ঈদের কেনাকাটা: বোনাসের অপেক্ষা চাকরিজীবীদের
প্রকাশিত: মার্চ ১৪, ২০২৫, ০৫:১৫ বিকাল

বেসরকারি চাকরিজীবীরা এবার বেতন-বোনাসের হিসাব কষে ঈদের কেনাকাটা করতে হিমশিম খাচ্ছেন। মাসের শুরুতে যে বেতনের টাকা তারা পেয়েছেন, তা দিয়ে বাসাভাড়া পরিশোধ ও রোজার বাজার করেছেন। এখন ঈদের কেনাকাটার জন্য বোনাসের অপেক্ষায় তারা।
ঈদুল ফিতরের প্রায় আড়াই সপ্তাহ বাকি। রাজধানীর মার্কেটগুলোতে এ সময়টাতে পুরোদমে কেনাকাটা জমে ওঠে। এবার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন।
মার্কেটে আসা ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে চাকরিজীবীদের এমন পরিস্থিতিতে পড়ার তথ্য পাওয়া গেছে। বিক্রেতারাও অনেক ক্রেতার কাছ থেকে একই কথা জানতে পেরেছেন বলেও জানিয়েছেন। ফলে ক্রেতারা বোনাস পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। আর বিক্রেতারা এখন অপেক্ষায় কখন বোনাস হাতে পেয়ে মার্কেটে আসবেন ক্রেতারা।
রাজধানীর বাড্ডার সুবাস্তু নজর ভ্যালি শপিংমলে কেনাকাটা করতে আসেন নাজমা খাতুন। তার সঙ্গে চার বছরের মেয়ে তুলি। ঈদের কেনাকাটা কেমন হয়েছে, শেষ নাকি শুরু এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, শুধু মেয়ের জন্য একটা ড্রেস সেট কিনেছি। ওর (তুলি) বাবা একটা কোম্পানিতে চাকরি করে। বোনাস পাবে হয়তো রবি-সোমবার, তারপর নিজেদের জন্য কেনাকাটা করবো।
নাজমা খাতুন যখন বোনাসের অপেক্ষায় কেনাকাটা ঝুলে থাকার কথা বলছিলেন, তখন পাশে দাঁড়ানো কাপড়ের দোকানি সানোয়ার হোসেন বলে ওঠেন, এটাই তো সবাই বলছে। বোনাস পেলে কিনবে।
বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে আরিফ হোসেন বলেন, কাস্টমার আইত্যাছে, দেইখ্যা চইল্যা যাইতেছে। বলত্যাছে, পছন্দ হইছে। কিন্তু হাতে ট্যাহা নাই। বোনাস পাবে, তারপর কিনে লইয়া যাইবো। এরা সব বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি করে। সরকারি চাকরিজীবীরা আগেভাগেই কিইন্যা লইত্যাছে।
ক্রেতা নাজমা ও আরিফ হোসেনের কথার সূত্র ধরে বেশ কয়েকজন বেসরকারি চাকরিজীবীর সঙ্গে কথা বল জানা গেছে, মার্চের প্রথম সপ্তাহে তারা ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পেয়েছেন। সেই টাকা দিয়ে বাসাভাড়া পরিশোধ করেছেন। পাশাপাশি রোজার বাজার-সদাই করতে হয়েছে। সবমিলিয়ে তাদের হাত এখন শূন্য।
যেসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তারা চাকরি করেন, সেখানে ১৫ রমজান বা তারও পরে ঈদের বোনাস দেওয়া হয়। সেই হিসাবে আগামী সপ্তাহের শুরুতে তারা বোনাসের টাকা পেতে পারেন। এরপর পরিবারের জন্য ঈদের কেনাকাটা করবেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সবশেষ জরিপের তথ্যানুযায়ী—রাজধানী ঢাকায় প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষের বসবাস। এর মধ্যে প্রায় দেড় কোটি মানুষ চাকরিজীবী বা কর্মমুখী নানা ধরনের কাজে জড়িত। তারা মাসিকভিত্তিতে বেতন বা মজুরি পেয়ে থাকেন। তাদের মধ্যে আবার অর্ধেকের বেশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকরি করে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবনধারণ করে থাকেন।
দেশের নামি একটি ফার্মাসিটিউক্যালের সেলস রিপ্রেজেনটিভ (বিক্রয় প্রতিনিধি) পদে চাকরি করেন ইমতিয়াজ হাসান।
তিনি বলেন, গত মাসের (ফেব্রুয়ারি) বেতনটা এবার আগেভাগে পেয়েছি। সেটা তো খরচ হয়ে গেছে। ঈদের কেনাকাটা করতে হলে বোনাস পেতে হবে। বোনাস কবে দেবে সেটা এখনো জানি না। আবার শুনছি চলতি মার্চ মাসের বেতনটাও ঈদের আগে দেবে। সেজন্য নিজের ও পরিবারের জন্য ঠিক কত টাকা বাজেট করে ঈদের কেনাকাটা করবো, তা বুঝে উঠতে পারছি না। তবে বোনাস না পেলে কেনাকাটা শুরু করাই সম্ভব নয়।’
এদিকে, বাড্ডা এলাকার আরো দুটি মার্কেটে ঘুরে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেও একই রকম তথ্য পাওয়া গেছে। কেনাকাটা করতে আসা অধিকাংশের বাবা-মা, স্বামী-স্ত্রী অথবা ভাই-বোন বেসরকারি চাকরিজীবী। তাদের বোনাস পাওয়ার ওপর নির্ভর করছে তাদের ঈদের কেনাকাটা।
সুবাস্তু নজর ভ্যালি শপিংমল পরিচালনা কমিটির কো-অর্ডিনেটর মো. হারুণ বলেন, কোম্পানিতে চাকরি করা পরিবারের সদস্যরা মার্কেটে কম এখন। সরকারি চাকরি করে অথবা ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে, তারা এখন কেনাকাটা করছে। বেসরকারি চাকরিজীবীরা হয়তো আগামী সপ্তাহের শেষ দিকে মার্কেটে ঢুকবে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে রাজধানীর গুলশানে প্রধান কার্যালয়—এমন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। নিজের ও প্রতিষ্ঠানের নাম-পরিচয় প্রকাশ না করে বলেন, এবার এক মাসে তিনটি বিল দিতে হচ্ছে। ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন দিয়েছি ৬ মার্চ। এক সপ্তাহ না যেতেই বোনাস ছাড় করার কাজ চলছে। হয়তো ১৬-১৯ তারিখের মধ্যে আমরা বোনাস দেবো। আবার কোম্পানি সিদ্ধান্ত নিয়েছে চলতি মার্চ মাসের বেতনও কর্মীদের পরিশোধ করে দেবে। ২৫ অথবা ২৭ মার্চ আমরা বেতন দেবো।
তিনি বলেন, সবমিলিয়ে এক মাসে তিনটা বেতন-বোনাস দিতে গিয়ে কোম্পানিও হিমশিম খাচ্ছে। ফলে বোনাস দিতে দেরি হচ্ছে।
দৈনিক সরোবর/এএস