বৈশ্বিক সংকটে সতর্কতা প্রয়োজন
প্রকাশিত: আগস্ট ২৯, ২০২২, ০১:১১ রাত

ফাইল ফটো
করোনা মহামারির পর ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে এক সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এতে বিশ্বের কোন দেশের অর্থনীতির ওপর চাপ পড়েনি বলা মুশকিল। ইউক্রেন যুদ্ধ মূলত রাশিয়া ও ইউরোপ-আমেরিকার মধ্যে ঘটছে। এই যুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সবাই।
করোনার পর ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক দুরবস্থার শিকার হচ্ছে বাংলাদেশ’ বলে দাবি করা হয়েছে ব্রিটিশ পত্রিকা ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে। ঢাকা থেকে বেঞ্জামিন পার্কিন এবং নয়াদিল্লী থেকে জন রিড যৌথভাবে এ নিবন্ধ লিখেছেন।
নিবন্ধটির উল্লেখযোগ্য অংশে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবিলায় সহায়তার জন্য আইএমএফ এর কাছে ঋণের আবেদন করেছেন। এ ফান্ড থেকে ৪.৫ বিলিয়নসহ বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ আরো ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ফলে দেশব্যাপী জনগণ প্রতিবাদ করেছে। বাংলাদেশ সরকার জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য স্কুল ও অফিস সময় কমিয়ে এনেছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সাশ্রয়ে বিলাস দ্রব্যের উপর আমদানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
প্রতিবেদনের এই ভাষ্য স্মরণে নিয়ে বলা যায়, খোদ জ্বালানি সংকটে হাবুডুবু খাচ্ছে ইউরোপের দেশগুলো। ইউক্রেন যুদ্ধ বেধে যাওয়ায় আগে জ্বালানি সংকটের শিকার হয়েছে ইউরোপের দেশগুলোই। বাংলাদেশ ক্রমশ শিল্পোন্নত দেশে পরিণত হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের প্রচুর জ্বালানির প্রয়োজন আছে। সরকার জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় সাধ্যমতো চেষ্টা করছে।
বৈশ্বিক অর্থনীতিক সংকট শুধু বাংলাদেশের ওপর বিরূপ প্রভাব নিয়ে আসেনি, বর্তমানে এমন কোনো দেশ নেই যে এর হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে। তবে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা দিয়ে দেশের অর্থনীতি ঠিকই চাঙা রাখতে পারছেন। করোনার দুই বছরে অনেক অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়লেও বাংলাদেশের অর্থনীতি মজবুত ছিলো এবং এখনও রয়েছে।
ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে এক জায়গায় বলা হয়েছে, ১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশ থেকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন শেষ হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পাকিস্তানের একটি প্রদেশ হিসেবে স্বাধীনতা লাভ করে।
১৯৭১ সালে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে, যা নতুন দেশকে একটি দুর্ভিক্ষের মধ্যে ফেলে দেয়। পরবর্তী দশকগুলোতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। অদক্ষ উৎপাদন ব্যবস্থা বাদ দেওয়া হয়, কর মওকুফ ও বৃহৎ বাজারগুলোতে ডিউটি ফ্রি সুবিধা পায় এবং নারী ও পুরুষের বিশাল কর্মসংস্থান তৈরি হয়।
বৈদেশিক রেমিট্যান্সও পুঁজি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৯১ সাল থেকে দারিদ্র্য ৫৮.৮ শতাংশ থেকে অর্ধেক কমে ২০১৬ সালে ২৪.৩ শতাংশে নেমে আসে, সেইসঙ্গে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেও প্রভূত উন্নয়ন হয়, যার ফলে স্বাক্ষরতা ও শিশু মৃত্যুর হারেও অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের ২৫০০ ডলার মাথাপিচু আয় ভারত ও পাকিস্তানের চেয়েও বেশি।
জাতিসংঘ বাংলাদেশকে ২০২৬ সালের মধ্যে অনুন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত করার পরিকল্পনা করেছে। অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামাল বলেন, অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশ কোথাও ছিলো না, এমনকি মানচিত্রেও না। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে, আমাদের কঠোর প্রচেষ্টার মাধ্যমে। ১৯৮০ দশকের পর থেকে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প দেশের রফতানি খাতে ৪ শতাংশ থেকে বর্তমানে ৮০ শতাংশ অবদান রাখছে, যা দেশের পোশাক শিল্প সমিতির মতে ৫০ বিলিয়ন ডলার।
এখানে অধিকাংশ শ্রমিকই নারী। এটা ঠিক যে আমাদের রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্প ও রেমিট্যান্স আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ডকে চাঙা রাখতে ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর দেশের অর্থনীতিকে চাঙা করে তুলছে। তবে এটা বিষয় পরিষ্কারভাবে বলা দরকার যে পত্রিকা ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনের মূল সুরটি হলো বৈশ্বিক অর্থনৈতিক দুরবস্থায় বহু দেশ এর শিকার। বাংলাদেশ শিকার হলেও সক্ষমতা আছে তা মোকাবিলা করার। বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতির নতুন করে মন্দার কবলে পড়ায় আইএমএফ এর কাছে ৯১টি দেশ ঋণের জন্য আবেদন করেছে।
আইএমএফ এর ঋণ বাংলাদেশ পেলে বাংলাদেশের অগ্রগতি ধরে রাখা সহজ হবে। এরই মধ্যে আইএমএফ বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনীতির বাস্তব প্রেক্ষাপট নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে। যারা উচুগলায় বলছে, শ্রীলংকার দশা হবে বাংলাদেশের, এটি পুরোপুরি নাকচ করে দিয়েছে আইএমএফ। বর্তমানে দেশের জ্বালানি তেল ও গ্যাসের সংকট মোকাবিলায় দেশিও কূপ থেকে বেশি পরিমাণ গ্যাস উত্তোলনের চেষ্টা চালাচ্ছে। এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন বিশ্ব তেলের বাজার থেকে তেল ক্রয় করে জ্বালানি তেল সংকট মোচনের।
এ দিকে জ্বালানি তেল সংকটে যে উদ্ভূত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এ নিয়ে বিএনপি-জামায়াতসহ গণতন্ত্র মঞ্চ দেশের মানুষকে খেপিয়ে তোলার চেষ্টা করছে। নিত্যপণ্যের দাম চড়া এটাকে ইস্যু করে মাঠ গরম করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সরকার সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখায় সক্ষম এটা জোর দিয়ে বলা যায়। জ্বালানি তেলের সংকট সরকার দ্রুতই সমাধানের পথ খুঁজে পাবে বলে আশা করা যায়। তখন আর বিএনপি-জামায়াত ও গণতন্ত্র মঞ্চের কোনো রাজনৈতিক ইস্যু থাকবে না।
দৈনিক সরোবর/এমকে