ঢাকা, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১

মার্কিন দুই কংগ্রেসম্যানের সফরে যে বার্তা পাওয়া গেল

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৩, ০৮:৫৬ রাত  

ঢাকায় এসেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দুই কংগ্রেসম্যান এড কেস এবং রিচার্ড ম্যাককরম্যাক। রবিবার (১৩ আগস্ট) তারা পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। গুলশানে যুক্তরাষ্ট্রের দূতের বাসায় আওয়ামী লীগ, বিএনপিও  জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এতে দেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গটি উঠে এসেছে। 

দুই কংগ্রেসম্যান কোন পদ্ধতি নির্বাচন হওয়া উচিত এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তারা গুরুত্ব দিয়েছেন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপরে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে দুই কংগ্রেসম্যান চীন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

উল্লেখ্য, বর্তমান বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন চরম প্রতিদ্বন্ধি। দুই বিশ্বশক্তি বিশ্বের নানা দেশের প্রভাব প্রভাব-বলয় প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আগে থেকে যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে বিশ্বের ওপর প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে। বর্তমানে চীন নিজস্ব প্রভাব বলয় গড়ে তোলায় মন দিয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক। দেশের উন্নয়ন সহযোগী নানা দেশের মতো চীনও উন্নয়ন সহযোগী। কিন্তু বর্তমান সরকারের নানা প্রতিপক্ষ উন্নয়ন সহযোগী চীনের প্রসঙ্গ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কান ভারি করে তুলেছে। রঙচঙ মাখিয়ে অতিরঞ্জিত করে অনেক কিছু  বলা হয়েছে, যার কোনও ভিত্তি নেই।

অন্যদিকে দুই কংগ্রেসম্যান আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কৌতুহল প্রকাশ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মঙ্গল চায় না এটা আমরা বলবো না। দেশটির সঙ্গে ৫০ বছরের গভীর সস্পর্ক। বাংলাদেশের গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত হোক সেটি দেশটি প্রত্যাশা করবেই। দেশের অনেকে অবশ্য আশা করেছিলো-দুই কংগ্রেসম্যান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আসলে কি বলে, তারা কি দেশের সংবিধান অনুসারে নির্বাচনের বিরুদ্ধে কিছু বলে কি না, তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে নির্বাচন হওয়া উচিত বলে কিছু বলে কি না, যারা এ নিয়ে কান সজাগ করে বসেছিলো, তারা দেখলো যে দুই কংগ্রেসম্যান সংবিধান অনুসারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনই চেয়েছেন। নির্বাচনকে যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায় তার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে কি আলোচনা হলো দুই কংগ্রেসম্যানের, সে ব্যাপারে চোখ ফেরানো যাক-বাংলাদেশ চীনের ‘খপ্পরে’ পড়েছে বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে সরাসরি সরকারকে জিজ্ঞাসাও করেছেন মার্কিন কংগ্রেসের দুই প্রতিনিধি।

রবিবার (১৩ আগস্ট) পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে কংগ্রেসম্যান এড কেস এবং রিচার্ড ম্যাককরম্যাক চীনের বিষয়টি জানতে চান। বৈঠকের পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীন নিয়ে বলেছে যে তোমরা চীনের ভেতরে চলে যাচ্ছো। আমরা বলেছি না। আমরা চীনের ভেতরে যাচ্ছি না। আমাদের ঋণের এক শতাংশের মতো চীন থেকে নেওয়া। এটি কোনও বড় বিষয় নয়। তাদের কাছে (কংগ্রেসম্যান) বিভিন্ন লোকজন বলছে বাংলাদেশ একটি ভয়ংকর জায়গা। এরা চীনের খপ্পরে পড়ে গেছে। চীনের গোলাম হয়ে গেছে। এটি একটি ভয়ংকর জায়গা, যেখানে অশান্তি এবং পুলিশ যখন-তখন লোক ধরে ফেলছে ও মেরে ফেলছে। 

তিনি বলেন, তারা বলেছে তোমাদের সমঝোতার পথ আছে কিনা। আমরা বলেছি, তাদের যে দাবি-সরকারের পতন হবে, তারপরে নির্বাচন করবে, সেটির সঙ্গে আমাদের সমঝোতার কোনও সুযোগ নেই। তিনি প্রতিনিধিদের বলেন, তোমাদের দেশে কি নির্বাচনের সময়ে সরকারের পতন হবে? নিশ্চয়ই না। এ ধরনের দাবি করলে কি তোমরা আলোচনা করবে? নিশ্চয়ই না।... আমরা আমাদের শাসনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন করবো এবং সেটিতে সবাই অংশগ্রহণ করুক এটি আমরা চাই। কে জিতবে না জিতবে সেটি জনগণের ওপর নির্ভর করবে।

রাজধানীর গুলশানে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় নির্বাচন প্রশ্নে তিন শীর্ষ দলের বৈঠকটিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এ বৈঠক থেকেও পরিষ্কার একটি ধারনা বের হয়ে এলো। বিএনপি হয়তো প্রত্যাশা করেছিল দুই কংগ্রেসম্যান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে সাফাই গাইবে। বুদ্ধিমান দুই কংগ্রেসম্যান এসবের ধারে কাছেও যাননি। যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য কর্মকর্তারা যেমন বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি সমীহ করে কথা বলেছেন, গুরুত্ব দিয়েছেন সংবিধান অনুসারেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে। ফের বিএনপিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ও অতি-গুরুত্বপূর্ণ দুই কংগ্রেসম্যানের পক্ষ থেকে হতাশার বার্তা পেতে হলো। 

একই দিন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগ, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে চা-চক্রে যোগ দেন বাংলাদেশে সফররত যুক্তরাষ্ট্রের দুই কংগ্রেসম্যান। আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলে ছিলেন দলটির অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ও সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খান, নাহিম রাজ্জাক ও তামান্না নুসরাত। তিনজনই সংসদ সদস্য। 

জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিদলে ছিলেন তিন সংসদ সদস্য শেরিফা কাদের, রানা মোহাম্মদ সোহেল ও নাজমা আকতার। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার কংগ্রেসম্যান (রিপাবলিকান) রিক ম্যাক্রোরমিক ও হাওয়াইয়ের কংগ্রেসম্যান (ডেমোক্র্যাট) এড কেইস ছাড়াও চা-চক্রে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস উপস্থিত ছিলেন। 

বৈঠকে কংগ্রেসম্যান এড কেইস আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলকে বলেন, শুধু তোমাদের দেশে নয়, সারা পৃথিবীর কাছে অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হবে। জবাবে আওয়ামী লীগ নেতারা নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে তাদের আসার জন্য আমন্ত্রণ জানান। একই সঙ্গে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতির কথা জানান। আইনের মাধ্যমে সরকার নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করেছে বলে মার্কিন প্রতিনিধিদলকে জানান আওয়ামী লীগের এক সদস্য।

জাতীয় পার্টির শেরিফা কাদের বলেন, তারা সব সময় যা বলেন, একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দরকার।

এই বৈঠক থেকে যে বার্তা পাওয়া গেল তাতে দেশের চলমান রাজনীতি ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে বিএনপি যে ধরনের বাক বিস্তার করে কাবু করার কৌশল নিয়েছিলো, তা কার্যত বিফল হয়েছে।

দৈনিক সরোবর/আরএস