ঢাকা, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১

আরপিও সংশোধন সময়োপযোগী

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: মে ২২, ২০২৩, ০৭:৩৩ বিকাল  

ফাইল ফটো

দেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় দ্রুতই ঘনিয়ে আসছে। এই নির্বাচন অনির্বাচিত সরকারের অধীনে হওয়ার সুযোগ নেই।  বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে বলে বৃহস্পতিবার (১৮ মে) পাবনায় চারদিনের সফর শেষে ঢাকায় ফেরার আগে এ বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। রাষ্ট্রপতির এ ঘোষণায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিভাবে হবে এটা নিয়ে যারা জল্পনায় ছিলেন তার নির্ঘাত অবসান হলো। 

অন্যদিকে বলা যায়, যারা হয়তো ইতোমধ্যেই ভেবে ছিলো, একপক্ষ তত্ত্বাধায়ক সরকারের দাবি জানিয়ে আসছে এবং পক্ষটি নির্বাচন কমিশন (ইসি) সাংবিধান অনুযায়ী গঠন হওয়া থেকে শুরু করে পূর্বাপর ইসি বিষয়ে কোনো উৎসাহ দেখায়নি। ইসি গঠন হওয়ার পরেও পক্ষটিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু ও অবাধ করা যায় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য ডাকলেও তাতে সাড়া দেয়নি। পক্ষটির একটিই বক্তব্য ছিলো এবং এখনও আছে যে তারা তত্ত্বাধায়ক সরকারের দাবি পূরণ করা নিয়েই ভাবছে, এ মুহূর্তে ইসির বিষয় নিয়ে কিছু ভাবছে না। 

এ পক্ষটির এ ধরনের চিন্তাই সব নয়। কারণ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ আরো নানা পক্ষ আছে; যারা তত্ত্বাধায়ক সরকারের দাবির পক্ষে নেই। এটি মৃত একটি ব্যবস্থা। ফলে এর জ্যান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাংলাদেশে আর কখনো ঘটবে না, এটাই ভাবা হচ্ছে। 

সংবিধান অনুসারে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে যখন পাবনায় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন রাখঢাক না রেখে পরিষ্কার ভাষায় জাতিকে জানিয়ে দিয়েছেন। অনির্বাচিত সরকারের সুযোগ নেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার অর্থ্যাৎ অনির্বাচিত সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হচ্ছেন না এবং এ নিয়ে জল্পনাকারীদের এ নিয়ে জল্পনা করার সুযোগ থাকলো না। 

এখন বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হওযার উপরই গুরুত্ব দিয়ে আসছে। এসব দেশও তত্ত্বাধায়ক  সরকারের ব্যাপারে উচ্চবাচ্য করেনি। করার এখতিয়ারও তাদের নেই। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে যা আছে তা দেশটির সরকারসহ অন্যরা মানতে বাধ্য। বাংলাদেশের সংবিধানে যা আছে তা বাংলাদেশের সরকারসহ বাংলাদেশের অন্যরা মানতে বাধ্য। বাইরের কোনো দেশ অন্য কেনো দেশের সংবিধানের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে পারে না। 

দেশের  আগামী জাতীয়   সংসদ নির্বাচনের যখন সময় বেশি নেই তখন নির্বাচন কমিশনের (ইসি)  প্রতি  সবার মনোযোগ আকর্ষিত হবে এটাই স্বাভাবিক এবং হচ্ছেও। ইসি নির্বাচন সুষ্ঠু করার ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে আছে। ইসি সুষ্ঠু নির্বাচন করার ব্যাপারটি সবাইকে দেখাতে চায়। তার জন্যও ইসি আরপিওর কিছু পরিবর্তন চেয়েছিলো, তার কিছু পরিবর্তন ও বিধান যুক্ত করেছে মন্ত্রীসভা। 

জানা গেছে, বৈধভাবে সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকের নির্বাচন কেন্দ্রে প্রবেশে ও কাজে যে কেউ বাধা দিলে দুই থেকে সাত বছরের সাজার বিধান রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত গণপ্রতিনিধিত্ব আইনে (আরপিও)। বৃহস্পতিবার (১৮ মে) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মন্ত্রিসভাকক্ষে মন্ত্রিপরিষদের সাপ্তাহিক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন। এ ছাড়া কোনও কেন্দ্রে অনিয়ম ঘটলে পুরো আসনের নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা পাচ্ছে না নির্বাচন কমিশন বলে তিনি জানান, ইসির এ সংক্রান্ত প্রস্তাব সংশোধন করে গণপ্রতিনিধিত্ব আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে গুরুত্ব পেয়েছে ইসির নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা নিয়ে। কোনো কেন্দ্রে অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা হলে ইসি নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা চেয়ে প্রস্তাব দিয়েছিল। গেজেট প্রকাশের পরও সেই ক্ষমতা চেয়েছিল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। ইসির প্রস্তাবে রাজি নয় মন্ত্রিসভা। পুরো আসন নয়, শুধু এক বা একাধিক কেন্দ্রের নির্বাচন বন্ধ বা বাতিল করতে পারবে ইসি। সবদিক বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলাভিত্তিক নন, আসনভিত্তিক করার বিধানও যুক্ত হয়েছে সংশোধনীতে।

জাতীয় নির্বাচনের সময় আর বেশি নেই। এর আগেই সংশোধিত হচ্ছে গণপ্রতিনিধিত্ব আইনের (আরপিও) কয়েকটি ধারা, জানান তিনি।

এ ছাড়া মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন কৃষি ও ক্ষুদ্রঋণ এবং বিলখেলাপিরা তাদের খেলাপি টাকা পরিশোধ করলেই নির্বাচনে প্রার্থী হতে সুযোগ রাখা হয়েছে সংশোধনীতে। বিদ্যমান আইনে সাত দিন আগে এসব পরিশোধের বিধান রয়েছে। মাহবুব হোসেন বলেন, আরপিওতে যুক্ত হচ্ছে আরও কিছু নতুন ধারা। 

আরপিওতে কিছু বিধান যুক্ত করায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করায় অবদান রাখবে। যেসব পক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে সোচ্চার তাদের অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট উপহার দিতে ভূমিকা রাখবে।

দৈনিক সরোবর/আরএস