ঢাকা, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১

কবে হবে নিরাপদ সড়ক

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০২৩, ০৭:১৭ বিকাল  

ছবি: ইন্টারনেট

দেশে সড়ক দুর্ঘটনা কমার কোনো লক্ষণ নেই। সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর কোনো চেষ্টা দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কিনা তা পরিষ্কার নয়। গত মাসে জুনে দেশে ৫৫৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫১৬ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন ৮১২ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৭৮ ও শিশু ১১৪ জন। এই চিত্র থেকে বোঝা সহজ হয়, প্রতি মাসেই প্রায় এমন সংখ্য দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে।

এ নিয়ে সংবাদমাধ্যম সোচ্চার হলেও দায়িত্বশীলদের মধ্যে ভাবান্তর নেই। তারা বিষয়টি সহজভাবেই নিচ্ছেন বলে ধারণা।

কিছুদিন ধরে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল যোগ হয়েছে। মহাসড়কে চলছে এই দ্বিচক্রযান। এতে বিপদ আরো বেড়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা বাড়িয়ে তুলেছে মোটরসাইকেল। 

দেশের সড়ক-মহাসড়ক উন্নত হওয়ায় যানের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতেও দুর্ঘটনা বাড়িয়ে তুলেছে। কিছুদিন আগে কর্তৃপক্ষ যানবাহনের গতিনিয়ন্ত্রণের জন্য নীতিমালার করার কথা বলে। সেই সঙ্গে দেশে ৪০ শতাংশ গাড়ি ফিটসেনবিহীন যা চলাচল অযোগ্য-এগুলোকে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। কিন্তু কবে গতি নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা ও অযোগ্য চলাচলকারী যান ধ্বংস করা হবে তা এখনও জানা যায়নি।

দেশের সড়ক যে নিরাপদ নয়, তা সব মহল থেকেই বলা হচ্ছে। সড়ক উন্নত হওয়ার পরে আরো অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসে কার্যকর উদ্যোগ যে প্রয়োজন, সেই কার্যকর উদ্যোগ কবে নেওয়া হবে তা দেখা যাচ্ছে না। 

সম্প্রতি জুন মাসের সড়ক দুর্ঘটনার যে চিত্র বেসরকারি সংগঠন রোড সেফটি  বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, জুনে যেসব দুর্ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাইক দুর্ঘটনা। ২০৭টি বাইক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৬৯ জন, যা মোট নিহতের ৩২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৭ দশমিক ০৩ শতাংশ। এসব দুর্ঘটনায় মোট ৯৯ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ১৯ দশমিক ১৮ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৭৬ জন, অর্থাৎ ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। 

দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৬৯ জন (৩২ দশমিক ৭৫ শতাংশ), বাসযাত্রী সাতজন (১ দশমিক ৩৫ শতাংশ), ট্রাক-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি আরোহী ৬৫ জন (১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ), প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স-র‌্যাবের জিপ আরোহী ২৪ জন (৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান) ১১৪ জন (২২ দশমিক ০৯ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-করিমন-ভটভটি-টমটম-মাহিন্দ্র) ২০ জন (৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান আরোহী ১৮ জন (৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ) নিহত হয়েছে। ১০৯টি (১৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২৬৮টি (৪৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৯৭টি (১৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ) পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা দেওয়া, ৭২টি (১২ দশমিক ৮৮ শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৩টি (২ দশমিক ৩২ শতাংশ) অন্যান্য কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে।

রোড সেফটি প্রতিমাসে দেশের সড়ক দুর্ঘটনার চিত্রটি প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষকে আঙুল তুলে দেখিয়ে দিচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায় কত মানুষ মারা যাচ্ছে। এ নিয়ে অবশ্য সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) দ্বিমত পোষণ করে থাকে। দেশের সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে রোড সেফটি  অতিরঞ্জিত তথ্য পরিবেশন করছে বলে অভিযোগ করে থাকে বিআরটিএ। 

এ কারণে অনেকের বক্তব্য হলো, সড়ক দুর্ঘটনার আসল ও নিখুঁত চিত্রটি বিআরটিএ কেন দেয় না। তাদের কথাবার্তায় মনে হয়, দেশের সড়ক যথেষ্ট নিরাপদ! দেশের সড়ক কতটা নিরাপদ তা প্রত্যেক মাসে অসংখ্য মানুষের মৃত্যুই প্রমাণ করে। 

সুতরাং আমরা বলবো- বিআরটিএ’র উচিত সড়ক নিরাপদ করে তোলার লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। তারা এ কাজটি করতে ব্যর্থ হয়েছে, এটাও স্বীকার নিয়ে সড়ক নিরাপদে ঝাঁপিয়ে পড়া উচিত। বিআরটিএ সড়ক নিরাপদে কবে ঝাঁপিয়ে পড়বে তা দেখার অপেক্ষায় আছি আমরা।

দৈনিক সরোবর/আরএস