এক বছর অকেজো ১০০ কোচ
কেনায় দুর্নীতিকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করুন
প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২৪, ০৮:৩১ রাত
রেল হলো সবচেয়ে আরামদায়ক ও নিরাপদ পরিবহন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রেলকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়। প্রথম ধাপেই রেল মন্ত্রণালয় গঠন করে। এতে রেলের উন্নতি ত্বরান্বিত হয়। বিএনপির আমলে অনেক রেললাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষসতায় এসে সেগুলো চালুসহ নতুন নতুন রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। বিশেষভাবে বলা যায়, পদ্মা সেতুতে রেলপথ নির্মাণ ও কক্সবাজার রেলপথ। দুই রেলপথই চালু হয়েছে। এতে রেলের বিস্তৃতি বেড়েছে। বেনাপোল, খুলনা ও রাজশাহী থেকে ট্রেন পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় আসার সুযোগ তৈরি করেছে। উন্নত দেশে রেলের ক্রমেই উন্নতি চোখে পড়ার মতো। পাশের দেশ ভারত এতে অনেক এগিয়ে আছে। তবে ভারত বা উন্নত দেশের তুলনায় আমাদের দেশে রেলে উন্নতি কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি। সেটি হয়তো সম্ভব হবে সামনের দিনগুলোয়। তবে রেলের দুর্নীতি সব সময় আলোচনায় ছিল। রেলের দুর্নীতি রেলকে কাক্সিক্ষত স্থানে নিয়ে যেতে দেয়নি।
বর্তমান সরকারের সময়ে রেল যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিছুটা সুযোগ-সুবিধা পাওয়ায় মানুষ ট্রেনে চেপে বসতে উৎসাহী হচ্ছে। কিন্তু ঘুরেফিরে আসে রেলের দুর্নীতি। এই দুর্নীতি রেলকে টেনে পেছনে নিয়ে যেতে চায়। নতুন রেলমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুর হাকিম রেলকে কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নিতে সক্ষম হবেন বলে আশা করা যায়। তবে রেলের আভ্যন্তরীণ দুর্নীতি দমনে তিনি কতটা পারবেন, তা বলা মুশকিল। কারণ চীন থেকে কেনা ১০০ কোচ প্রায় এক বছর ধরে হতে চলেছে অকোজে। সরকারি অর্থের অপচয় হতে চলেছে বোঝা যাচ্ছে। রেলের কর্তাব্যক্তিরা সরকারি টাকার সঠিক ব্যবহারে যত্নবান নন, তা এ ঘটনায় অনুমান করা যায়। চীনের কোম্পানি সিআরআরসি থাংশান থেকে কেনা এসব কোচ ট্রেনে যুক্ত করার পর পরই ১২ থেকে ১৫ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। অথচ এসব কোচ আনা হয়েছে মাত্র কয়েক মাস আগেই। ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-খুলনা, বেনাপোল-খুলনা ও ঢাকা-চিলাহাটি রুটে চলাচল করা এসব কোচ ট্রেনে যুক্ত করার মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই চাকা ক্ষয়ে যাচ্ছে কিংবা বাঁকা হয়ে যাচ্ছে। ফলে যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে রেলওয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সিআরআরসির প্রতিনিধিদের দফায় দফায় মিটিং হলেও সমস্যার সমাধান মিলছে না। দিন দিন কোচের সমস্যা আরও বাড়ছে। ব্রডগেজে চলা এসব কোচের প্রতিটির দাম প্রায় ৭ কোটি টাকা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চীনের নতুন কোচগুলোয় ১২ থেকে ১৫ ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। সমস্যাগুলো হলো চাকা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ক্ষয় হচ্ছে; হুইল স্কিডেড হয়ে যাচ্ছে। ফলে যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে; ২. চলন্ত অবস্থায় ব্রেক প্যাড পড়ে যাচ্ছে; রানিংয়ে এক্সেল কয়েল স্প্রিং ভেঙে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে নতুন কোচের স্প্রিং দুই থেকে তিন বছর পরে ভাঙে; প্রাইমারি ডাম্পার অকার্যকর হয়ে পড়ছে। অস্বাভাবিকভাবে অয়েল লিকেজ হচ্ছে; এন্টিফেটিক বোল্ট খুলে পড়ে যাচ্ছে; ফোর বোল্ট, হুইলসেট গাইড লুজ বা ড্রপিং হচ্ছে; কোচের রুফ সিলিং খুলে যাচ্ছে এবং দরজা বরাবর উপরের রুফ সিলিং নিচে নেমে যাচ্ছে; ডব্লিউজেসি টাইপ কোচের কেবিনের দরজার লক ঠিকমতো কাজ করছে না; টয়লেটের ফ্ল্যাশ কাজ করছে না; পানির ট্যাংক ভরা থাকলেও হ্যান্ড শাওয়ারে ও পানির কলে পানির প্রেশার নেই; প্রতিনিয়ত জানালার স্যুট বোল্ট খুলে যায়; বায়ো টয়লেটের ডেলিভারি লাইন দিয়ে যে সর্বদা মল ও নোংরা পানি পড়ে, সেখানে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে; ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা অকার্যকর হয়ে পড়েছে; দ্রুত পাওয়ার কার গরম হয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো ইঞ্জিন থেকে কালো ধোঁয়া বের হয়ে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়।
আমরা বলতে চাই, ১০০ কোচের এমন দশার পেছনে দুর্নীতিই মূলত দায়ী। উন্নতমানের কোচ না কিনে নিম্নমানের কোচ কেনায় কেন রেলের কর্তাব্যক্তিরা উৎসাহী হলেন। চীন থেকে এর আগে কোচ কেনা হয়েছে, ইঞ্জিন কেনা হয়েছে। তা এখন ভাগাড়ে স্থান পাচ্ছে। চীন থেকে কোচ, ইঞ্জিন কেনায় কেন এত উৎসাহ রেলের, তা আমরা বুঝে উঠতে পারছি না। রেলমন্ত্রী এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে রেলের সঙ্গে যুক্ত হওয়া ১০০ কোচ কেনায় কতটা দুর্নীতি অনিয়ম হয়েছে, তা বের করে দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করবেন, এটিই আমাদের প্রত্যাশা।