ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২২, ১১:৫১ রাত  

ফাইল ফটো

বিএনপি ও শরীক দলগুলো নির্দলীয় সরকারের দাবিতে একাট্টা। শনিবার (২৬ নভেম্বর) কুমিল্লায় বিভাগীয় জনসভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সময় থাকতে কেটে পড়েন, না হলে পালানোর জায়গা পাবেন না।

বেশ কিছুদিন ধরে বিএনপির নেতাদের মুখে একই ধরনের কথা শোনা যাচ্ছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর দলটি ঢাকা বিভাগীয় জনসভা। সব বিভাগের জনসভা শেষে ঢাকা বিভাগের সভাটি করতে যাচ্ছে। এতে বিপুল জনসমাগমের আয়োজন করার ইঙ্গিতও দলটি দিয়ে রেখেছে। এরই মধ্যে আবার সংলাপের কথা শোনা যাচ্ছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিএনপির সংলাপ নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে।

এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও সুশীল সমাজের ব্যক্তিদের নিয়ে এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের হাতে ক্ষমতা দেওয়ার বিপক্ষে মতামত উঠে এসেছে।

অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা কেন ক্ষমতায় বসবে? অবশ্য বিএনপি অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের দ্বারা নির্দলীয় সরকার গঠন করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে। গোল টেবিল বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অরাজনৈতিক ব্যক্তি দ্বারা সরকার গঠনের ঘোর বিরোধিতা করা হয়। এ দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

শনিবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ’-এর ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অনেকেই বলেন ডায়ালগ করতে হবে, আলোচনা করতে হবে। কাদের সঙ্গে? ওই বিএনপি, খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি, যারা গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে, তাদের সঙ্গে? বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র রয়েছে। নির্বাচন কমিশন আছে। যাদের ইচ্ছা নির্বাচন করবে। আর নির্বাচন করার মতো শক্তি যদি কারও না থাকে, তারা হয়তো করবে না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচন করবে, তারা ভোট দেবে। আর ভোট চুরি তারা মেনে নেয় না।

খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছিল ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালে। বাংলাদেশের জনগণ আন্দোলন করে মাত্র দেড় মাসের মাথায়, ৩০ মার্চ তাকে টেনে ক্ষমতা থেকে নামায়। ভোট চুরির অপরাধে খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হয়। কাজেই এই ভোট চোরেরাই ভোট চুরি করতে জানে। কিন্তু আমাদের মেয়েদের আমি বলবো, ভোটের অধিকার সবার। যেকোনো নির্বাচনে আমাদের মহিলারা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেবে। তারা তাদের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করবে।

এদিকে রবিবার (২৭ নভেম্বর) দেশে ফিরেছেন রওশন এরশাদ। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমেই তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে জোটের প্রশ্নই আসে না’। রওশন এরশাদের এ বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে ভয়ানক বিস্ফোরণ হয়েছে। বিএনপি আশা করেছিলো জাতীয় পার্টি তাদের সঙ্গে মিশে সরকার পতনে সামিল হবে। জিএম কাদেরের বক্তব্য অনেকটাই তাই পরিষ্কার করেছিলো। কিন্তু ঢাকায় ফিরেই রওশন এরশাদ যা শোনালেন, তাতে নতুন করে অনেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনের হিসাব-নিকাশ করতে বসে গেছেন।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিএনপি ফের তার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটি এবার করতে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের মতো জনপ্রিয় দলকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘সময় থাকতে কেটে পড়েন, না হলে পালানোর জায়গা পাবেন না’। এ জাতীয় বক্তব্যে নেতা-কর্মীদের কাছে হাততালি ও বাহবা পাওয়া যায়। কিন্তু বাস্তবতা বড় কঠিন।

রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির আমলনামায় যেসব ভয়ানক ঘটনা ঘটানোর রেকর্ড রয়েছে, তাতে দলটি হিসাব-নিকাশে ফের ভুল করলে কি অবস্থা দাঁড়াবে তা অনুমান করতে পারছে না বলে মনে হয়। রাজনীতিতে সামান্য ভুল দলকে খাদের কিনারে নিয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে বিএনপি বড় বড় কয়েকটি ভুল করে বসে ভাবছে এগুলো দলের জন্য ভালো এবং দলের স্বার্থে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা পাওয়ার পর থেকে একটি সেকেন্ড সময় নষ্ট করেননি। দেশের উন্নতি ও আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতায় মুগ্ধ অভিভূত। পাকিস্তানি আদর্শে বড় হয়ে ওঠা বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে যদি বলে ‘সময় থাকতে কেটে পড়েন, না হলে পালানোর জায়গা পাবেন না’ এ ধরনের কথা বলে নিজেদের হালকা ও হাস্যকর করে তুলা হচ্ছে। গোল টেবিল বৈঠকে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে যে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে, এটার প্রতিই দেশের সব রাজনৈতিক দলের শ্রদ্ধা দেখিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসা উচিত।

দৈনিক সরোবর/এমকে