সব ধরনের সংহিসতা রোধে ত্বরিত ব্যবস্থা নিন
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪, ১১:১২ দুপুর

এ দেশে বিভিন্ন জায়গায় নারীর ওপর সহিংসতা হয়েছে এবং হচ্ছে। গণমাধ্যমে এসব খবর খুব বেশি প্রকাশ পায় না। হয়তো তথ্যের সূত্র ও সঠিকতা যাচাইয়ের সুযোগ নেই, এ কারণে খররের শিরোনাম হয় না এসব সহিংসতা। সম্প্রতি কক্সবাজারে নারী হেনস্তার বেশ কয়েকটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। একদল লোকের ভিড়ে একজন নারী। তিনি কান ধরে উঠবস করছেন। আশপাশ থেকে বিভিন্নজন তাকে বাজে গালি দিচ্ছে। কেউ কেউ বলছে, ‘কান ধর...।’ শুধু তাই নয়, সেই নারীকে মারাও হচ্ছে। একজন ব্যক্তি একটি কাঠের টুকরো দিয়ে সেই নারীকে বারবার আঘাত করছে। এমন আরেকটি ভিডিও থেকে দেখা গেছে, সমুদ্রসৈকতে বিচ চেয়ারে বসা এক নারী। সেখানে একদল যুবক হঠাৎ করে ঘিরে ফেলেছে তাকে। ধমকের সুরে জিজ্ঞাসা করছে, ‘এখানে কী করেন? মহিলা মানুষ রাত ১২টায় এখানে কেন?’ বলতে বলতে মারার ভঙ্গি করলে পেছন থেকে আরেকজন বলে ওঠে, ‘ক্যালানি দিতে দিতে আসতেসি, বুঝতে পারসেন? ক্যালানি খাবেন? ছলে যান ছলে যান।’ আরেকজন বলে, ‘পুরা বিচের পরিবেশ এরা নষ্ট করে ফেলল।’ তারপর গালাগালি করছে এবং সেখান থেকে উঠে চলে যেতে একভাবে জোর গলায় নির্দেশ দিচ্ছে। এর পরের ভিডিওটি ওই নারীর সবার সামনে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার। সেখানে ‘কড়াই’ রেস্টুরেন্টের সামনে একটি ঘরে কয়েকজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। এক নারী এসে ভয়ার্তভাবে তার মোবাইল ফোনটি ফেরত চাচ্ছেন। তিনি অনেক বেশি ভীত ছিলেন, কারণ তাকে মারধর করা সেই লাঠিয়াল তাঁর পাশেই ছিল। তিনি সেখানে উপস্থিত সবার কাছে মাফ চাচ্ছেন এবং আকুতি জানাচ্ছেন, তাঁর মোবাইল ফেরত দিলে তিনি টিকিট কেটে এলাকা ত্যাগ করবেন। তবে আশার কথা, সেই লাঠিয়ালকে গ্রেপ্তার হয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। আমাদের বিশ্বাস, নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার হবেন। তবে নারীবিদ্বেষের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের ঘোষণা তাদের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আসেনি। আমাদের মনে রাখতে হবে, ব্যক্তিপর্যায়ে হস্তক্ষেপে আসামি গ্রেপ্তার গত সরকারও কোনো কোনো ক্ষেত্রে করেছে। কিন্তু এটি কোনোভাবেই নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা বিষয়ে সরকারের কঠোর অবস্থান বলা যাবে না। এ কারণে নির্যাতক গ্রেপ্তার হলেও এসব ঘটনা আর ঘটবে না, সেটির নিশ্চয়তা কোনোভাবেই মেলে না।
বলার অপেক্ষা রাখে না, গণঅভ্যুত্থানের পর এখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সচল হতে দেখা যাচ্ছে না। তাই বর্তমান সরকার এ বিষয়ে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। জনগণের অনেক আশা তাদের কাছে। যে কোনো ধরনের সংহিসতায় রাষ্ট্রের অবস্থান ও ত্বরিত পদক্ষেপ দরকার। নারীর বিরুদ্ধে সব অত্যাচার বিষয়ে অতিজরুরি পদক্ষেপই এ মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এছাড়া অত্যাচারকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা, সব ধরনের সংহিসতা রোধে ত্বরিত ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ।
দৈনিক সরোবর/কেএমএএ