ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৯ ভাদ্র ১৪৩১

দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় অর্থনৈতিক পরাশক্তি বাংলাদেশ

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০২২, ০৭:৪০ সকাল  

ফাইল ফটো

বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নতি দেখে সারা বিশ্বই বিস্মিত। যে বাংলাদেশকে একদা ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলা ভর্ৎসনা করা হয়েছিলো; বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে অতীতের সেই ভর্ৎসনার সঠিক জবাব দিয়ে চলেছেন। বাংলাদেশ আজ দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। আর বিশ্বের মধ্যে ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ। এই নজিরবিহীন উন্নতি বাংলাদেশের তাতে আমাদের বারবারই মনে করিয়ে দেয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথাই। তারই রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতার ফলে দেশ ক্রমশ অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে পরিণত হতে চলেছে।

ইউরোপ-আমেরিকা এক সময় বাংলাদেশকে করুণার দৃষ্টিতে দেখতো। বিদেশি দাতা সংস্থার অর্থ সাহায্য কতটা পাওয়া যাবে; তা, হিসেবে নিয়ে জাতীয় বাজেট প্রণয়ন করা হতো; আজ সেই অবস্থা থেকে বহু আগেই বাংলাদেশ বের হয়ে এসেছে। নিজস্ব অর্থনৈতিক শক্তি বলেই বিশাল আকারের জাতীয় বাজেট জাতির সামনে পেশ করা হয়। 

গণতন্ত্রের মানসকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নতুন এক বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছেন। অতীতের কিছু সামরিক জান্তা সরকার এবং তাদের ভূমিষ্ঠ দল, বাংলাদেশকে যে অন্ধকারের দিকে টেনে নিয়ে গিয়েছিলো, বাংলাদেশকে নিঃস্ব ও সম্বলহীন করে তুলেছিলো, ধর্মী উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ও জঙ্গিঘাটি তৈরিতে ইন্ধন দিয়েছিলো, বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশের পরিচিতি ম্লান করে তুলেছিলো, এ অবস্থা থেকে জাতির জনকের সুযোগ্যকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশের ললাট থেকে সব কালিমা অপসারণ করে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি গড়ে দিয়েছেন।

বাংলাদেশকে এখন আর জঙ্গি, সাম্প্রদায়িক ও ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হিসেবে তিরস্কার ও ভর্ৎসনা করার সাহস কেউ পাবে না। বাংলাদেশের বিস্ময়কর অগ্রগতি ও উন্নয়ন বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিক শক্তির ওপর দাঁড় করিয়েছে, এটা জোর দিয়েই বলা যায়।

অচিরেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। সরকারের হাতে যেসব মেগা উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে। এগুলো চালু হলে অর্থনীতির মেরুদণ্ড আরো শক্তিশালী হবে। উন্নত দেশের তালিকায় যাওয়ার যে উচ্চাশা নিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, তাতে কোনো বাধা থাকবে না। দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি ঘটাতে সরকারকে নানা-বাধা-ষড়যন্ত্র প্রতিনিয়তই মোকাবিলা করে যেতে হচ্ছে। দেশি-বিদেশি নানা অপশক্তি এই বাধা-ষড়যন্ত্রের মূল হোতা। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা দৃঢ় মনোবল ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জনের পথকে মসৃণ করে তুলেছেন।

সরকার দেশকে শিল্পোন্নত দেশে রূপান্তর করতে বদ্ধপরিকর। এ কারণে বর্তমানে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়, এর মধ্যে বেশ কয়েকটি কাজ বহুদূর এগিয়ে। কোনোটি উৎপাদনে পর্যন্ত চলে গেছে। পদ্মাসেতু চালু হওয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন তরান্বিত হয়ে উঠছে। বৃহৎ অর্থনীতির দেশের শীর্ষে উঠে আসার ক্ষেত্রে এই অর্থনৈতিক বিকাশ বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

সরকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ২১টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা সময়োচিত। দ্রুত গতিতে বৃহৎ অর্থনীতির দেশে বাংলাদেশ তার নাম সংযুক্ত করে নিয়েছে, এ জন্য আমরা বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাধুবাদ জানাই। জানা গেছে, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দিক দিয়ে ৪১তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি বাংলাদেশের। বিশ্বের ৫০টি বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ছাড়াও রয়েছে ভারত। গত বছর এই তালিকায় বাংলাদেশ ছিলো ৪২তম স্থানে।

