ঢাকা, রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে কোটা প্রথা জরুরি

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: জুলাই ১৩, ২০২৪, ০৭:৩৩ বিকাল  

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল সরকার। কয়েক বছর ধরে সে অনুযায়ী কোটাবিহীন নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি হাইকোর্ট কোটা বাতিলের পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণা করলে নতুন করে আন্দোলন শুরু হয়। যেহেতু আদালতের মাধ্যমে ফিরেছিল কোটা আবার আদালতই স্থগিত করেছে, সেহেতু আন্দোলনকারীদের এটা মানা উচিত। কোটা বা সংরক্ষণ প্রথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আছে। বহু বছর ধরেই পিছিয়ে পড়া সব মানুষকে আর্থিক মানোন্নয়নকে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দিয়ে সরকারি চাকরিতে কোটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশ সংবিধানের ২৯-এর ৩ (ক) অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশের উপজাতি/ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়গুলোকে অনগ্রসর শ্রেণি হিসেবে বিবেচনা করে ১৯৮৫ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা সংরক্ষণের বিধান রাখা হয়। কোটা ব্যবস্থা পেয়ে তাদের জীবনমান ও আর্থ-সামাজিক সূচকে কিছুটা হলেও অগ্রগতি হয়েছে। তেমনিভাবে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জন্যও কোটা আছে। এ প্রথার ফলে সমাজে অন্যদের থেকে তুলনামূলকভাবে আর্থিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া সব মানুষস্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। তাই সমাজে ন্যায্যতা বজায় রাখতে অবদান রাখছে কোটা ।

বলার অপেক্ষা রাখে না, সমতার কথা চিন্তা করলে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী, দলিত, প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র পেশাজীবী, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা বহাল রাখতে হবে। তাই কোটার সমাধান করতে হবে সরকারকেই। আন্দোলনকারীরা যতই কোটার বিরুদ্ধে থাক না কেন, কোটা ব্যবস্থা তাদের মানতেই হবে। ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী ও শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী যারা আছেন, তাদের জন্য অবশ্যই কোটার ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রয়োজনে এটি সংস্কার করা যেতে পারে। এ করাণে কোটা বাতিলের আন্দোলনকে কখনোই সমর্থন করা যাবে না। কোটা পদ্ধতি বাতিল হয় ৪০ বিসিএস থেকে। কোটাযুক্ত সর্বশেষ ব্যাচ ছিল বিসিএস ৩৮ ব্যাচ। ২০২০ সালের পর ২৩টি জেলায় একজনও পুলিশের চাকরি পাননি। অন্যদিকে ৫০টি জেলায় নারীরা চাকরির ক্ষেত্রে সুযোগ পায়নি। যখন কোটা পদ্ধতি ছিল নারীদের চাকরিপ্রার্থী কমবেশি ২৬ শতাংশের উপরে চাকরি পেয়েছিল। কোনো কোনো বছর ১৯ শতাংশে নেমে এসেছে।  

কোটা পুনর্বহালের দাবিতে ২০২১ সালে আদালতে রিট করেন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। এই রিটেরে রায়ে  ২০২৪ সালের ৫ জুন কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের ফলে ১০ জুলাই হাইকোর্টের রায়ের ওপর ৪ সপ্তাহের স্থিতাদেশ দেন আপিল বিভাগ। ফলে কোটা ব্যবস্থা ফিরে আসা এখন কোর্টের রায়ের ওপর নির্ভর করছে। সরকারের এতে কোনো দায় নেই।  আসলে যারা কোটা বাতিল চান; তারা বুঝতে পারছেন না, শ্রেণি, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গীয় অসমতার  এই দেশে কোটা বাতিল বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। আমরা মনে মনে করি, সরকার কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ভুল করেছিল। কারণ জনগোষ্ঠীর ভৌগোলিক অবস্থান ও অর্থনৈতিক নানা স্তরের জন্য কোটা ব্যবস্থা সংরক্ষণ আবশ্যক। তাই সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা অবশ্যই থাকতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা, কোটা ব্যবস্থার পুনর্বহাল হলে জনগণের মঙ্গল হবে এবং দেশ সমৃদ্ধিতে ভরে উঠবে।