পদ্মাসেতু: সাতক্ষীরার আর্থসামাজিক উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে
প্রকাশিত: জুন ২২, ২০২২, ১২:৪৫ দুপুর

ফাইল ফটো
সুন্দরবনের কোল ঘেষে গড়ে ওঠা কৃষিতে সমৃদ্ধ জেলা সাতক্ষীরা। জেলায় উৎপাদিত পণ্য অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ও বিদেশে রপ্তানি করে দেশের অর্থনীতিতে রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এছাড়াও দেশের দ্বিতীয় চিংড়ি উৎপাদনকারী জেলা হিসাবে খ্যাতি লাভ করেছে এই সাতক্ষীরা।
এছাড়াও ভারত থেকে রাজধানী ঢাকাসহ অন্য জেলায় পণ্য পরিবহনে সাতক্ষীরার ভোমড়াস্থল বন্দর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের পদ্মাসেতু। আর এই সেতু চালুর মধ্য দিয়ে সাতক্ষীরা জেলার আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা।
পদ্মাসেতু এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়নের কারণে সাতক্ষীরার ব্যবসায়-বানিজ্য সম্প্রসারণ হবে। ভোমরা স্থলাবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধির ফলে সরকারের রাজস্ব আদায় ১০ গুণ বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন এখানকার ব্যবসায়ীরা।
ভোমরা শুল্ক স্টেশনের দায়িত্বরত কাস্টমসের বিভাগীয় সহকারী কমিশনার আমীর মামুন বলেন, চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরে (জুন-জুলাই) এনবিআর ভোমরা বন্দরে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয় ৯৮৫ কোটি ৪ লাখ টাকা। গত ১১ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬৯২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। ভোমরা স্থলবন্দরের কাস্টমস হাউজ নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। পদ্মাসেতু চালু হলে তখন সব পণ্য আমদানি-রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফলে রাজস্ব আদায়ও হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
ভোমরা ব্যবসায়ী সংগঠন সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজু ও সাধারণ সম্পাদক এ এস এম মাকছুদ খান জানান, পদ্মাসেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা অভূতপূর্ব উন্নয়নের ফলে এই অঞ্চলের ব্যবসায়-বাণিজ্য সম্প্রসারণসহ ভোমরা স্থলাবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে কয়েক গুণ বলে মনে করেছেন ব্যবসায়িরা।
তারা আরো জানান, ভোমরা থেকে ভারতের কলকাতার দূরত্ব কম হওয়ায় পদ্মাসেতু চালু হলে এই স্থলবন্দরে আমদানি রপ্তানির গতি আরো বৃদ্ধি পাবে।
সাতক্ষীরা চিংড়ী ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডা.আবুল কালাম বাবলা বলেন, পদ্মাসেতু দেশের হোয়াইট গোল্ড খ্যাত সাতক্ষীরার চিংড়ি শিল্পের রপ্তানিতে যোগ করবে নতুন মাত্রা। চিংড়ির গুনগত মান ঠিক রেখে বাজার সম্প্রসারণ করতে এই পদ্মাসেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন এই পেশায় জড়িতরা।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অফিসার মোহাম্মদ আনিছুর রহমান বলেন, এই জেলা থেকে গত অর্থ বছরে বাগদা চিংড়ি ও গলদা চিংড়ি বিদেশে রপ্তানি হয় হাজার কোটি টাকার উপরে। এছাড়া বাগদা ও গলদা চিংড়ি এবং সাদা মাছ মিলিয়ে ৩৫০ কোটি টাকার মাছ দেশে বিভিন্ন প্রান্তে গেছে।
তিনি আরো বলেন, পদ্মাসেতু মাইলফলক হয়েছে। মৎস্য চাষি ও ব্যবসায়ীরা খুবই উৎসায়ী হয়ে আছে। এখন মাছের গাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা মাওয়া ফেরি ঘাটে আর আটকে থাকবে না। আগে এই ফেরিঘাটে গাড়ি আটকে থাকায় মাছের কোয়ালিটি নষ্ট হয়ে যেত। কিন্তু এখন অল্প সময়ে পদ্মাসেতু পার হয়ে দ্রুত সময়ে মাছ পৌঁছে যাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এছাড়া রপ্তানিকৃত মাছ বিমানবন্দরে নিতেও সুবিধা হবে। ফলে বেড়ে যাবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনাও।
এদিকে পর্যটন খাতেও দুয়ার খুলে যাবে সাতক্ষীরার। সুন্দরবন জেলা শহরের নিকটবর্তী হওয়ায় খুব সহজেই পর্যটকরা আসতে পারবেন। এছাড়া পদ্মাসেতুর কারণে ঢাকা থেকে সহজেই পর্যকরা সাতক্ষীরায় এসে সুন্দরবন দেখে আবার ফিরেও যেতে পারবেন।
সাতক্ষীরা রেঞ্জ কর্মকর্তা এম এ হাসান বলেন, সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে অনেক অবকাঠামো গড়ে উঠবে। পদ্মাসেতু চালু হলে ঢাকা থেকে সকালে সড়ক পথে পর্যটকরা এসে সুন্দরবনের সৌন্দয্য উপভোগ করতে পারবেন। এতে তাদের যেমন খরচ কমবে তেমন রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও বাড়বে।
সাতক্ষীরা চেম্বর অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু বলেন, সুন্দরবনকে ঘিরে পর্যাটনসহ শিল্প সমৃদ্ধ সাতক্ষীরা অর্থনীতিকে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখর করে নিয়েছে। পদ্মাসেতু জেলার আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. নজরুল ইসলাম বলেন, পদ্মাসেতু দক্ষিণের এই জেলার সঙ্গে ঢাকার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে কৃষি ও পর্যটন শিল্প বিকশিত হবে। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব কমবে।
সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে সামাজিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, এরই মধ্যে সাতক্ষীরায় একটি অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা হতে যাচ্ছে। পদ্মাসেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হবে।
দৈনিক সরোবর/এমকে