বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা বিষয়ে ভাবা উচিত
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৪, ১১:৩৫ দুপুর

এইচএসসির স্থগিত পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়া বিষয়গুলো এবং স্থগিত বিষয়ে এসএসসির সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সঙ্গে মিলিয়ে (ম্যাপিং) এইচএসসির ফল প্রকাশ করা হোক। কারণ গণআন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরীক্ষা বন্ধ থাকায় তারা মানসিক চাপের মুখে পড়েছে। অনেক শিক্ষার্থী মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত নয়। এখনো তাদের অনেক সহপাঠী আহত, হাসপাতালে ভর্তি। তাই এ অবস্থায় স্থগিত পরীক্ষাগুলো তারা আর দিতে চায় না। তবে উচ্চ শিক্ষা, চাকরির বাজারে এ পরিপ্রেক্ষিতে নানা বেগ পোহানোসহ সামাজিকভাবে তাদের মধ্যে হীনম্মন্যতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যারা পরিশ্রমী শিক্ষার্থী তাদের ওপর এটি এক ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ। এ ম্যাপিং বা অটোপাস পদ্ধতিতে প্রকৃত মেধার মূল্যায়ন সম্ভব নয়। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের মতে, অটোপাস দেওয়া হলে শিক্ষার্থীদেরই ভুগতে হয়। এ কারণে কষ্ট করে হলেও পরীক্ষা দেওয়া উচিত ছিল। সরকারেরও বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়ার দরকার ছিল।
দেশে এ বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থী সাড়ে ১৪ লাখের মতো। তাদের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল গত ৩০ জুন। সাতটি পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঘিরে দফায় দফায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। পরীক্ষার্থীদের একাংশের মত, এইচএসসির ফল শুধু এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েই মূল্যায়ন করা উচিত। কারণ এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হলে এসএসসিতে খারাপ ফলের কারণে অনেকেই পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ফরমই তুলতে পারবে না। তাদের অনেকেই পরীক্ষা হলে হয়তো এইচএসসিতে ভালো ফল করতে পারত। তাই সরকার স্থগিত পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একটি জরিপ পরিচালনা করতে পারত। জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা বোর্ডগুলোর মাধ্যমে আহত শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করে তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা যেত। তা ব্যবস্থা ম্যাপিং ছাড়াও অন্য কিছু হতে পারত। সাবজেক্ট ভিত্তিতে অ্যাসাইনমেন্ট দিলেও হতো। অবশ্য স্থগিত পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে এ নিয়ে আরও আলোচনা ও চিন্তার অবকাশ ছিল বলে শিক্ষা উপদেষ্টা স্বীকার করেছেন। তবে কেউ যেন অবমূল্যায়নের শিকার না হয়, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা কীভাবে নেওয়া যেতে পারে, এ বিষয়ে ভাবা উচিত। তাদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ যাতে ব্যাহত এবং কর্মক্ষেত্রে যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
আমরা বলবো, পরীক্ষাগুলোর বিষয়ভিত্তিক ফল তৈরি যেন সহজ ও সুষ্ঠু উপায়ে হয়, এটি নিশ্চিত করা জরুরি। এর পাশাপাশি ভবিষ্যৎ পরীক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে হবে। না হলে উচ্চ শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এছাড়া ভবিষ্যতে কখনো বিরূপ পরিস্থিতিতে অটোপাসের চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা, এ বিষয়ে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখবে কর্তৃপক্ষ।
দৈনিক সরোবর/কেএমএএ