আইনবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত জরুরি
প্রকাশিত: মার্চ ০৩, ২০২৫, ০৬:৫২ বিকাল

সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর, হামলা, ডাকাতি ও প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার মতো ঘটনাও ঘটেছে। একদিকে সেই রেশ, অন্যদিকে নতুন ঘটনা জনমনে ভয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে আতঙ্কে দিন কাটছে সাধারণ মানুষের। এভাবে কেন মানুষ বারবার আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এসব ঘটনাকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা যাই বলি না কেন- সরকার দায় এড়াতে পারে না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে একশ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল এই হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। জননিরাপত্তায় কঠোর না হলে দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং দেশের সুনাম রক্ষায় কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতিটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রেরই নিজস্ব আইন রয়েছে এবং তা অনুযায়ী যাবতীয় বিচার প্রক্রিয়া সম্পাদিত হয়। আর এর ব্যত্যয় ঘটলে বিচারকার্য বিঘ্নিত হয়, সৃষ্টি হয় অপ্রত্যাশিত বিশৃঙ্খলা।
বলা বাহুল্য, বাংলাদেশে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা আগেও দেখা গেছে। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। জনতা দ্বারা নিজ হাতে বিচার, একটি গুরুতর সমস্যা- যা অনেক দেশেই দেখা যায়। এসব ঘটনা আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করে এবং সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। অনেক সময় নিরপরাধ লোকজনও এমন ঘটনার শিকার হয়; যা দেশের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত করে। যে কোনো অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির ন্যায়বিচার প্রাপ্তি যেমন অধিকার, তেমনি তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। যারা আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে, তারা অপরাধ করছে এবং দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলছে; যা দেশের জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি করছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে আমলে নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশজুড়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড জনমনে আতঙ্ক তৈরি করছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির জানান দিচ্ছে- যা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না অপরাধ, কাটছে না আশঙ্কা। সামাজিক অস্থিরতার কারণে মানুষ সংঘর্ষে জড়িয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। হত্যার তালিকা দীর্ঘ হলেও আইনি ব্যবস্থার তৎপরতা চোখে পড়ছে না। আইন প্রয়োগে দুর্বলতা, সামাজিক অসাম্য, রাজনৈতিক উত্তেজনা, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং মিথ্যা তথ্যের প্রসারের কারণেই ‘মব জাস্টিস’ বা ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ বাড়ছে; যার পরিণতি খুবই ভয়াবহ। দুঃখজনক হলেও সত্য, সরকার জননিরাপত্তার জন্য বিকল্প পথ অবলম্বন করেও সামলানো যাচ্ছে না। বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয় এবং সব অপরাধের বিচারের দায়িত্ব আদালতের। তাই যারা এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের গ্রেপ্তার করে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা না নিলে রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থা আরও ভেঙে পড়ার আশঙ্কা স্পষ্ট হয়ে যাবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে বিচারের প্রতি জনতার আস্থা সৃষ্টি করা সরকারের দায়িত্ব। আমাদের প্রত্যাশা, আইনবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িতদের গ্রেফতার করে শাস্তি নিশ্চিত করবেন সংশ্লিষ্টরা।
দৈনিক সরোবর/কেএমএএ