ঢাকা, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১

স্বাস্থ্যসেবা থেকে মানুষ বঞ্চিত

দেশে বিদেশি রোগী আনার উচ্চাশা 

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: জানুয়ারী ১৮, ২০২৪, ০৮:০৭ রাত  

দেশের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভ-অসন্তোষ দীর্ঘদিনের। তবে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি ঘটানোর ক্ষেত্রে সবাইকে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে এসেছেন। দেশের মানুষের টাকায় চিকিৎসকদের বেতন হয়, এ কথাটা তিনি চিকিৎসকদের বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন এবং তারা যেন আন্তরিকভাবে রোগী দেখেন। তার এ কথা চিকিৎসকরা কতটা হৃদয়ে ধারণ করেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। তবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির নানা ঘটনা, কাঙ্ক্ষিক্ষত স্বাস্থ্যসেবা থেকে মানুষ বঞ্চিত এটি জোর দিয়ে বলা যায়। এ থেকে উত্তরণে নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন কাজ করবেন বলে আশা করা যায়। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করার ব্যাপারে নিজের প্রচণ্ড আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেছেন। তিনি দেশের একজন প্রতিথযশা চিকিৎসকই শুধু নন, মানবদরদি একজন চিকিৎসক হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন। তার সততা নিয়ে কারোর কোনো প্রশ্ন নেই। তিনি শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট গড়ে তোলায় যে শ্রম ও আন্তরিকতা দেখিয়েছেন, তা বিরল। দেশের মানুষ তার মতো একজন মানবদরদি চিকিৎসককেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে সবাই প্রত্যাশা করেছিল। 

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশের স্বাস্থ্যসেবা বদলে দিতে কাজ করে আসছেন। প্রথমবার ক্ষমতায় এসে তিনি স্বাস্থ্যসেবাকে মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তোলেন। কয়েক হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেন। অথচ দেশের সরকারি হাসাপাতালগুলোর স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে হাজারো প্রশ্ন এখনো বিদ্যমান। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসাপাতালের স্বাস্থ্যসেবার মানের উন্নতি ঘটেনি। চিকিৎসকরা রোগী দেখার ব্যাপারে আন্তরিক নন। প্রায় সময়েই হাসাপাতালে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতিতে রোগীরা ভোগান্তিতে পড়েন এবং সুচিকিৎসাবঞ্চিত হন। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার মান কীভাবে উন্নতি করা যায়, তা নিয়ে নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভাববেন বলে আশা করা যায়। খোদ রাজধানী ঢাকার বড় বড় সরকারি হাসাপাতালের স্বাস্থ্যসেবার নিয়েও রয়েছে অনেক প্রশ্ন। রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসকদের আচরণটি ঠিক চিকিৎসকসুলভ না হওয়ায় রোগীরা আহত ও পীড়িত হন। এদিকটি নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অজানা নয় বলে আমরা মনে করি। 

প্রান্তিক মানুষ যাতে উন্নত চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা পায়, তা নিশ্চিত করার জন্য বদ্ধপরিকর সরকারপ্রধান। সম্প্রতি এ নিয়ে ডা. সামন্ত লাল সেন তার বক্তব্যেও উঠে এসেছে। আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, যথাযথ সুযোগ-সুবিধা পেলে বাংলাদেশের চিকিৎসা বিশ্বে অনেক সুনাম অর্জন করবে বলে বিশ্বাস করি। আমরা যদি ভালো চিকিৎসার দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারি, তাহলে বিদেশের অনেক দেশ থেকেই আমাদের এখানে রোগী আসবেন। সেটিই প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম একটি ইচ্ছা। তিনি চান এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে, যাতে মানুষ চিকিৎসা নিতে সিঙ্গাপুর না যায়। আমার সাফল্য নির্ভর করে সবার ওপর। আমি সততার সঙ্গে চেষ্টা করব স্বাস্থ্য ব্যবস্থাটিকে ঠিক করতে। প্রধানমন্ত্রী আমাকে বার্ন ছাড়তে মানা করেছেন, আমি বার্নের সঙ্গেই থাকব। আমি কোনোদিন কোনো অসৎ কাজ করিনি। জীবনে কখনো কোনো অনিয়ম করিনি। আর কোথাও কোনো অনিয়ম হলে সেটিও সহ্য করব না। আমি চিকিৎসা খাত নিয়ে অনেক যুদ্ধ করেছি। সেটির আস্থা প্রধানমন্ত্রী রেখেছেন। আমি তার প্রতিদান দিতে চাই। আমাদের ডাক্তাররা অনেক মেধাবী। রোগী যেন বিদেশে না যায়; বরং বিদেশ থেকে রোগী আমাদের দেশে আসে, এমন ব্যবস্থা তৈরি করতে চাই। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উচ্চাশাকে আমরা ধন্যবাদ জানাই।