ঢাকা, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১

দানবীয় সরকারের উত্থান পথ রুদ্ধ হোক

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২৪, ১১:১৯ দুপুর  

বাংলাদেশের ইতিহাসেই শুধু নয়, বিশ্ব ইতিহাসেও ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে। আরব বসন্তেও এমন গর্জে ওঠেনি, যেমন গর্জে উঠেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে সারা দেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এ আন্দোলনে প্রায় ৮০০ তাজা প্রাণ ঝরে যায়। দৃষ্টিশক্তি হারান ও পঙ্গুত্ব বরণ করেন প্রায় সমপরিমাণ মানুষ। এ আন্দোলনে রাজপথে আরও কত মানুষের রক্ত ঝরেছে, তার হিসাব পাওয়া সহজ নয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান হলো ভেঙে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংস্কার করে বাংলাদেশকে একটি আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত করা ও বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার। তরুণ প্রজন্ম ও দেশবাসীরও আকাক্সক্ষা এই সরকার বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মেরামতে পথিকৃৎ হয়ে উঠবে। কারণ ভবিষ্যতে দেশ হবে দুর্নীতিমুক্ত। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রের কাঠামো পরিবর্তন, আগামী সরকারগুলো যাতে দানবীয় শক্তিতে পরিণত না হয় এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রকৃত গণতান্ত্রিক ও গণপ্রজাতন্ত্র হয়ে ওঠে, এ জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো অবশ্য করতে হবে।
 
বলা অপেক্ষা রাখে না, প্রথমেই নির্বাচন ব্যবস্থাপনা সংস্কারের আওতায় আনতে হবে। পরিবর্তন করা দরকার নির্বাচন আইন ও ভোট পদ্ধতির। আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা থাকলে জাতীয় সংসদ একদলীয় শাসনের কেন্দ্রে পরিণত হবে না। রাজনৈতিক দলগুলো যাতে আরও স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিকভাবে রাজনীতি করতে পারে, এ জন্য নিবন্ধন আইন (পলিটিক্যাল পার্টি অ্যাক্ট) প্রয়োজন। এর মাধ্যমে দলগুলোকে রাষ্ট্রের সঙ্গে নিবন্ধিত হতে হবে। ১৯৭৮ সালে পলিটিক্যাল পার্টি অ্যাক্ট নামে একটি অধ্যাদেশ করা হয়েছিল, সেটি কার্যকর হয়নি। উপমহাদেশে একমাত্র বাংলাদেশেই রাষ্ট্রের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর এমন সম্পৃক্ততা নেই। অন্যদিকে পুলিশ প্রশাসনকেও বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। এছাড়া নিরপেক্ষতা ভিত্তিতে বিচারপতি নিয়োগ হওয়া অত্যন্ত জরুরি। কারণ অতীতে বিচার বিভাগ সরকার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। তাই বিচার ব্যবস্থাকে অবশ্যই স্বাধীন করতে হবে। অন্যদিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করা।
 
আমরা মনে করি, দেশের ভবিষ্যৎ শাসকরা যাতে স্বৈরাচারী ও ভোটে অধিকার যাতে কেড়ে নিতে না পারে, এ জন্যই রাষ্ট্রের কাঠামোর সংস্কার প্রয়োজন। জনগণ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে এসব সংস্কারই আশা করে বলেই মনে হয়। আমাদের প্রত্যাশা, এখন থেকে দানবীয় সরকারের উত্থান পথ রুদ্ধ হবে।
 
দৈনিক সরোবর/কেএমএএ