ঢাকা, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১

ময়মনসিংহে আতঙ্কের আরেক নাম আ’লীগ নেতা সালাম

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

 প্রকাশিত: মার্চ ১৮, ২০২৫, ০৮:২৩ রাত  

মো. আব্দুস সালাম ওরফে টেডন সালাম। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং ভবানীপুর ইউনিয়নের ত্রাস। তার ছেলে মোহাম্মদ নাছিম সাবেক সভাপতী ছাত্রলীগ ভবানীপুর ইউনিয়ন ও ইয়াবা ব্যবসায়ী। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের আগ পর্যন্ত এই বাবা-ছেলে ছিল ভবানীপুরের অপরাধ জগতের কিং। মাদক কারবার, জমি দখল, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ন্ত্রণ করতেন তারা। তাদের দোর্দণ্ড প্রতাপের কাছে একেবারে অসহায় ছিল এলাকাবাসী।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দলের অন্য নেতাদের মতো গা-ঢাকা দিয়েছে সালাম ও তার ছেলে নাছিম। তারা কোথায় পালিয়েছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি এলাকাবাসী ও তার আত্মীয়স্বজনরাও।

এ বিষয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে তুহিন মিয়া বলেন, সালাম ছিল উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। তার দাপটে এলাকার কেউ কোন কথা বলতে পারতো না। ছালাম বরবিলা বাজার ফাজিল মাদ্রাসার সভাপতি ছিলেন। শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে কামিয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। অবকাঠামো উন্নয়নের নামে হাতিয়ে নিয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।

এদিকে পরিকল্পিত ভাবে লোহার শহর উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি বানিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য মোসলেম এর পুত্র সেলিম কে এবং ছালামও ছিল ঐ কমিটিতে। সেখানেও অবকাঠামো উন্নয়ন কাজের অযুহাত দেখিয়ে লুট করেছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ।

ভবানীপুরের বাসিন্দা মুশাহেদুল বলেন, এলাকায় বিদ্যুতের নতুন সংযোগ দিতে গিয়ে প্রতি সংযোগে হাতিয়ে নিয়েছে ৩০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা। এছাড়াও সরকারি কাজি নিয়োগ দিয়ে বরবিলা হুতে ডাক্তারের কাছ থেকে ২০ লক্ষ টাকা ঘুস নিয়েছে, এই টেডন ছালাম। সরকারি খরচে নিজের বাড়ি পর্যন্ত নিয়েছে পাকা রাস্তা।

আবুল কাসেম নামের একজন বলেন, প্রশাসনের প্রভাব খাটিয়ে আমার বাড়িতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে লুটপাট করে বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। ত্রিশাল তার নিজ বাসায় তারই কাজের মেয়েকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছিল। এ নিয়েও মামলা হয়েছিল। তারপর সেটা তৎকালীন সংসদ সদস্য মোসলেম দরবারের নামে ধামাচাপা দেয়।

কাসেম আরো বলেন, আমাদের এলাকার মুরব্বি মাও: হেলালুর রহমানের বাড়িতে কয়েক বছর আগে মাদক ব্যবসা করতে না করায় ইফতারের পর ঈদের আগের দিন হামলা করে, এতে নারীসহ তারা সবাই আহত হন। কিন্তু আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ব্যবহার ও তৎকালীন সংসদ সদস্য মোসলেমের সাহায্যে উল্টো উনাদের নামেই মিথ্যে মামলা দিয়ে হয়রানি করে ।

তিনি আরো বলেন, এছাড়াও এলাকার জমির দালালি, জমি দখল সহ নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিল সালাম। অবৈধ অর্থ দিয়ে ত্রিশাল পৌর শহরে নির্মাণ করেছেন বহুতল ভবন এবং ময়মনসিংহে রয়েছে বাসা। শুধু তাই নয়, রয়েছে কোটি কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স। সালামের নামে রয়েছে বহু অভিযোগ, অনেক মার্ডার মামলা, কিন্তু তাও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতো না, আর এখন তো পলাতক।

তার হাত থেকে রেহাই পায়নি এলাকার পর্যটন কেন্দ্র আলাদিনস পার্ক। পার্কের একজন কর্মকর্তা জানান, ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে পার্ক থেকে হাতিয়ে নেন এক কোটি টাকা। পার্ক টিকিয়ে রাখতে পার্ক কর্তিপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেননি বলে জানান তিনি।

লোহার শহর উচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্র বলেন, গত ৩০/০১/২০২৫ তারিখে তার গুন্ডাপান্ডা নিয়ে গাড়িতে দিয়ে এসে লোহার শহর উচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্র কে বেধর মারপিট করে গুরুতর আহত করে আবার তারা এখন আত্মগোপনে। এ নিয়ে মামলাও হয়েছে এবং তা চলমান।

ভবানীপুর দারোগাবাড়ি জামে মসজিদ কমিটির সভাপতির পদ থেকে সরানো হলে সেই জিদে ১৪/৩/২০২৫ তারিখে সালামের নির্দেশে ,কমিটি বিলুপ্তের সাথে যারা জড়িত ছিলো তাদের শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে মারধর এবং মনজু তালুকদারের হাত ভেঙে ফেলে তার সন্ত্রাস বাহিনী।

এ প্রসঙ্গে বর্তমান মসজিদ সভাপতি বলেন, আমার ভাইকে শুক্রবার সবার সামনে মারে, এখনো এলাকায় তাদের ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারে না। প্রশাসন এখনোও চুপ চাপ ,দ্রুত আইনের মাধ্যমে এর সঠিক বিচার চাই ।

ফুলবাড়িয়া থানার দ্বায়িত্বরত কর্মকর্তা জানান, এ বিষয়ে মামলা হয়েছে, তদন্ত চলছে খুব দ্রুত গ্রেফতার করা হবে, যদিও তারা সবাই পলাতক। সালামের নামে থানায় বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে তাকে খুব দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।

দৈনিক সরোবর/এসএফ