ঢাকা, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১

ছাত্রদের লেজুড়বৃত্তি রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৫, ০৩:১৯ দুপুর  

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে বিরোধী কোনো রাজনৈতিক দলই সক্রিয়ভাবে মাঠে তাদের কার্যক্রম চালাতে পারেনি। হামলা-মামলা-নির্যাতনের শিকার হয়ে দলগুলোর নেতাকর্মীরা অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এক আওয়ামী লীগ বাদে বিএনপি, জামায়াত, বিভিন্ন জোট, ইসলামী ও বাম ঘরানার দলগুলোর সরব উপস্থিতিতে রাজনীতির মাঠ যেন আস্তে আস্তে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। শিক্ষার্থী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে নতুন আত্মপ্রকাশ করা ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’ নিয়েও মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। সব মিলিয়ে দেশে গরম ও সরব হয়ে উঠেছে রাজনীতির মাঠ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জুলাই বিপ্লবের পর আবারো গরম হচ্ছে দেশের রাজপথ। সংস্কার, জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নিত্যপণ্যের মূল্য সহনশীল পর্যায়ে আনাসহ বেশ কিছু ইস্যুতে সারা দেশে প্রতিদিনই চলছে মিছিল-সমাবেশ। এসব সভা-সমাবেশের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের শক্তির জানান দিচ্ছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট টানা সাড়ে ১৫ বছরের আওয়ামী শাসনের ইতি ঘটে। 

বলা বাহুল্য, দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি সারা দেশের জেলায় জেলায় জনসমাবেশ করছে নিত্যপণ্যের মূল্য সহনশীল পর্যায়ে আনা, অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা, ফ্যাসিবাদের ষড়যন্ত্র চক্রান্ত বন্ধ করা এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী দলটির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে সারা দেশের মহানগর জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের সকল জেলায় জেলায় চলছে সমাবেশ। দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ কেন্দ্রীয় নেতারা এসব সমাবেশে বক্তব্য দিয়ে জনমত গঠন করছেন।  বিএনপি দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকার হতাশা কাটিয়ে দলীয় কর্মীরা সারা দেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে সরব হয়েছেন। একই সঙ্গে দলের অনেকে রাজনৈতিক মাঠের দখল নিতে গিয়ে নানা অপকর্মে জড়াচ্ছেন। তবে ইমেজ ধরে রাখতে এসব অপকর্মে জড়িতদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা যেমন নেওয়া হচ্ছে; তেমনি সারা দেশে প্রায় প্রতিদিনই সভা-সমাবেশের মাধ্যমে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলকে চাঙ্গা রাখছে দলটি। 

বলার অপেক্ষা রাখে না, এখন মান্ধাতা আমলের রাজনীতি বাদ দিয়ে গুণগত পরিবর্তন দরকার। বর্তমান সরকারকে সবাই সমর্থন দিলেও কোনো কোনো দল আগে সংস্কার চায়, কেউ কেউ চায় নির্বাচনের রূপরেখা। এ জন্য কতদিন সরকারের প্রতি সমর্থন থাকবে; তাও পরিষ্কার নয়। তাই দলগুলোর অবস্থান কী হবে, তা আগে থেকে বলা মুশকিল। সংস্কারগুলো জনবান্ধব না হলে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান কী হয়, এর নির্ভর করবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি। বর্তমান রাজনীতির মাঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের উদ্যোগে আসছে নতুন ছাত্র সংগঠন। তারা বলছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে নতুন এই ছাত্র সংগঠনের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি হবে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র একটি সংগঠন। নতুন ছাত্র রাজনীতিতে গণতন্ত্রের চর্চাকে পুনর্বহাল করে শিক্ষার্থীদের ক্ষমতায়িত করার প্ল্যাটফর্মগুলোকে পুনর্গঠন করা হবে। নিয়মিত এবং নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ নির্বাচন অব্যাহত রাখার জন্য নতুন ছাত্র সংগঠন সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। আমাদের প্রত্যাশা, ছাত্ররা লেজুড়বৃত্তি রাজনীতি থেকে বেরিয়ে গঠনমূলক সমাজ সংস্কারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে।

দৈনিক সরোবর/কেএমএএ