ঢাকা, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১

বন্যাজনিত সব রোগ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিন

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২৪, ১১:২৩ দুপুর  

ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুরে ডায়রিয়া সামাল দেওয়া ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যে ডায়রিয়ায় শিশুমৃত্যুর খবর আসতে শুরু করেছে। ফেনীতে ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের আঙিনায় খোলা আকাশের নিচে রোগীরা পাটি, চাটাই, চাদর বিছিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। একটি শামিয়ানার ব্যবস্থা কেউ করতে পারেননি। কোথাও গাছের সঙ্গে বাঁধা দড়িতে ঝোলানো হয়েছে স্যালাইন। 
 
মূলত গত ২৫ আগস্ট থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী আসা শুরু হয়েছে। ২ সেপ্টেম্বরে দুপুর ১২টা নাগাদ রোগীর সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যায়। রোগীদের অভিযোগ, ওষুধ দিচ্ছে না হাসপাতাল থেকে। হাসপাতালটি বন্যায় ডুবে গিয়ে বেশ কিছু ওষুধ নষ্ট হয়েছে। এ কারণে রোগীদের কিছু ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। নোয়াখালী সদর হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত বেশির ভাগই শিশু। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় অস্থায়ী ওয়ার্ড খোলা হয়েছে পাশের একটি নির্মাণাধীন ভবনে। সেখানে মেঝেতে শয্যা পেতে চলছে চিকিৎসা। কোনো কোনো শয্যায় একসঙ্গে দুজন রোগীকে থাকতে দেওয়া হয়েছে। ১ সেপ্টেম্বর সেখানে ভর্তি ৬১০  রোগী। তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। রোগীর চাপে নার্স ও আয়ারা বিপর্যস্ত।
 
হাসপাতালগুলোয় নিরাপদ পানির পাশাপাশি ওষুধের সংকটও চলছে। পানিতে ডুবে যাওয়ায় ওষুধের ব্যবহার উপযোগিতা নষ্ট হয়েছে। ঢাকা থেকে নতুন ওষুধ প্রেরণের একটি নিয়মনীতি আছে। যাদের সাধ্য আছে, তারা ওষুধ বাইরে থেকে কিনছেন। বন্যার পানিতে ওষুধের দোকানগুলোও ডুবে ছিল। ওইসব ফার্মেসির ওষুধ  খাওয়া বা ব্যবহার করা উচিত হবে কি না, তা কর্তৃপক্ষের দেখা উচিত। কেননা এতে রোগীর প্রাণ সংসয়ের বিষয়টি জড়িত। এছাড়া নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর চাপ অনেক বেশি। আবার চিকিৎসক ও নার্সের সংকট রয়েছে।  মেডিকেল অফিসার ও নার্সের সংকটও আছে। ডায়রিয়ার প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রাথমিক চাপ সামলানোর জন্য যথেষ্ট। তাই সারা দেশ থেকে স্বাস্থ্যকর্মী, মেডিকেল কলেজগুলোর সিনিয়র শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে কাজে লাগানো যেতে পারে।
 
বলার অপেক্ষা রাখে না, নিরাপদ পানি আর পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে না পারলে ডায়রিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও জটিল হয়েছে ত্রাণসামগ্রীর সঙ্গে প্লাস্টিক আর পলিথিনের যথেচ্ছ ব্যবহারে। ত্রাণকর্মীদের দেওয়া স্যানিটারি ন্যাপকিন আর ডায়াপার ব্যবহারের পর এখন পড়ে আছে যেখানে-সেখানে। শেষ পর্যন্ত সব বর্জ্যরে ঠাঁই হবে পুকুর আর জলাশয়ে। পুকুরগুলো কমপক্ষে গোসলের উপযোগী করা খুবই জরুরি। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগবে, তা ছাড়া চর্মরোগ ইত্যাদি থেকে মুক্ত রাখতে তাদের ভিটামিন ‘সি’ প্রয়োজন হবে। আমাদের প্রত্যাশা, সংশ্লিষ্টরা ডায়রিয়াসহ বন্যাজনিত সব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও অনিয়মে কঠোর অবস্থান নেবেন। এ বিষয়ে নিজ স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে রোগীদের সেবায় তাদের মনোযোগ দিতে হবে।
 
দৈনিক সরোবর/কেএমএএ