ঢাকা, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১

বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার উদ্যোগ দরকার

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: মার্চ ১৯, ২০২৫, ০৫:১০ বিকাল  

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের নতুন বাজেট তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে; যা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট। দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাসহ চারটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। নতুন বাজেটে অগ্রাধিকার পাবে খাদ্য নিরাপত্তা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং আর্থসামাজিক উন্নয়ন। গুরুত্ব পাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর স্বার্থ। এর অংশ হিসেবে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা ও ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রাথমিকভাবে ৮ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। তা গতানুগতি ধারাবাহিক বাজেটের চেয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেটে আগামী অর্থবছরে ভিন্নমাত্রার পরিকল্পনা যুক্ত থাকবে; যাতে বৈষম্য দূর করতে সহায়ক হয়। অর্থ সংকটের কারণে আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে কম হবে। কারণ সরকারের আয় কম, শুল্ক-কর আদায়ও খুব বেশি বাড়েনি। আবার বিদেশি সহায়তার ঋণ পরিশোধেও বিপুল অর্থ খরচ হচ্ছে। 

বলার অপেক্ষা রাখে না, আগামী বাজেট হতে পারে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের সমান বা এর কম। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার। সংশোধন করে তা সাড়ে ৭ লাখ কোটি টাকার মধ্যে সীমিত রাখার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৭ লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা করা হয়েছিল। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকারও ছোট হবে। নতুন করে বড় কোনো প্রকল্প নেওয়া হবে না। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে অর্থনীতিবিদরা ৮ লাখ কোটি টাকার নিচে বাজেট দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু কর্মসংস্থান বাড়ানোর বিষয়টি মাথায় নিয়ে বাজেটের আকার কিছুটা বড় করা হচ্ছে। কারণ সরকারি ব্যয়  বেশি  সংকুচিত করে ফেললে কর্মসংস্থান বাড়বে না। একই সঙ্গে সরকার ব্যয় মেটাতে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ কম নেওয়া হবে; যাতে করে উদ্যোক্তাদের অর্থায়নে কোনো সমস্যা না হয়।

বলা বাহুল্য, কর্মসংস্থানের কথা চিন্তা করে গ্রামীণ অবকাঠামো খাতে জোর দেওয়া হবে আগামী বাজেটে। সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতায় সুবিধাভোগীদের ভাতা কিছুটা বৃদ্ধি এবং শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া পূরণের চেষ্টা থাকবে আগামী বাজেটে। জুলাই আন্দোলনের চেতনা এবং শ্বেতপত্র কমিটি ও টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনের সুপারিশের প্রতিফলন আগামী বাজেটে থাকতে পারে। বাজেটের আকার না বাড়লেও সরকারের বেতন-ভাতা, সুদাসলসহ দেশি-বিদেশি ঋণ পরিশোধে খরচ কিছুটা বাড়বে। খুব প্রয়োজন না পড়লে টাকা ছাপিয়ে ঋণ দেওয়া বন্ধ রাখা হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে শুল্ক-কর হ্রাস অব্যাহত রাখা হবে। একই সঙ্গে পণ্য সরবরাহ চেইনের সব স্তরের প্রতিবন্ধকতা দূর করা হবে। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি রোধে প্রতিযোগিতা কমিশনকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। আমাদের প্রত্যাশা, আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার উদ্যোগ অন্তর্ভুক্ত করবেন অর্থ উপদেষ্টা। 

দৈনিক সরোবর/কেএমএএ