ঢাকা, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতিতে বাড়ছে উদ্বেগ

সরোবর ডেস্ক

 প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫, ০৭:২৫ বিকাল  

গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ‘কোর’ ভোক্তা মূল্যসূচক (যা খাদ্য ও জ্বালানির মতো অস্থির মূল্যকে বাদ দেয়) বার্ষিক হারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী ল্যারি সামার্স একে ‘বাইডেন প্রশাসনের শুরুর দিকের পর মূল্যস্ফীতি নীতির জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময়’ বলে অভিহিত করেছেন। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রাস্ফীতি চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল।

ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে ফেরার পর থেকে ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের সংবাদ সম্মেলনগুলো তুলনামূলকভাবে কম আলোচিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যান ফের বিষয়টিকে সামনে এনেছে।

এর চেয়েও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, মার্কিন জনগণও ভবিষ্যতে উচ্চ মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা করতে শুরু করেছে। ফেব্রুয়ারিতে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোক্তা জরিপ অনুযায়ী, আগামী এক বছরে মূল্যস্ফীতির গড় প্রত্যাশিত হার ৪ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছেছে। ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এই হার ১ দশমিক ৭ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে, যা ১৯৭৯ সালের পর সর্বোচ্চ ত্রৈমাসিক উত্থান। বাজারও একই ইঙ্গিত দিচ্ছে—নভেম্বর থেকে এক ও দুই বছরের ব্রেকইভেন মূল্যস্ফীতির হার যথাক্রমে ১ দশমিক ৭ ও ০ দশমিক ৮ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে।

পরিস্থিতির কারণ কী?: বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকি ভোক্তাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা বাড়িয়েছে।

মিশিগান ইউনিভার্সিটির সাম্প্রতিক এক জরিপ বলছে, মূল্যস্ফীতির প্রত্যাশা নিয়ে মানুষের মধ্যে মতপার্থক্য ১৯৮০ সালের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ট্রাম্প যখন বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি স্বল্পমেয়াদে কিছুটা বাড়তে পারে,’ তখন অনেক মার্কিন নাগরিক তা গুরুত্বসহকারে নিচ্ছেন। যারা শুল্ক আরোপের বিরোধিতা করছেন, তারা আগামী এক বছরে মূল্যস্ফীতি প্রায় ৫ শতাংশ হবে বলে মনে করছেন, যা গড় প্রত্যাশিত হারকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন, মূল্যস্ফীতির প্রত্যাশা বৃদ্ধি পেলে তা বাস্তবে রূপ নিতে পারে। শ্রমিকরা যখন ভবিষ্যতে উচ্চ ব্যয়ের আশঙ্কা করেন, তখন তারা বেশি বেতন দাবি করেন, যা মূল্যস্ফীতির চক্রকে বাড়িয়ে তোলে।

ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা: এই পরিস্থিতির ওপর নিবিড় নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সংস্থাটির ডালাস শাখার সভাপতি লরি লোগান সতর্ক করে বলেছেন, মূল্যস্ফীতির প্রত্যাশা যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন মূল্য স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে বড় অর্থনৈতিক দাম দিতে হয়।

তবে দীর্ঘমেয়াদে মূল্যস্ফীতির হার কতটা বাড়তে পারে, তা নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক বিভাজনও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ডেমোক্র্যাটরা আগামী পাঁচ বছরে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৪ দশমিক ২ শতাংশ হবে বলে মনে করছেন, যা বাজারের অন্যান্য পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, অর্থনৈতিক নীতিতে অস্থিরতা থাকলে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা কঠিন হয়ে উঠতে পারে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিগুলো যদি বাজারে অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে তোলে, তাহলে তা মূল্যস্ফীতির ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

দৈনিক সরোবর/এএস