর প্রস্তাবকে ইতিবাচক মনে করছেন মিল মালিক ও আমদানিকারকরা। তারা বলছেন, এতে আমদানি বাড়বে। বাজারে চালের দরও কমে আসবে। প্রস্তাবটি এনবিআরেও পর্যালোচনায় রয়েছে। চিকন, মাঝারি, মোটা সব ধরনের চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫-৬ টাকা। এমন পরিস্থিতিতে চাল আমদানিতে শুল্ক কমাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। গত ৩০ সেপ্টেম্বর দেওয়া ওই চিঠিতে বিদ্যমান শুল্ককর ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বলা বাহুল্য, দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা হয়েছে। কয়েকটি জেলায় বন্যা চলমান রয়েছে। বন্যা-পরবর্তী খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে উৎপাদন, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে চালের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই মাসের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দর গড়ে ৮ শতাংশ বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে চাল আমদানি করে দাম নিয়ন্ত্রণ ও বাজার স্থিতিশীল রাখতে চায় সরকার। সে জন্য চাল আমদানিতে শুল্ককর কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি দেশের ১৪ জেলায় ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। ফলে আউশ, রোপা আমন এবং আমন বীজতলার ক্ষতি হয়েছে। এতে আমন ওঠার পরও চালের দাম বেড়ে যেতে পারে। তাছাড়া গম রপ্তানিতে ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা কারণে খাদ্যশস্যের দাম বেড়েছে। দেশে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে মজুত বাড়ানো দরকার বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ জন্য বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির প্রয়োজন হতে পারে। এরই মধ্যে সরকারি পর্যায়ে ৫ লাখ টন চাল আমদানির জন্য প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর অনুমোদন দিয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববাজারে চালের দাম দেশের বাজারের চেয়ে বেশি। তাই বাজার স্থিতিশীল রাখতে চাল আমদানির বিদ্যমান শুল্ক (কাস্টমস ডিউটি ২৫ শতাংশ, রেগুলেটরি ডিউটি ২৫, অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স ৫, অ্যাডভান্স ট্যাক্স ৫, ইন্স্যুরেন্স ১, ল্যান্ডিং চার্জ ১ এবং ডিএফ ভ্যাট ০.৫) ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে শুধু রেগুলেটরি ডিউটি ৫ শতাংশ করার অনুরোধ করা হলো। অর্থাৎ রেগুলেটরি ডিউটি ৫ শতাংশ করে অন্য সব শুল্ক প্রত্যাহরের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না সম্প্রতি বন্যায় ধানের ফলন ব্যাহত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শুল্ককর কমানোর উদ্যোগটি অবশ্যই উত্তম সিদ্ধান্ত। শুল্ক কর কমানোর কারণে আমদানিকারকরা চাল আমদানিতে উৎসাহী হবেন। ফলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে শুল্ককর কমানোর পরও অনুমতি নিয়ে অনেকেই শেষ পর্যন্ত চাল আমদানি করে না এমন অভিযোগ রয়েছে। সাধরণত যখন বিশ্ববাজারে বিশেষ করে ভারতে চালের দর বেড়ে যায় তখন আমদানি করতে চান না ব্যবসায়ীরা। কারণ বেশি দরে আমদানি করলে তা দেশের বাজারে বিক্রি করা কঠিন হবে। উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে খাদ্যনিরাপত্তা অর্জন করা ও পুষ্টিসমৃদ্ধ নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে কাজ করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। বন্যা-পরবর্তী খুব স্বল্প সময়ের ব্যবধানে উৎপাদন, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে চালের দর বেড়েছে। মূল্য নিয়ন্ত্রণে খাদ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য অধিদপ্তর, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে বাজার তদারকি জোরদার করা হয়েছে। সুষ্ঠু বাজার মনিটরিং ও অবৈধ মজুতের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবুও খাদ্যশস্যের দামে ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। আমাদের প্রত্যাশা, আমদানি শুল্ক কমানোর পর বাজারে যাতে চালের দাম কমে, এ জন্য কঠোর নজদারিতে থাকবেন সংশ্লিষ্টরা।
দৈনিক সরোবর/কেএমএএ