বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বেও নতুন মাইলফলক
প্রকাশিত: মার্চ ২১, ২০২৩, ০৮:১৯ রাত

ইউক্রেনে রাশিয়া আগ্রাসন চালানোর ফলে বিশ্বে জ্বালানি তেলের সংকট ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। জ্বালানি ছাড়া বিশ্ব এক মুহূর্তে চলতে পারে না। অথচ নানা নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে রাশিয়ার জ্বালানি তেল সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়ার তেলের ওপর বেশ নির্ভরশীল। ইউরোপ পড়েছে মহাবিপদে। বিশ্বের অন্য দেশগুলোর অবস্থাও সংকটাপন্ন; যা ইউক্রেন যুদ্ধের আগে দেখা যায়নি।
বাংলাদেশও জ্বালানি তেলের সংকটে পড়েছে। অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখতে জ্বালানি সংকট দ্রুত সমাধান দাবি রাখে। কিছুদিন আগে দেশের ব্যবসায়ী সমাজ সরকারকে জ্বালানি তেলের সংকট দূর করার জন্য বাস্তবমুখী উদ্যোগ নিতে বলে।
সরকার অবশ্য বসে নেই। দেশের অর্থনীতিকে চাঙা রাখার স্বার্থে জ্বালানি তেলের সমস্যার সমাধান করতে হবে।
দেখা গেছে, জ্বালানি তেলের সংকট সুরাহা করার লক্ষ্যে সরকার নানাভাবে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। জ্বালানিসমৃদ্ধ দেশের কাছ থেকে জ্বালানি আনার ব্যাপারে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতার সফর করে এসেছেন। এ সফরের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল গ্যাস ও জ্বালানি তেল আমদানির বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া। কাতার সরকারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো। বিশ্বে কাতার গ্যাস ও জ্বালানি তেল সমৃদ্ধ একটি দেশ। মোট কথা নানা উৎস থেকে সরকার জ্বালানি তেল আনার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে পা ফেলছে।
ভারত থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে তেল আনা শুরু হয়েছে। এ কাজটি শেখ হাসিনা সরকার বেশ আগেই শুরু করে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব, এ সম্পর্কের ভিত্তি খুবই শক্ত।
এমতাবস্থায় ভারত পাইপ লাইনের মাধ্যমে আমাদের জ্বালানি তেল দেওয়ার ঘটনা ছোট ঘটনা নয়। এটি বড় একটি ঘটনা এবং এ জন্য অবশ্যই ভারতের কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতা থাকবে।
জানা গেছে, দ্বিপক্ষীয় বোঝাপড়া আরো নিবিড় করল ঢাকা এবং নয়াদিল্লি। গত শনিবার বিকালে ‘বন্ধুত্বে’র (ফ্রেন্ডশিপ) পাইপলাইনের সূচনা করলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
পাইপলাইনটি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ভারত থেকে পাইপলাইনে বাংলাদেশে তেল আসা শুরু হলো। এই প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছিল ৩৭৭ কোটি টাকা। তার মধ্যে ২৮৫ কোটি টাকা খরচ করা হয় শুধু বাংলাদেশের দিকে পাইপলাইন নির্মাণের জন্যই। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে পরিশোধিত ডিজেল পৌঁছবে বাংলাদেশের উত্তরের ৭টি জেলায়। ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে এই প্রথম পাইপলাইন সংযোগ চালু হলো।
‘ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনকে’ দুই দেশের জন্য একটি মাইলফলক অর্জন বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর প্রকল্পের সূচনা করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এটি বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তার পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে। বাংলাদেশ-ভারত পাইপলাইনের মতো আগামী দিনেও আরো সফলতা উদযাপন করবে দু’দেশ।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে যখন বিশ্বের অনেক দেশ জ্বালানি সংকটের মুখোমুখি, এই পাইপলাইনটি আমাদের জনগণের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই পাইপলাইনে ভারত থেকে ডিজেল আমদানিতে ব্যয় ও সময় উল্লেখ্যযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় ডিজেলের স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করবে।
দেশে কৃষিক্ষেত্রে চাষাবাদে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। বর্তমান দেশের এমন কোথাও নেই যে সেচের মাধ্যমে চাষবাদ হয় না। সেচ সচল রাখতে হলে বিদ্যুৎ প্রয়োজন, ডিজেল প্রয়োজন। ভারত তেল দেওয়ায় বর্তমান মৌসুমে ধান চাষের জন্য বিশেষ উপকার হবে। ভারত ফের প্রমাণ করলো যে, দেশটি বাংলাদেশের ক্রমশ উন্নতি আশা করে। উন্নতি-অগ্রগতি সাধনে বাংলাদেশের পাশে থাকবে ভারত। এ জন্য সাধুবাদ দেশটিকে।
দৈনিক সরোবর/ আরএস