add

ঢাকা, বুধবার, ১৭ জুলাই ২০২৪, ২ শ্রাবণ ১৪৩১

দাম বাড়াচ্ছে সমিতি: যে যার খুশিমতো বিক্রি করছে ডিম ও মুরগি

সরোবর প্রতিবেদক 

 প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২৪, ০৯:০৬ রাত  

বর্তমানে রাজধানীতে ডিমের হালি কোথাও ৫৫ টাকা, কোথাও ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ওয়েবসাইটে ডিমের হালি দেখাচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। এছাড়াও পাড়া-মহল্লায় যে যার খুশিমতো বিক্রি করছে এই নিত্যপণ্যটি। যদিও খামারি পর্যায়ে ডিমের দাম প্রায় অর্ধেক বলে জানা গেছে। ডিমের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে ব্যবসায়ীরা পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনকে দায়ী করলেও তাদের অভিযোগ অন্যদের বিরুদ্ধে। তারা বলছেন— তেজগাঁও ডিম সমিতি সিন্ডিকেট করে বাড়াচ্ছে ডিম ও মুরগির দাম।

জানা গেছে, খামার পর্যায়ে বর্তমানে ডিম প্রতি পিস সাড়ে সাত থেকে আট টাকা বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে যা বিক্রি হচ্ছে ১৩-১৫ টাকা। প্রান্তিক পর্যায়ের ডিমের খামারিদের অভিযোগ, যে দামে ডিম ও মুরগি বিক্রি হচ্ছে, এর সুফল তারা ভোগ করছেন না। ডিমের দামবৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ডিম ব্যবসায়ী সমিতির দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন প্রান্তিক খামারিরা। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে বিভিন্ন বাজারের ডিম ব্যবসায়ীরা বলছেন— মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে বাড়ছে দাম।

রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কাপ্তানবাজার। কাপ্তানবাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশের প্রান্তিক অঞ্চল থেকে ট্রাক বোঝাই করে মুরগি ও ডিম আসছে। পাইকারি ডিম ব্যবসায়ী মেসার্স জহিরুল ট্রেডার্সের ম্যানেজার ওয়াসিম উল্লাহ বলেন, আজকের বাজারে (বৃহস্পতিবার) ডিমের চাহিদার তুলনায় আমদানি কম হলে দাম বাড়বে। আবার চাহিদার তুলনায় আমদানি বেশি হলে দাম কমবে। রাজধানীর বাজারে ডিমের দাম নির্ধারণ করে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন, ডিম সমিতি। তারা প্রতিদিন ভোররাতে আমাদের ফোনের মাধ্যমে জানিয়ে দেয় ওইদিন প্রতি পিস ডিমের দাম কত হবে। এতে আমরা যারা প্রতিদিনই খামারিদের কাছ থেকে ডিম কিনি এবং রাজধানীর বাজারে পাইকারি বিক্রি করি, তাদের কখনো লাভ আবার কখনো লোকসান হয়।

বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, আমরা ডিম বা মুরগির দাম নির্ধারণ করি না। মূলত তেজগাঁও ডিম সমিতি সিন্ডিকেট করে ডিম বা মুরগির দাম বাড়ায়। আমরা সরকারকে অনেকবার বলেছি এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে, কিন্তু নেয়নি। তবে তেজগাঁও ডিম সমিতির সভাপতি আমান উল্লাহ বলেন, আমরা ডিমের দাম বাড়াই না, নির্ধারণও করি না। আমরাও সরকারকে বলেছি, যারা ডিমের দাম নির্ধারণ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। তবে কারা নির্ধারণ করে, সে সম্পর্কে তিনি কিছু বলেননি।

কাপ্তানবাজারের আরেক পাইকারি ডিম ব্যবসায়ী মোহম্মদ আলী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী রেজাউল করিম বলেন, এবার কোরবানি হয়েছে মাসের মাঝখানে। মানুষের কাছে টাকা নেই। কোরবানি করতে ঢাকার বেশিরভাগ মানুষই গেছে গ্রামে। সেখানে ব্যয় হয়েছে বেতন-বোনাসের টাকা। তারা এখন ঢাকায় এসেছে, তাদের হাত খালি। মাছ-মাংস না খেয়ে খরচ বাঁচাতে গিয়ে এখন ডিম খাচ্ছে। ফলে ডিমের চাহিদা বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বাড়েনি। ফলে দাম বেড়েছে। 

তিনি বলেন, রাজধানীর ডিমের দাম নির্ধারণ করে তেজগাঁও। সেখান থেকে আমরা তাদের নির্ধারিত দামে ডিম কিনি এবং বিক্রি করি। আমরা চাইলেই বাড়তি দামে বা কম দামে ডিম বিক্রি করতে পারি না।

এদিকে রাজধানীতে ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৫ টাকা। মহল্লার দোকানগুলোতে ৬০ টাকা হালিও বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে। রাজধানীর হাতিরপুল খুচরা বাজারের একটি দোকানে এক হালি ডিম কিনতে চাইলে দোকানি ৫২ টাকা মূল্য দাবি করেন। 

হাতিরপুল বাজারে বাজার করতে আসা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, দিনকে দিন সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে ডিম ও মুরগির দাম। এখনই দামের লাগাম টেনে না ধরলে, এগুলো কেনা অসম্ভব হয়ে উঠবে। প্রতি বছর কোরবানির আগে ও পরে মুরগি এবং ডিমের দাম কমলেও এ বছর তার ব্যতিক্রম। শুধু দাম বাড়ছেই, কমার কোনো নামগন্ধ নেই। 

এদিন রাজধানীর নিউমার্কেট কাঁচাবাজারে খুচরা ডিম ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা মূলত প্রতি পিস ডিম কিনে আনি ১১-১২ টাকা। পরিবহন খরচ ও অন্যান্য খরচসহ লাভ রেখে ১৩-১৪ টাকায় বিক্রি করছি।

কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস চেয়ারম্যান এস এম নাজের হোসাইন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আগে যারা ডিম মজুত করেছে, এই ধরনের বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করেছে, সেগুলো প্রমাণিতও হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যেহেতু ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি; সে কারণে তাদের অপরাধ করার প্রবণতা আরও বেশি বাড়ছে। আর সরকারের যে পরিমাণ তদারকি দরকার বাজারে। সেটা তো এখন নেই বললেই চলে। এই সুযোগ নিচ্ছে অসাধু সিন্ডিকেট। তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় এনে বাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর সূত্র জানায়, অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন জায়গার হিমাগার থেকে নামে-বেনামে মজুত করা ডিম উদ্ধার করা হয়েছে। অধিদফতরের পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থা তদারকি করেছে। 

ভোক্তা অধিদফতর সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ত্রুটিপূর্ণ বিপণনব্যবস্থার কারণে মুরগি ও ডিমের দাম অনেক সময় হঠাৎ করে বেড়ে যায়। হাতবদলের কারণে এটা বেশি ঘটে। বিভিন্ন ফড়িয়া বা মধ্যস্বত্বভোগীরা বাজারে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।

দৈনিক সরোবর/এএল