ঢাকা, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১

নির্বাচন ২০২৭ সালে!

সরোবর প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: মার্চ ১৫, ২০২৫, ০৮:০৩ রাত  

চলতি বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে চাপ দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে আদায় করে নিতে হবে। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, ডিসেম্বরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চাইলে চাপ সৃষ্টি করতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে। তা না হলে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন ২০২৭ সালে টেনে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনায় এগোচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির শীর্ষ নেতা মির্জা আব্বাস বলেন, আন্দোলন করে চাপ দিয়ে নির্বাচন আদায় করা লাগলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। সেইদিকে যাওয়া আমাদের কারো জন্য মঙ্গল হবে না।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেরিতে করতে চাওয়ার মূল কারণ কী, সে সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অবস্থান সুসংহত করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া। এনসিপি মাঠের রাজনীতিতে শক্ত পোক্ত হয়ে উঠতে চেষ্টা করছে। নতুন পার্টি এনসিপিকে সেই সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। 

সরকারের কাছে ছাত্র নেতৃত্বের বিশেষ অনুরোধ রয়েছে বলেও জানিয়েছে নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র। জাতীয় নির্বাচন একটু সময় সাপেক্ষ করে নিতে পারলে মাঠ গোছাতে সময় পাবে এনসিপি।  

খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, এতে গোপনে সায় দিয়েছে জামায়াতে ইসলামীও। জামায়াতও মনে করে, নির্বাচন একটু পিছিয়ে নিতে পারলে দীর্ঘ সময় মাঠের রাজনীতির বাইরে থাকা দলটি আরও গুছিয়ে নিতে সক্ষম হবে। তাই প্রয়োজনীয় সংস্কারকে ইস্যু করে নির্বাচন দেরি করার ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে রয়েছে বর্তমান পরিস্থিতিতে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকা জামায়াতে ইসলামি। 

তারা মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় থাকলেও তাদের রাজনীতির তেমন অসুবিধা ঘটছে না। নানা কৌশলে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে তাদের অনুসারী রয়েছে। ফলে নির্বাচন দেরিতে হলেও বেকায়দায় পড়ার কোনো আশঙ্কা আপাতত জামায়াতের নেই।  

এদিকে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোনো দল বা সংগঠনকে রাজনৈতিক মাঠে শক্তিশালী করে তুলতে নির্বাচন দিতে দেরি করার কোনো মানে হয় না। সরকার এটি করলে তা পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ হবে। তাই দেশের অপর প্রধান রাজনৈতিক শক্তি বিএনপির নির্বাচন পেছানোর ব্যাপারে কঠোর আপত্তি রয়েছে। নির্বাচন ডিসেম্বরে আদায় করার ব্যাপারে প্রয়োজন হলে তারা আন্দোলন সংগঠিত করার কৌশলও গ্রহণ করেছে। কোনোভাবেই ডিসেম্বরের বাইরে নির্বাচন যাক তা চায় না বিএনপি। পাশাপাশি চাপ দিয়ে নির্বাচন আদায় করা সম্ভব কি না তা নিয়ে দলটির ভেতরে বিস্তর গবেষণা চলছে। এজন্য বিএনপি অন্য রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গেও শলাপরামর্শ করতে শুরু করেছে।  

বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলের একাধিক নেতা বলেন, এনসিপি ও জামায়াতকে বাইরে রেখে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা সফল হলে চলতি বছরের এপ্রিল মাসের শেষের দিকে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। দলটির মূল লক্ষ্য চলতি বছর ডিসেম্বরেই যে কোনো মূল্যে নির্বাচন আদায় করে নিতে হবে। তবে জামায়াতের সঙ্গেও বিএনপির একটি অংশ বোঝাপড়া করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে সবকিছুই পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক চাপে পড়তে হবে তা সরকারও মনে রেখেছে। তাই সরকার পরিকল্পনায় রেখেছে চাপ সামাল দেওয়ার নানাবিদ কৌশল। সেসব কৌশলে চাপ সামাল দিতে ব্যর্থ হলে ডিসেম্বরে নির্বাচন দিয়ে দেবে তারা। আর কোনোভাবে চাপ সামলে নিতে পারলে নির্বাচন  ২০২৭ সালে টেনে নিয়ে যাবে ইউনূস সরকার।

এদিকে সম্ভাব্য রাজনৈতিক চাপের বিষয়টি আমলে রেখে নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরে নির্বাচন করার এক ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা গণমাধ্যমে বেশ কয়েকবার জানিয়েছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন করার প্রস্তুতি তারাও রেখেছে।  

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র দাবি করেছে, নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের বেশিরভাগ কর্মকর্তা ডিসেম্বরে নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপির সঙ্গে একটি গোপন ঐক্যমত হয়েছে। সেই জায়গায় বিএনপি একটু এগিয়ে রয়েছে।  

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র ও এনসিপির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করে তারা বিএনপির হাতে মসনদ তুলে দিতে চায় না। এজন্য তারা আন্দোলনও করেনি। অবশ্যই নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ক্ষমতার চেয়ারে বসবে। এজন্য দেরিতে নির্বাচন হলে তারা সুবিধাজনক অবস্থায় যেতে পারবে বলে বিশ্বাস করে এনসিপি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছেন ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা। সে অনুযায়ী নির্বাচন দেবেন এটাই আলোচনার মূল ভিত্তি। চাপ দিতে হবে, আন্দোলন করতে হবে কেন? অন্তর্বর্তী সরকার নিশ্চয়ই সে পথে যাবে না।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকারও চায় আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাওয়ার পরে বিএনপিকে ক্ষমতার চেয়ারে বসানো তাদের লক্ষ্য নয়।

নতুন রাজনৈতিক শক্তির যে উত্থান ঘটেছে, তারাই ক্ষমতায় এলে দেশ নিরাপদ থাকবে। এসব নানান হিসাব সামনে রেখে ইউনূস সরকারও চায় ২০২৭ সালে নির্বাচন টেনে নিতে সামর্থ্য হলে তাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সফল হবে। তা না হলে লেজে-গোবরে হবে সকল পরিকল্পনা।

দৈনিক সরোবর/ইএইচপি