ঢাকা, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১

দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যায় 

ব্যাংক ও আর্থিক খাত থেকে শুরু হোক

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৪, ০৯:০৮ রাত  

দেশে ঋণখেলাপি কমার বদলে বৃদ্ধির দিকেই আছে। ব্যাপক ঋণখেলাপি নিয়ে হই চই হলেও নতুন করে ঋণ দেয়ার ঘটনা বন্ধ নেই। বিপুল ঋণখেলাপির টাকা পড়ে থাকলেও তা ওঠানোর ব্যাপারে খুব একটা গরজ দেখা যায় ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের। মনে হতে পারে, ঋণখেলাপি নিয়ে কোনো সমালোচনা তাদের প্রভাবিত করে না। গাছাড়া ভাব নিয়ে ঋণ ওঠানোর কাজ চলে আসছে। ফলে বিশাল অঙ্কের ঋণখেলাপি বছরের পর বছর ধরেই পড়ে আছে, তা, সরকারের কোষাগারে জমা হচ্ছে না। তবে তিন মাসে খেলাপি ঋণের ১০ হাজার কোটি টাকা ওঠাতে পারায় ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের প্রশংসা করা যায়। এভাবে যদি ঋণখেলাপির কাছ থেকে টাকা ওঠানো যেত, তাহলে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আরো গতি আসত বলে আমাদের বিশ্বাস। যে বিপুল অঙ্কের টাকা পড়ে আছে, তা ওঠানোর জন্য গরজ সৃষ্টিতে সরকারের আরও কঠোর হওয়া উচিত। 

বৈশ্বিকসহ নানা কারণে দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো নেই। অর্থনৈতিক মন্দা অবস্থা থেকে ভালোর দিকে যেতে হলে ঋণখেলাপির টাকা দ্রুত তোলার বিষয়টি জরুরি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ফের টানা চতুর্থবারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছে। নতুন অর্থমন্ত্রী সচেষ্ট রয়েছেন অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তোলায়। বিপুল ঋণখেলাপির জন্য যে মূলত ব্যাংক সংশ্লিষ্টরাই দায়ী তা না বললেও চলে। তাই অর্থনীবিদরা মনে করেন, বছরের শেষ তিন মাসে ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ আদায়ে জোর দেয়। এ কারণে প্রতি বছরই সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় ডিসেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ কমতে দেখা যায়। তা ছাড়া নির্বাচন ঘিরে খেলাপি ঋণ কমানোর ওপর প্রভাব রয়েছে। আবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলেরও (আইএমএফ) খেলাপি ঋণ কমাতে শর্ত রয়েছে। ওই শর্ত পরিপালনে এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। 

ঋণ দেয়ায় যে জাল-জালিয়াতির ঘটনা ঘটে, তা আগে বন্ধ করতে হবে।  তে বর্তমান অর্থমন্ত্রী কতটা সফল হবেন, তা বল মুশকিল। নানা মাফিয়া, ব্যাংক ও আর্থিক খাতকে কব্জা করার জন্য ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করেই মোটা দাগে ঋণ দেয়া হয়ে থাকে; যাতে ভয়ানক অনিয়ম-দুর্নীতি থাকে। এটি কবে নাগাদ বন্ধ হবে, তা কেউ জানেন না। তারপরও আমরা বলবো, খেলাপি ঋণ ১০ হাজার কোটি টাকা কমার ঘটনা সবাইকে আলোড়িত করেছে। 

দেশের চলমান অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে ব্যাংকিং খাতের ঋণ আদায়ে ধীরগতি অব্যাহত আছে। মোটা দাগে ঋণ পরিশোধে খেলাপিদের অনীহার কারণে বছরের হিসাবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় খেলাপি ঋণ ২০.৭০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকায়। আর এই খাতে খেলাপি ঋণের অনুপাত এক বছর আগের ৮.১৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে ৯ শতাংশ হয়েছে। এক বছরে হিসাবে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ০.৮৪ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে হিসাব দিচ্ছে, তা প্রকৃত তথ্য নয়। কারণ প্রকৃত খেলাপি ঋণ অনেক বেশি। মামলার কারণে অনেক ঋণকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। আবার অবলোপন করা ঋণও খেলাপির হিসাবে নেই। 
পরিশেষে আমরা বলবো, সরকারের শীর্ষ থেকে যদি ঋণ ওঠানোর ব্যাপারে কঠোর নির্দেশ জারি কওে, তাহলে ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা গরজ দেখাবে। তাদেরৎ ম্যানেজ করেই ঋণ ওঠানো থামিয়ে রাখা যাবে না। এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীকে একটি পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। ঋণ ওঠানো ও ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে যে যোগসাজশের সংস্কৃতি বহুদিন ধরে দেশে চালু, তা বন্ধে উদ্যোগী হওয়ার বিকল্প নেই। অনিয়ম-দুর্নীতি দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতকে কতটা ভঙ্গুর করেছে, তা সরকারও আঁচ করতে পারে বলে আমরা মনে করি। ফলে সরকার দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যায় ব্যক্ত করেছে। আমাদের প্রত্যাশা, এটি শুরু হোক আগে ব্যাংক ও আর্থিক খাত থেকে।