ঢাকা, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১

গণপরিবহনে বর্ধিত ভাড়া আদায় বন্ধে ব্যবস্থা নিন

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪, ১১:৫৯ দুপুর  

এ দেশে একবার একটি জিনিসের দাম বাড়লে তা আর কখনো কমে না। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে মানুষের জীবনযাত্রার মান অসহনীয় অবস্থায় রয়েছে। এ কারণে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। পরিবহন ব্যয় দ্বিগুণ হওয়ায় তার প্রভাব পড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্যের ওপর। ফলে ক্রয়ক্ষমতা সাধারণ মানুষের সামর্থ্যরে বাইরে চলে গেছে। তেলের দাম যে পরিমাণ বেড়েছে, এর থেকে কয়েকগুণ বেশি বেড়েছে বাস ও অন্যান্য গণপরিবহন ভাড়া। পণ্য পরিবহন ভাড়া ইচ্ছামতো বাড়িয়ে দেয় ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিকরা। বাসের ক্ষেত্রে সরকার ও বাসের মালিক-শ্রমিক নেতারা মিলেমিশে একচেটিয়াভাবে ভাড়া নির্ধারণ করে। নির্ধারিত ভাড়ারও কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়া আদায় করে বাসের শ্রমিকরা। সরকার বর্ধিত ভাড়া আদায় বন্ধে কখনোই কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি। ফলে বাসের মালিক-শ্রমিক সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি সাধারণ মানুষ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট সরকার পতনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ আমল শেষ হয়েছে। এসেছে অন্তর্বর্তী সরকার। পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই হাতবদল হয়েছে। আগে বেশি ভাড়া নিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের সাঙ্গপাঙ্গরা। বর্তমানে বিএনপি নামধারী শ্রমিকরা নিচ্ছে বেশি ভাড়া। মানুষ ভেবেছিল এখন হয়তো এখন একটু স্বস্তি পাওয়া যাবে। কিন্তুঅন্তর্বর্তী সরকারের বেলাতেও একই অবস্থা। গণপরিবহনে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলছেই। বাসের মালিক-শ্রমিক সিন্ডিকেট গত কয়েক বছরে যাত্রীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। অথচ মানুষের আয় বৃদ্ধি হয়নি। সবকিছু মিলিয়ে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় কতদিন টিকে থাকা যাবে তা বলা অনিশ্চিত। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের বাজারে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমানো হলেও বাস ভাড়া কমেনি। প্রায় ৮০ শতাংশ চাকরিজীবীকে যাতায়াত ভাতা দেওয়া হয় না, শুধু বেতন পান। বাস মালিক ও শ্রমিকরা তাদের স্বার্থের হানি হলেই রাস্তায় ধর্মঘট শুরু করে দেয়। ফলে দেশের খেটে খাওয়া মানুষ পড়ে চরম বিপদে। 
বলার অপেক্ষা রাখে না, ঢাকাসহ দেশজুড়ে গণপরিবহন সংকট ছিল চরমে। তেলের দামের সঙ্গে ভাড়া সমন্বয়ের অভাবে গণপরিবহনে অঘোষিত ধর্মঘট পালিত হয়। দেশের অনেক এলাকায় বাস রাস্তায় নামানোর জন্য পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা নতুন নয়। ঢাকা শহরে বাসে ১০ টাকার ভাড়া নেয় ২০ টাকা, ২৫ টাকার ভাড়া নেয় ৩০ টাকা, ৩৫ টাকার ভাড়া নেয় ৫০ টাকা। গণপরিবহনে এখনো চলছে লুটপাট। যে যার মতো করে ভাড়া আদায় করছে। কোনো নিয়ম-কানুন মানছে না বাস শ্রমিকরা। সব মিলিয়ে এক হাঁসফাঁস অবস্থা তৈরি হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা, অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গণপরিবহনের ভাড়া মানুষের সাধ্যের মধ্যে দ্রুত নিয়ে আসবে।

দৈনিক সরোবর/কেএমএএ