বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক অংশীদারিত্বমূলক
প্রকাশিত: মে ২৬, ২০২৩, ০৬:৩৮ বিকাল

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করে কোনো কোনো দল বিদেশি কূটনীতিদের কাছে বার বার যাওয়ার ঘটনা নিয়ে কিছুদিন ধরেই নানা সংবাদ মাধ্যমে আলোচনা হয়ে আসছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এতে কেমনটা হবে তা নিয়েই মূলত আলোচনা হচ্ছে।
কয়েক মাস বাকি আছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের। এই সময়ে এসে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে এক দফা আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। অর্থ্যাৎ সরকারের পতন ঘটিয়ে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলন তীব্র করার চেষ্টার ঘোষণা দিয়েছে। এতে আগামীতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন স্বাভাবিকভাবে মারমুখী হয়ে উঠার সম্ভাবনাই সবাই দেখছেন।
তবে এসব ছাপিয়ে আর একটি বিষয়, যেটি আলোচনায় বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। সেটি হচ্ছে, একটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র আবারও নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা নিশ্চিতভাবে দিচ্ছেই, এটি অবশ্য জোর দিয়ে সংবাদ মাধ্যমটি কিছু বলেনি।
এ খবরের প্রতিক্রিয়া হিসেবে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, যুক্তরাষ্ট কখন কোন দেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়, সেটা তারাই জানে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আবারো নিষেজ্ঞা দিচ্ছে এমন খবরক অনেকে গুজব হিসেবেও ব্যক্ত করেছেন। ফের বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতাও নেই। তারপরও সংবাদমাধ্যমের খবরটি প্রতিক্রিয়া হিসেবে অনেকেই অনেক কথা বলছেন। এতে বিএনপির নেতারাও বাদ যাননি। দলটির নেতারা তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরছেন।
অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বর্তমানে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের সেরা বিশ্বনেতাদের একজন। তিনি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলছেন তা নয়, বিশ্বের অন্যান্য শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গেও সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলছে। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতির আলোকেই বতমানে পররাষ্ট্রনীতির কাঠামোকে গড়ে তুলছেন, কারোর সঙ্গে শক্রতা নয়, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব। ফলে যুক্তরাষ্ট্র ফের বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেওয়ার মতো কাজ একদিকে যেমন করবে না, অন্যদিকে বর্তমান সরকার তার বিচক্ষণ পররাষ্ট্রনীতির সুফল সবসময় যেমন পেয়ে আসছে, ভবিষ্যতেও পাবে।
রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা মনে করেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরেই নানা ধরনের ঘটনার জন্ম নিচ্ছে। যারা বলছেন, বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার জন্য বিদেশি কোনো কোনো দেশ নেপথ্যে ও প্রকাশ্যে নানা কূটচাল ও কূটনীতির আশ্রয় নিতে পারে। এই দেশগুলোর মধ্যে কোনো কোনো দেশ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারের ওপর নানা অন্যায় চাপও সৃষ্টির প্রয়াস নিতে পারে এবং তা দৃশ্যমানও হতে পারে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সম্পর্কটি কেমন, এর নানা ব্যাখা নানান জন দেওয়ার চেষ্টা করছে। আর সম্পর্কটি উঠে এসেছে মূলত আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরেই।
কিছুদিন আগেও সবার বদ্ধমূল ধারণা ছিলো যুক্তরাষ্ট্র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে সরাসরি সমর্থন জানাবে। তবে এ ব্যাপারে সর্বশেষ যুত্তরাষ্ট্রের অবস্থান জানা গেছে। সেটি হলো- স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র মেহন মেডেলিন সম্প্রতি জানিয়েছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র কখনোই কোনো প্রার্থী বা রাজনৈতিক দলকে অন্যের বিরুদ্ধে সমর্থন দেয় না। আমরা একে অপরের ব্যাপারে কথা বলতে বন্ধুত্ব এবং অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্ককে সততার সঙ্গে এবং আমাদের (বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র) দৃঢ় সম্পর্ককে বিবেচনা করে থাকি।’
দেখা যাচ্ছে- আমেরিকার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে বিশ্বে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এক নম্বরে অবস্থানকারী যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ বিশাল পরিমাণ রপ্তানি করে। সংখ্যার হিসাবে গত অর্থবছর বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ১ হাজার ১১৭ কোটি ডলারের পণ্য, বিপরীতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানি করেছে ২৮৩ কোটি ডলারের। রপ্তানিতে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। গত অর্থবছর মোট রপ্তানি আয়ের ২০ শতাংশ এসেছে দেশটি থেকে। জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, যুক্তরাজ্যের তুলনায় আমেরিকায় রপ্তানিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হয়েছে গত অর্থবছরে। পাশাপাশি সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগেরও ২০ শতাংশের বেশি আমেরিকানদের।
পরিশেষে আমরা বলবো, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে দেশের বুদ্ধিজীবী শ্রেণি থেকে সরকারের প্রতিপক্ষ রাজনীতিবিদরা তাদের নিজস্ব দৃষ্টির মধ্যে আবদ্ধ থাকলেও, একটি বিষয় পরিষ্কার তাহলো-বাস্তবে শেখ হাসিনা সরকারের বিস্ময়কর সাফল্য উন্নতি যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্বের কাছে চমক সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে তা না বললেও চলে। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক যে ভালো তা ব্যবসা-বাণিজ্যই প্রমাণ করে।
দৈনিক সরোবর/আরএস