নিত্যপণ্যের দাম দ্রুত সহনীয় পর্যায়ে আনা জরুরি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৪, ১১:১৯ দুপুর

চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৫ দশমিক ১ শতাংশে নামিয়ে এনেছে সংস্থাটি। তবে প্রবৃদ্ধি কমলেও মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিকভাবে বাড়বে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এডিবি বলছে, মূল্যস্ফীতি বাড়লে নিত্যপণ্য কিনতে সাধারণ মানুষকে কষ্ট পেতে হবে। ২৫ সেপ্টেম্বর সংস্থাটি তাদের এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক সেপ্টেম্বর সংস্করণে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। গত এপ্রিলের পূর্বাভাসে এডিবি বলেছিল, চলতি অর্থবছরের জন্য প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হবে। অর্থাৎ এক ধাপে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ১ দশমিক ৫ শতাংশ কমিয়েছে এডিবি। গত জুলাই ও আগস্ট মাসে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অর্থনৈতিক কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। এর সঙ্গে সাম্প্রতিক বন্যার প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছে এডিবি। এ দুই প্রভাবে প্রবৃদ্ধির গতি কমবে বলে মনে করছে সংস্থাটি।
অন্যদিকে এডিবির পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে- উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈশ্বিক অর্থনীতির ধীরগতি ও অন্যান্য সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের কারণে চাহিদা কমবে। পণ্য ও জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়া এবং টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ায় মূল্যস্ফীতির হার বাড়তি। সংস্থাটির পূর্বাভাস, মূল্যস্ফীতির হার আবার দুই অঙ্কের ঘরে উঠতে পারে। ধারাবাহিক উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক হিসাবের ওপর চাপ, আমদানি নিয়ন্ত্রণ ও বেসরকারি বিনিয়োগের ধীরগতির কারণে গত দুই অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ শতাংশের নিচে। এডিবির ধারণা, রাজস্ব ও আর্থিক নীতিতে কঠোরতা আছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। এছাড়া ক্রয় ও বিনিয়োগ আরও কমবে। নেতিবাচক ঝুঁকি থাকায় সামষ্টিক অর্থনীতির পূর্বাভাস অত্যন্ত অনিশ্চিত। চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, ভঙ্গুর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও আর্থিক খাতের দুর্বলতাই এসব ঝুঁকি উৎস।
বলা বাহুল্য, দুই বছর ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজমান। সাধারণ সীমিত আয়ের মানুষকে চড়া দামে বাজার থেকে পণ্য কিনতে হচ্ছে। তা তাদের কষ্ট বাড়িয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘর ছাড়িয়ে যায়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, গত জুলাই মাসে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। তা গত এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। আগস্ট মাসে দেশের মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমেছে। তবু এখনো মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের উপরে আছে; যেখানে খাদ্য মূল্যস্ফীতি সাড়ে ১১ শতাংশের মতো। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রতি মাসেই মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৯ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। চলতি অর্থবছরেও উচ্চ মূল্যস্ফীতি অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলছে। তাই এ বছরও সাধারণ মানুষকে চড়া মূল্য খাদ্যপণ্য কিনতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা, অচিরেই মূল্যস্ফীতি কমে আসবে এবং নিত্যপণ্য কিনতে মানুষের কষ্ট লাঘব হবে। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারে প্রথম কাজ হবে নিত্যপণ্যের দাম দ্রুত সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা।
দৈনিক সরোবর/কেএমএএ