নিশ্চিত হোক বেঁধে দেওয়া দাম
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৩, ০৮:৩০ রাত

সরকার পাঁচ পণ্যে দামের লাগাম টানার চেষ্টা করছে। কিন্তু এতে সাফল্য কতটুকু আসবে, এ নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। বৃহস্পতিবার সরকার ডিম, আলু, পেঁয়াজ, চিনি ও ভোজ্য তেলের দর নির্ধারণ করে দেয় কিন্তু শনিবার পর্যন্ত বাজারে এর কোনোই প্রভাব পড়েনি। বিক্রেতারা সরকার বেঁধে দেওয়া দাম না মেনে নিজেদের ইচ্ছে মতো বিক্রি করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছে, পণ্যের দাম বেঁধে দিলে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসে না। কারণ হিসেবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ‘সরকার পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলেই মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা রোধ করা যাবে না। যে কারণে বাজারে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে সেসব রোধেও উদ্যোগ নিতে হবে। বাজারে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সুদের হার এবং মুদ্রার বিনিময় হার ব্যবস্থাপনাকে সরকার নিয়ন্ত্রণ করলে দাম নিয়ন্ত্রণে সুফল পাওয়া যাবে না। এই বিষয়গুলো বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের এ কথা যেমন সত্য, আবার এটাও ঠিক যে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে। এ ধারনটাই প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু সরকার এর বিরুদ্ধে কতটা ব্যবস্থা নিতে পেরেছে?
দেখা যাচ্ছে যে, সরকার পাঁচটি পণ্যের দাম ঠিক করে দেওয়ার পরেও ব্যবসায়ীরা মানছে না। এটা তোয়াক্কাই করছে না। ফলে সরকার যদি এর বিরুদ্ধে বাজারে অভিযান না চালায়, তাহলে দাম বেঁধে দেওয়া পাঁচ পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে না। অবশ্য কোথাও কোথাও ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়েছে।
জানা যায়, দেশের নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে পাঁচটি পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করে ডিম, আলু, পেঁয়াজ, চিনি ও ভোজ্য তেলের দর নির্ধারণ করে দেয়। এর মধ্যে এই প্রথমবারের মতো তিনটি কৃষিপণ্য ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এবার পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে আইনের কঠোর প্রয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম অনুযায়ী এখন থেকে ডিম প্রতিটি ১২ টাকা, প্রতি কেজি আলু ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা, প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হবে। প্রতি কেজি খোলা চিনি ১২০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকায় বিক্রি হবে। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৯ টাকা, খোলা তেল ১৪৯ টাকা এবং প্রতি কেজি পামঅয়েল ১২৪ টাকায় বিক্রি হবে। এদিকে শুক্রবারের (১৫ সেপ্টেম্বর) বাজারের চিত্র হলো- ডিম-আলু-পেঁয়াজ, চিনি, ভোজ্য তেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা, আলুর কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা এবং পেঁয়াজের দাম ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সরকারের এই দাম নির্ধারণের একদিন পর সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বাজারে এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। নতুন দামের নির্দেশনা ব্যবসায়ীরা পেলেও, মানছে না কেউই।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারের নির্ধারণ করা দামে আমরা কিনেও আনতে পারিনি, তাহলে ওই দামে বিক্রি করবো কী করে?
আমরা মনে করি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিন মাস বাকি। অসাধু ব্যবসায়ী চক্র পণ্যের দাম চড়া করে সরকারকে রাজনৈতিকভাবে বেকায়দায় ফেলতে চাইছে। ফলে দেরি না করে পাঁচ পণ্যের বেঁধে দেওয়া দামেই যাতে ব্যবসায়ীরা বিক্রি করে, তা, নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক সরোবর/এএস