ঢাকা, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১

মধুর জিআই সনদ 

সংশ্লিষ্টরা দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নিন

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২৪, ০৮:৫৮ রাত  

টাঙ্গাইল শাড়ির পর এবার সুন্দরবনের মধুর আন্তর্জাতিক ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই সনদ নিয়ে গেছে ভারত। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বহীনতা বা উদাসীনতার কারণে এককভাবে এ সনদ নিয়েছে দেশটি। অথচ সুন্দরবনের আয়তন ও মধু উৎপাদনের সিংহভাগ বাংলাদেশের অধীনে থাকা সত্ত্বেও নিজেদের পণ্য হিসেবে মধুর জিআই সনদ পায়নি বাংলাদেশ। টাঙ্গাইল শাড়ির বিষয়টির সুরাহার হওয়ার আগে নতুন করে সুন্দরবনের মধু জিআই সনদ নিয়ে গেছে ভারত। এটি আরও উদ্বেগের বিষয়। গত ১৬ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বন বিভাগের একটি টুইটের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় সুন্দরবনের মধুর জিআই সনদ ভারতের। তাই ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে জিআইর সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশের সম্ভাব্য উপায়গুলো খুঁজে বের করতে হবে। ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন ২০২১ সালের ১২ জুলাই সুন্দরবনের মধুর জিআই সনদের জন্য আবেদন করেছিল। চলতি বছরের ২ জানুয়ারি জিআই পণ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে ভারত। 

বলাল অপেক্ষা রাখে না, সুন্দরবনের বেশিরভাগ ভূখণ্ড বাংলাদেশের মধ্যে রয়েছে। তাই বাংলাদেশই সুন্দরবনের মধু আহরণকারী দেশ। বছরে প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ টন মধু বন থেকে আহরণ করা হয়। কিন্তু সুন্দরবনের মধু ভারতের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। মূলত সরকারের গুরুত্বহীনতার কারণে এ সনদ বাংলাদেশের হাতছাড়া হয়েছে। বাংলাদেশের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক বিভাগ (ডিপিডিটি) এ বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ৩১টি জিআই পণ্য তালিকাভুক্ত করেছে। এই তালিকায় সুন্দরবনের মধু অন্তর্ভুক্ত নেই। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, ২০১৭ সালের ৭ আগস্ট বাগেরহাট জেলা প্রশাসন সুন্দরবনের মধুকে জিআই সনদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। কিন্তু গত সাত বছরে এর কোনো উন্নয়ন হয়নি। দেশের প্রশাসনিক অবহেলার কারণে এটি অর্জিত হয়নি। তা একটি বিস্ময়কর ঘটনা। জিআই সনদের জন্য পণ্যগুলোর একটি পূর্ণাঙ্গ এবং পর্যাপ্ত একটি তালিকা করা দরকার। এছাড়া একটি আইনি কাঠামো করতে হবে। সুন্দরবনের মধু নিয়ে যে সংকট দেখা দিয়েছে, তা দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে সমাধান করা উচিত; যাতে উভয় দেশই এর সুফল পেতে পারে। ঐতিহ্যবাহী পণ্যগুলোর জিআই সনদ না পেলে সেগুলোকে কখনোই নিজেদের পণ্য বলে দাবি করা যায় না। 

আমরা জানি, কোনো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল বা জনগোষ্ঠীর কোনো সংস্কৃতি যদি পণ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখে; তাহলে ওই পণ্য ওই অঞ্চলের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এর একটি বাণিজ্যিক গুরুত্বও আছে। তাই মেধাস্বত্বকে ধরে না রাখলে অন্যরা সুযোগ নেবে। দেশের পণ্যের ক্ষেত্রে কেন এমন হচ্ছে, এই অবহেলার দায়িত্ব কে নেবেন? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার সময় এখনই। আমরা মরন করি, মধুর বাজারে আগামীতে প্রতিযোগিতা কঠিন হবে। ভারতের বাজার অনেক বড়। তাদের উৎপাদন খরচও অনেক কম হয়। দেশের যেগুলো পণ্য আছে, তা জিআইয়ের অধীন আনার জন্য অতি সত্ত্বর কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা।