মানুষ-নদী-পরিবেশ হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত
প্লাস্টিক ব্যবহার ও উৎপাদনকারীদের শাস্তি দিন
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২৪, ০৮:৪৩ রাত

দেশে একটা সময় নিষিদ্ধ করা হলেও বর্তমানে যথেচ্ছভাবে প্লাস্টিক ব্যবহার করছে মানুষ। এতে পরিবেশের যে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে, এদিকে দৃষ্টি নেই কারোরই। এ নিয়ে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা উদ্বিগ্ন এবং প্লাস্টিক বন্ধ করে পরিবেশবান্ধব ব্যাগ ব্যবহারের অনুরোধ করা হলেও দায়িত্বশীলরা কানে তুলছেন না। প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের ফলে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে আছে আমাদের নদীগুলো। এমনিতেই দেশের নদ-নদী নানা কারণে মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে আছে, প্লাস্টিক জমা পড়ায় এটি তরান্বিত করে তুলেছে। নদ-নদীসহ পরিবেশের ওপর প্লাস্টিকের বিরূপ প্রভাব নিয়ে পরিবেশবাদী ও বিশেষজ্ঞরা সোচার হলেও দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়ার খবর পাওয়া যায়নি। যদি প্লাস্টিকের হাত থেকে নদ-নদী রক্ষার উদ্যোগ এখনই না নেওয়া হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাবে।
দেশে প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের নজর এদিকে দেয়ার জন্য গত বুধবার (৩১ জানুয়ারি) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে বাংলাদেশ সাসটেইনেবিলিটি অ্যালায়েন্স (বিএসএ) আয়েজিত ‘প্লাস্টিক এবং পরিবেশ’ বিষয়ে সংলাপের আয়োজন করা হয়। এতে দেশের বিশিষ্ট পরিবেশবিদরা প্লাস্টিকের ভয়াবহ ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ জানান। পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, তা নিয়ে তারা আলোচনা করেন। দেখা গেছে, দেশের নদী থেকে প্রতিদিন ৫৪৭ টন মাছ ধরা হয়। অথচ শুধু পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা থেকে প্রতিদিন ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিক আসে। এই পরিস্থিতি সরকারের দায়িত্বশীল অবগত কিনা, তা আমরা জানি না। যদি তারা এটি জানেন, তাহলে আর দেরি না করে নদী বাঁচাতে তারা কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন বলে আমরা আশা রাখি। কতিপয় মানুষের স্বার্থ উদ্ধার হচ্ছে প্লাস্টিকের ব্যবসা করে। অন্যদিকে তাদের কারণে নদী মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। মনে হয় এটি দেখার কেউ নেই।
২০০২ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করে। এর দুই বছরের মধ্যে বাজারগুলো প্রায় পলিথিনমুক্ত করে ফেলা হয়। উদ্যোগ, ব্যবস্থা সেখানেই শেষ। এরপর আবারও রাজত্ব শুরু ওই ব্যাগের। এ নিয়ে সরকারও উল্টোপথে হাঁটছে। পলিথিন এখন বৈধ পণ্যের মতোই ব্যবহার হচ্ছে হরদম। দেশে প্রতিদিন ৩ হাজার কারখানায় ১ কোটি ৪০ লাখ পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকায় একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করা হলেও এর ব্যবহার বেড়েছে ব্যাপক হারে। আর নানা প্লাস্টিক পণ্য বিষিয়ে তুলছে পরিবেশ। ব্যবহারের পর যত্রতত্র ছুড়ে ফেলা প্লাস্টিক সময়ের সঙ্গে ক্ষয় হয়ে মাইক্রোপ্লাস্টিকে রূপান্তরিত হয় (দৈর্ঘ্যে ৫ মিলিমিটারের চেয়েও ছোট) এবং পরিবেশে তা ছড়িয়ে পড়ে মানুষ ও বাস্তুতন্ত্রের উল্লেখযোগ্য ঝুঁকির সৃষ্টি করে। প্রাকৃতিক পরিবেশে দিনের পর দিন থেকেও এর কোনো ক্ষয় হয় না এবং তা আমাদের খাদ্যচক্রে ঢুকে পড়ে। মায়ের বুকের দুধে প্রথমবারের মতো মাইক্রোপ্লাস্টিক শনাক্ত করেছেন ইতালির বিজ্ঞানীরা। তাদের আশঙ্কা, এর মধ্য দিয়ে নবজাতকের স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
আমাদের এ কথা মানতে হবে যে, পাট থেকে ব্যাগসহ নানা জিনিস উৎপাদন ও ব্যবহার হতে পারে। পরিবেশবান্ধব পাটজাত ব্যাগের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। অথচ প্লাস্টিক দুর্বৃত্তদের কারণে তা প্রকাশ্যে আসছে না। তাই দেরি না করে প্লাস্টিক ব্যবহার ও উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের শৈথিল্য দেখানো সুযোগ নেই। আমরা বলবো, প্লাস্টিকজাত ব্যাগ উৎপাদনকারীদের কঠোর আইনের আওতায় আনার বিকল্প নেই।