ইসলামের মর্মবাণী প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করবে মডেল মসজিদ
প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০২৩, ০২:৪১ রাত

সম্প্রতিককালে আমরা দেখেছি দেশের সম্প্রতি নষ্টে নানা অপশক্তি কতটা সক্রিয়। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হলো, ধর্মকে পুঁজি করে এক শ্রেণির ব্যক্তি ব্যবসার ফাঁদ পেতে বসে আছে। তারা ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহার করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এরাই মূলত: দেশে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়েছে। এরা বেশ সুসংগঠিত ও শক্তিশালীও বটে। দেশের কিছু রাজনৈতিক দল এদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলার চেষ্টা করে এবং নিজেদের রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধিতে এদের কাজে লাগায়। এই অবস্থার অবসান কবে হবে আমরা জানি না।
তবে দেশের মানুষ সব ধর্মের সহাবস্থান পছন্দ করে। তারা ধর্মীয় কুপমন্ডুতাকে প্রশ্রয় দিতে রাজি নয়।
সরকার দেশে মডেল মসজিদ তৈরির বড় একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রত্যেকটি মসজিদ দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ উদ্যোগকে দেশের মানুষকে প্রীত করবে, আনন্দে ভাসিয়ে নেবে। যারা গলা ফাটিয়ে বলার চেষ্টা করে তারা ধর্মের জন্য জান কুরবান করতে পারে, তাদের অনেকের কর্মকান্ড সাম্প্রদায়িক ঝান্ডা উড্ডীন দেখে শংকিত হয়েছে অনেকে। তাদের এই মনোভাবের পরিবর্তন হয়নি। এ বিষয়টি আমলে নিয়ে বলা বর্তমান সরকার মডেল মসজিদ নির্মাণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
সোমবার (১৭ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে চতুর্থ ধাপে সারা দেশে ৫০টি মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেন। এ সময়ে তিনি বলেন, সম্প্রীতি বজায় রেখে প্রত্যেকে যার যার ধর্ম পালন করবেন। অন্য ধর্মের প্রতি আমাদের সহনশীল আচরণ করতে হবে। আমাদের এই ভূখন্ডে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবারই সমান অধিকার আছে যার যার ধর্ম পালন করার। কাজেই অন্যের ধর্মে আঘাত দেওয়া মোটেই সমীচীন নয়। ইসলাম আমাদের সেই শিক্ষা দেয়নি। সেই কথাটি আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে। পবিত্র ইসলাম ধর্মকে কেউ যেন কলুষিত কতে না পারে সেদিকে ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও আলেম-ওলামাদের দৃষ্টি দিতে হবে।
তিনি বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২১ সালে প্রথম পর্যায়ে ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করি। ইসলাম ধর্মে সঠিক চর্চাটা যাতে হয় এবং ইসলাম ধর্মের মর্মবাণীটা মানুষ যাতে সঠিকভাবে জানতে, বুঝতে ও গ্রহণ করতে পারে সেই লক্ষ্যে এটা করা হয়েছে। এই মসজিদগুলোতে মুসলি¬দের নামাজের ব্যবস্থা, ধর্মীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। দ্বীনি দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধাদি সৃষ্টি। বিশেষ করে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ এবং সরকারের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার নীতি নির্ধারণী বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি আমাদের লক্ষ্য।
নারীদের জন্য এখানে আলাদা নামাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিবন্ধীরাও যাতে করে যেতে পারেন, সেজন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোরআন চর্চার জন্য হেফজখানা, হজ্বযাত্রী ও ইমামদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং জ্ঞান চর্চায় ইসলামিক লাইব্রেরির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পৃথক কমপ্লেক্সে ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে থাকবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জেলা উপজেলা পর্যায়ের অফিস কনফারেন্স হল বই বিক্রয় কেন্দ্র, গবেষণা কক্ষ, প্রতিবন্ধী কর্নার, হজযাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধন কেন্দ্র ও দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আবাসনের সুব্যবস্থা এসব মসজিদে রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, দেশজুড়ে ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য ৫৬৪টির মধ্যে এ পর্যন্ত ২০০ মসজিদ উদ্বোধন করলেন। এর আগে তিনি প্রথম দফায় ২০২১ সালের ১০ জুন ৫০টি মসজিদ, চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় আরও ৫০টি এবং তৃতীয় দফায় ১৬ মার্চ আরও ৫০টি মসজিদ উদ্বোধন করেন। অবশিষ্ট মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ ২০২৪ সালের জুন নাগাদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। দেশব্যাপী মডেল মসজিদ ইসলামের মর্মবাণী পৌঁছে দিতে বড় ভূমিকা পালন করবে। সরকার মডেল মসজিদ নির্মাণের মধ্যদিয়ে ইসলামের খেদমতগার হিসেবে উৎসর্গকৃত প্রাণ, এটা তুলে ধরতে মোটেই কার্পণ্য করেনি।
দৈনিক সরোবর/ আরএস