দাম নির্ধারণ ২৯ পণ্যের
ব্যবসায়ীদের তোয়াজ না করে কঠোর হোন
প্রকাশিত: মার্চ ১৮, ২০২৪, ০৮:৪৭ রাত

পণ্যের বাজার নিয়ে হতাশাই বিরাজ করছে সাধারণ মানুষের মনে। রোজায় পণ্যের দাম কমার বদলে ঊর্ধ্বমুখী। রোজা শুরু হওয়ার আগে থেকেই সরকার কোমর বেঁধে মাঠে নামে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। মন্ত্রী, সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের বাজার নিয়ন্ত্রণে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কড়া নির্দেশ দেন। ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বৃদ্ধি করলের ছাড় দেয়া হবে বলে সরকার পরিষ্কার জানিয়ে দেয়। এরপরও দেখা যাচ্ছে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না। মনে হয়, ব্যবসায়ীরা জোট বেঁধেছে ইচ্ছামতো পণ্য বিক্রি করার জন্য। সরকারের কথা তারা কানে তুলছে না। এমতাবস্থায় সরকার কী ব্যবস্থা নেবে, তা আমরা জানি না। এদিকে মনিটরিং ব্যবস্থা বরবরই দুর্বল ছিল, এখনো বিদ্যমান। অভিযোগ আছে বাজার মনিটর যারা করেন, তারা ব্যবসায়ীদের পকেটে চলে যান। ব্যবসায়ীরা তাদের ম্যানেজ করে ফেলেন। তাই বাজার মনিটরিংকে শক্ত অবস্থায় কখনো দেখা যায়নি।
সরকারের কাছে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। কারণ সরকার ২৯ পণ্যের দাম বেঁেধ দিয়েছে। বেঁধে দেয়া দামে ব্যবসায়ীরা পণ্য বিক্রি করছেন না। সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শি একবার বলেছিলেন, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর হলে বাজার আরও অবনতি হবে। নতুন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী কী বলবেন, তা আমরা জানি না। আসলে একটি সত্য কথা হলো, দেশের ব্যবসায়ীদের তোয়াজ করে চলায় তারা মাথায় উঠেছে। মাথা থেকে তাদের নামাতে হলে সরকারকে কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই। এ মুহূর্তে সরকারের সামনে একমাত্র চ্যালেঞ্জ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ। সরকার যদি এতে ব্যর্থ হয়, তাহলের বিরুদ্ধপক্ষ সমালোচনার বাণ ছুঁড়তে পিছু হটবে না। তাই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যত চ্যালেঞ্জেরই হোক, এতে সরকারকে সফল হতে হবে। ১৭ মার্চ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আগের মতোই বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব পণ্য। সরকারের বেঁধে দেয়া দামে বাজারে কোনো পণ্যই মিলছে না। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাধারণ মানুষ। ক্ষুব্ধ ক্রেতারা বলছেন, শুধু দাম নির্ধারণ করে দিয়েই দায় সারছে সরকার। দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানতে সরকার শুধু কঠোর হুঁশিয়ারির কথা বলে। অথচ এর প্রয়োগ নেই বাজারে। নিয়মিত তদারকি বৃদ্ধি করা, প্রয়োজনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আরও সক্রিয়ভাবে বাজার মনিটরিংয়ে নামানোর দাবি জানান তারা।
নিত্যপণ্য নিয়ে ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফা পকেটস্থ করার যে খায়েশ, তা বন্ধ করার জন্য সরকারের সাঁড়াশি অভিযান চালাতে হবে। বাজার মনিটরিং কেন দুর্বল, তা বিবেচনায় নিতে হবে। সরকারের যেসব ব্যক্তি বাজার মনিটর করেন, তাদের ওপরও নজরদারি প্রয়োজন। ভোক্তা অধিকার দপ্তরসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজির ফলে পণ্যের দাম কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এটি সরকারকে গুরুত্ব সহকারে চিন্তা করতে হবে। পণ্য পরিবহনে রেলপথকে ব্যাপকভিত্তিকে ব্যবহারের উদ্যোগ সময়ের দাবি। সরকার রেলপথ যথেষ্ট উন্নত করেছে। তাই রেলপথে পণ্য আনা-নেয়ার কাজটি যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে করা যায়। পণ্যের দাম যে একটি কারণেই বাড়ে, এমন নয়; বহু কারণ যুক্ত। সব কারণ খতিয়ে দেখে এর সামাধানে সরকারকে এগোতে হবে। তবেই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।