‘বিশ্বের ৫০টি বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ’ নামের শিরোনামে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট দ্বারা প্রকাশিত পরিসংখ্যানে এ তথ্য দেখা গেছে। এই তালিকায় ভারতের অবস্থান ৬ষ্ঠ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ব অর্থনীতির পরিধি (গ্লোবাল জিডিপি) ১০০ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ২০২২ সালেই বিশ্ব অর্থনীতির আকৃতি (গ্লোবাল জিডিপি) হবে ১০৪ ট্রিলিয়ন ডলার। এ বছর বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৩৯৭ বিলিয়ন ডলার, যা বৈশ্বিক জিডিপির ০.৪% এবং গত বছরের ৪০০ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় কিছুটা কম।

অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র ভুটান ৩ বিলিয়ন জিডিপি নিয়ে সর্বনিম্ন বৈশ্বিক জিডিপির তালিকায় ১৬৩তম স্থানে রয়েছে। ২৫.৩ ট্রিলিয়ন ডলার জিডিপি নিয়ে তালিকায় সবার ওপরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি বিশ্বের মোট জিডিপির চার ভাগের এক ভাগ। ১৯.৯ ট্রিলিয়ন ডলার নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে চীন। যা বৈশ্বিক জিডিপির পাঁচ ভাগের এক ভাগ। তালিকায় প্রথম দশ দেশের মধ্যে বাকি দেশগুলো হলো- জাপান, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ভারত, ফ্রান্স, কানাডা, ইতালি ও ব্রাজিল। ১.৮ ট্রিলিয়ন ডলারের জিডিপি নিয়ে ১১তম স্থানে রয়েছে রাশিয়া। তালিকায় ৫০তম অবস্থানে রয়েছে পর্তুগাল।

আমরা আশা করি আগামীতে বাংলাদেশ বিশ্বে বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হিসেবে অবস্থান আরো সংহত করতে সক্ষম হবে। এ জন্য প্রয়োজন উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির ধারাবাহিক উন্নতি। এতে বাধা দিতে বর্তমানে নানা অপশক্তি সক্রিয়। বাঙালি জাতিকে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে কত গভীর ষড়যন্ত্র বর্তমানে চলছে তা নানা ঘটনা তুলে ধরছে। এই ষড়যন্ত্র ঘণীভূত হয়ে উঠছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ বা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

আমরা আশা করবো দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সংবিধান মতে হবে। যারা ক্ষমতায় যাওয়ার লিপ্সা থেকে তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছেন, তারা ফের বাংলাদেশকে পাকিস্তানের পাকাপোক্ত দোসর বানানোর চেষ্টা করছে। গণতন্ত্র  ও সুশাসনের জন্য তাদের কান্না দেখা যায়, তা স্রেফ ভাওতাবাজি। কারণ এই অপশক্তির হাতেই দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিশ্বস্ততা নষ্ট হয়েছে। ফলে উচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বাতিল করে দিয়েছেন। ঠেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনকে সার্বজনীন হিসেবে দেখা হয়।

বিশ্বের উন্নত গণতান্ত্রিক দলগুলোতে এ ব্যবস্থাই চালু রয়েছে। ফলে আমাদের উচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করে দিয়ে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন। দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে জিয়া ও এরশাদ যে নিষ্ঠুর ভূমিকা নিয়েছিলো তা কেউ ভুলে যায়নি। সামরিক পোশাকে জিয়া ক্ষমতায় বসেই শত শত মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসার ও সৈনিকদের নির্বিচারে হত্যা করে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে চরম বেঈমানি করে। তিনি এবং তার পত্মী স্বাধীনতা বিরোধীদের ক্ষমতায় টেনে এনে বসান। সর্বত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করা হয়।

অর্থনৈতিক ব্যবস্থা রুগ্ন করে তোলা হয়। ২১ বছর ধরে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি দেশের ক্ষমতায় বসে অর্থনীতির ধমনিকে রক্তশূন্য করে তোলাসহ যে নানা অনাচার চালায়, তা থেকে জাতির পিতার সুযোগ্যকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে টেনে তোলেন। তাই বাংলাদেশ আজ দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।

দৈনিক সরোবর/এমকে