ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১

দেশবিরোধী অপশক্তি নির্মূল হোক

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২, ১২:৪১ রাত  

ফাইল ফটো

কথায় আছে অক্ষমের আস্ফালন বেশি। ঈর্ষাকাতরতাও বেশি। ফলে সক্ষম ব্যক্তির ওপর তার নিষ্ফলা আস্ফালন উদগত করে সে মনে শান্তি খোঁজে। আসলে শান্তি পায় না। তার মনেজুড়ে জন্ম নেওয়া হিংসার আগুনে সে নিজেই জ্বলে পুড়ে মরে। কথাটি যেন দেশবিরোধী অপশক্তির বেলায় শতভাগ সত্য।

বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশকে কতটা উন্নতিতে নিয়ে গেছেন; তা, আমাদের আর এখন বলতে হয় না। বিশ্বের বিখ্যাত সাময়িকপত্র, সংবাদমাধ্যম এবং বিশ্বখ্যাত বাঘা বাঘা অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে শক্তিশালী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনায়করাই উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন। তারপরও অবশ্য দেশবিরোধী অপশক্তি নিরন্তরভাবে বর্তমান সরকারের উন্নয়নসহ বিভিন্ন সময়ে বিষয়ে অপপ্রচারে লিপ্ত থাকে।

এতে অপপ্রচারকারীদের ধারনা, তারা কামিয়াব হবে। এই অপপ্রচারের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী সরকারকে ঘায়েলে সক্ষম হবে। কিন্তু তাদের অপপ্রচারে কিছু মানুষ বিভ্রান্ত হলেও তাদের কথা সত্য হিসেবে মেনে নিলেও তা থেকে বের হয়ে আসছেন, যখন তারা দেখছেন যে, আসলে মিথ্যা বানোয়াট, অসত্যকে সত্যের মতো বলে তাদের বিভ্রান্তের জালে আটকানো হয়েছে। ফলে বিপুল অংকের টাকা বিনিয়োগ করে সামাজিক নানা মাধ্যমে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার করা হয়, তা, ভেস্তে গেছে। তবে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে নতুন নতুন কর্মপন্থা নিয়ে অপপ্রচারকারীরা মাঠে সক্রিয় রয়েছে। এর বিরুদ্ধে বাঙালি জাতিকে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, দেশবিরোধীরা শেষ আঘাত দেওয়ার হুঙ্কার দিয়ে এগোনোর চেষ্টা করছে। দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশকে ফের অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা হচ্ছে।

মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরে পেয়েছি আমরা। সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। কিন্তু দেশকে ফের পশ্চাদমুখী করার জন্য অপশক্তি দিয়ে লড়ে যাচ্ছে। এই অপচেষ্টা রুখে দিতে পারে বাঙালি জাতি একতাবদ্ধ থেকে। দেশে-বিদেশে বিশাল অর্থ ঢেলে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার করা হচ্ছে, এর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়া বাংলাদেশের প্রত্যেকটি দেশপ্রেমিকর উচিত।

এ ব্যাপারে শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া ভার্চুয়াল সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কে তার অবস্থানকালীন হোটেল থেকে  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে বলেন, সরকার ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের যোগ্য জবাব দিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানাই। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের উন্নয়নের বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে এবং বিশ্বে বাংলাদেশ যে মর্যাদা ও সম্মান অর্জন করেছে তা ধরে রেখে মাথা উঁচু করে বিশ্বব্যাপী চলার আহ্বান জানাবো।

আমাদের বিরুদ্ধে চালানো অপপ্রচারের তাৎক্ষণিক উপযুক্ত জবাব দিন। ‘সোশাল মিডিয়ায় যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, তাদের বেশিরভাগকেই অপকর্মে জড়িত থাকার জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে বা অপরাধ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। তাদের কথায় কর্ণপাত করবেন না। বরং আমাদের উন্নয়ন জনগণের সামনে তুলে ধরুন। বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্পর্কে আপনার এলাকার কংগ্রেসম্যান, সিনেটর ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অবহিত করুন।

বিএনপি-জামায়াত জোট ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাজেটের আকারের তুলনামূলক চিত্র দেখে তাদের দ্বারা কতটা উন্নয়ন হয়েছে তা বিচার করতে পারবেন। বিএনপি আমলে বাজেটের আকার ছিলো মাত্র ৬০ হাজার কোটি টাকা। আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ বাজেট ছয় লাখ কোটি টাকার ওপরে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে যে মর্যাদা ও সম্মান অর্জন করেছে তা সমুন্নত রাখার জন্য আমি আপনাদের সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি।

বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বদলে দিয়েছে এবং প্রমাণ করেছে বাংলাদেশ যা বলে তা করার ক্ষমতা রাখে। যেহেতু একটি প্রকট খাদ্য সংকট আসন্ন, তাই দেশে আপনার স্বজনদের বলুন, বিভাজনের কারণে দেশের কোনো জমিই অনাবাদি রাখা যাবে না। ভোট কারচুপিতে বিএনপি চ্যাম্পিয়ন ছিল। তারা ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার তালিকা তৈরি করেছিলো। দেশের সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকার জন্য রাজনীতিতে হত্যা, গুম, দুর্নীতি, মানিলন্ডারিং ও ঋণখেলাপি সংস্কৃতির মতো সব খারাপ কাজের সূচনা করেছিলেন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন, জিয়াউর রহমান সেই বিচার বন্ধ করে দেন। সেই অপরাধীদের উপদেষ্টা ও মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। খালেদা জিয়া ও এইচ এম এরশাদ একই কাজ করেছেন। খালেদা জিয়া এতিমদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতির মামলায় এবং তার ছেলে তারেক রহমান মানিলন্ডারিং ও ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এরই মধ্যে জিয়াউর রহমানের আরেক ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর কাছ থেকে অবৈধভাবে চুরি করা ২০ কোটি টাকা ফেরত এনেছে।

বন্দি অবস্থা থেকে জনগণের ভোটাধিকারের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাংলাদেশ এখন আর্থসামাজিকভাবে উন্নত হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত জোট বারবার অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাস ও হত্যার সংস্কৃতির আশ্রয় নিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু জনগণ কখনোই তাদের কর্মকাণ্ডে সাড়া দেয় না। কারণ, তারা হত্যা, দুর্নীতি, অর্থপাচার এবং অস্ত্র ব্যবসাসহ প্রতিটি অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। তার সরকার সবসময় ন্যায়ের পক্ষে। তাই জাতির পিতা হত্যা মামলার বিচার করেছে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সূচনা করেছে।

বঙ্গবন্ধুর খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে বাংলাদেশ কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধু হত্যা এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার না হওয়ার অভিশাপ থেকে মুক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশের অর্থনীতি আরো প্রাণবন্ত হয়েছে এবং উন্নয়নের পথে যাত্রা শুরু করেছে।

এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর বেশি দেরি নেই। এই নির্বাচন যেন সংবিধান অনুসারে না হয়, তার জন্য কিছু রাজনৈতিক দল চেষ্টা করে যাচ্ছে, তার মধ্যে বিএনপি অন্যতম। দীর্ঘ সময় ধরে দলটি ক্ষমতার বাইরে থাকায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশভাবে ক্ষমতা যাওয়ার পথ দেখছে। সেই হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে দলটি উপযুক্ত মনে করছে। এ জাতীয় সরকার পাওয়া গেলে বিএনপি নিশ্চিতভাবে জয়ী হতে পারবে বলে মনে করছে। কারণ তারা জানে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে যারা ভূমিকা রাখবেন, তারা বিএনপির প্রতি মমত্ব আছে, এমন লোক দিয়েই তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করবে, যেন বিএনপির ক্ষমতায় আসাটা কেউ ঠেকাতে না পারে।

বিএনপি-জামায়াতসহ এদের সমমনা দলগুলোর এটাই হলো মনের কথা এবং এটা বাস্তবায়নে তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা ভাবছেন, অন্যটা, তারা মনে করছেন, বিএনপি-জামায়াতসহ এ দুটি দলের সঙ্গে ছোট-খাট যে দলগুলো আছে,  এদের সামনে একটি পথই খোলা আছে, সেটা হলো সংবিধান অনুসারে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। যদি এটা তারা গ্রহণ না করেন, বাঁকা পথে হাঁটার চেষ্টা করেন, তাহলে অস্থিত্ব সংকট চরম হিসেবে দেখা দেবে, যা বিএনপি কোনোভাবেই এড়াতে পারবে না।

দৈনিক সরোবর/এমকে