বাংলাদেশ ও অভিভূত রাষ্ট্রদূত
প্রকাশিত: মার্চ ১৮, ২০২৩, ০৯:০১ রাত

ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের এক বছর পার হয়েছে। ঢাকায় এসেই তিনি নিজের কর্মতৎপরতা তুলে ধরেন। ঘন ঘন কথা বলেন সংবাদসম্মেলনে। দেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও বক্তব্য রাখেন।
কোনো দেশের রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যকে সেই দেশেরই ধরে নেওয়া হয়। ফলে পিটার হাসের প্রত্যেকটি বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের বলে ধরে নিতে হবে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের যে কয়েকজন রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত ছিলেন তাদের মধ্যে পিটার হাস ইতোমধ্যেই বেশ উজ্জ্বল ভাবমূর্তির স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি ঢাকায় পা দিয়েই বাংলাদেশকে বুঝার, বাংলাদেশের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করার চেষ্টা করছেন। আর বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিস্ময়কর এবং অবিশ্বাস্য গতিতে উন্নতি করেছে, তা তিনি দেখে পুলকিত, আনন্দিত।
বাংলাদেশের বয়স ৫১ বছর পার করেছে। ইতোমধ্যে দেশের ওপর কম ঝড় বয়ে যায়নি। ’৭৫ এ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর দেশের ঘাড়ে সিন্দবাদের দৈত্যের মতো পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা চেপে বসেছিলো। প্রায় ২৮ বছর তারা দেশ শাসন করেছে। ২৮ বছরে দেশকে তারা কতটা উন্নতি করেছে তা জানার জন্য খুব একটা মাথা খাটাতে হবে না। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে দেশকে অতীতে সব জঞ্জাল সাফসুফ করে তবেই দেশকে আজ এ পর্যায়ে এনেছেন।
রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ঢাকায় তার এক বছরে দেশের যে উন্নতি-অগ্রগিত দেখে বিস্মিত হয়েছেন, এই উন্নতির কারিগর বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা তিনি নিশ্চিত জানেন বলে আমরা মনে করি। বাংলাদেশের অগ্রগতি দেখে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের যে সুখকর উপলদ্ধি ও অনুভূতি, তাতে আমরা আনন্দিত। বাংলাদেশের উন্নতি-অগ্রগতি দেখে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের প্রশংসা সত্যিই মনে রাখার মতো।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক একটি অতি-উচ্চমাত্রায় গিয়ে ঠেকেছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টানা ১৪ বছরের শাসনামলে এই সম্পর্কের ভিত অন্যন্য।
যুক্তরাষ্ট্র বুঝতে পেরেছে, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে বিশ্বের আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে গণতন্ত্রের মানসকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিকল্প আর কেউ নেই। অবৈধ জঙ্গি শাসকের জন্ম দেওয়া দল ধারাবাহিকভাবে ক্ষসতা ভোগ করে বাংলাদেশকে কতটা পেছনে ঠেলে দিয়েছে, জঙ্গিবাদ উত্থানে কতটা নিপুঁণ ভূমিকা রেখেছে, দুর্নীতিতে সেরা অবস্থান গড়ে তুলতে কি করেনি, তা যুক্তরাষ্ট্রের থেকে অন্য কোনো দেশ ভালো জানে বলে আমাদের মনে হয় না।
বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রের সর্বোচ বুনিয়াদ গড়ে তোলা একটি দেশ। গণতন্ত্রকে সর্বোচ্চ মূল্য দিতে হলে এ দেশটির কাছ থেকে দীক্ষা নেওয়ার অনেক কিছু আছে। এমন একটি দেশের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস যখন বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করেন, তাতে আমাদের বেশ ভালো লাগে।
উল্লেখ্য, ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করেছেন। গত ৫১ বছরে বাংলাদেশের অগ্রগতি দেখে তিনি অবাক হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন। বাংলাদেশের জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আপনাদের সঙ্গী ছিল, আগামীতেও থাকবে।
গত বুধবার বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে এক বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এই কথা বলেন। ভিডিও বার্তায় তিনি বিগত বছরের পর্যালোচনা করেন। একইসঙ্গে তার চিন্তা-ভাবনাগুলোও তুলে ধরেন।
পিটার হাস বলেন, বাংলাদেশের কথা ভাবলে আমার মনে একটা উপমা আসে। সেটা হলো- আমি এমন এক গাড়িতে যাত্রা করেছি, যার চলাচল আসলে ভ্রমণের মতো। আমি যখন গাড়ির আয়নার দিকে তাকাই, আমি অবাক হই যে, মাত্র ৫১ বছরে বাংলাদেশ কতটা এগিয়েছে। আমি এমন বাংলাদেশকে দেখি, যারা আজ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার অপেক্ষায় আছে। আমি যখন গাড়ির সামনের রাস্তার দিকে তাকাই, তখন আমি কল্পনা করতে পারি, আগামী ৫১ বছরে বাংলাদেশ আরো কতদূর এগোবে।
পিটার হাস বলেন, একটি সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক দেশ হয়ে উঠার জন্য যা কিছু প্রয়োজন তার সবই বাংলাদেশের আছে। সামনের রাস্তায় বহু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। প্রতিবন্ধকতাগুলো পার হতে বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের পরিচর্যা, সুশাসনের উন্নতি, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও জনগণকে শিক্ষিত করে তোলার পদক্ষেপ নিতে হবে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, বাংলাদেশ ও এর জনগণ এই গাড়ির চালকের সামনে রয়েছে। এই গাড়ির ভবিষ্যৎ যাত্রাপথ ও গতি নির্ধারণ করবেন আপনারাই। তবে এই যাত্রাপথে যুক্তরাষ্ট্র আপনাদের সঙ্গী ছিল, আগামীতেও থাকবে। আপনাদের গন্তব্যে পৌঁছতে সহায়তার জন্য আমরা যথাসাধ্য সব কিছু করব।
রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বক্তব্যে বাংলাদেশ নিয়ে উন্নতির প্রশংসাসহ সামনে আরও কতটা এগিয়ে যেতে পারবে, এ ব্যাপারে যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, তাতে তার দূরদৃষ্টির প্রশংসা করি আমরা।
বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এই লক্ষ্যে কেউ বাধা সৃষ্টি করতেও পারবে না বলে আমরা মনে করি। বাংলাদেশের আজন্মের শক্র হলো স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি।
এই শক্তি দেশের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলো। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে সে সুযোগ তাদের সামনে আর আসবে না।
দেশে অবৈধ জঙ্গি শাসকরা যেভাবে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে নানাভাবে পুষ্ট করে তোলার কাজ করেছিলো, তারাও আর সে সুযোগ কখনও পাবে না।
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে কোনো শক্তি আর পদানত করার সাহস দেখাবে না। বাঙালি জাতি তার স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে শুধু সামনে এগিয়ে যাবে, এটাই গভীর আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং দৃঢ়-শপথ।
দৈনিক সরোবর/ আরএস