আইএমএফের প্রস্তাব
ভোক্তা অধিকারের ক্ষমতা বাড়ানো উচিত
প্রকাশিত: আগস্ট ০২, ২০২৩, ০৬:২৫ বিকাল

ছবি: ইন্টারনেট
আইএমএফের ঋণ পাওয়ার বিষয় সবাই অবগত। সংস্থাটি দেশের জন্য ঋণ অনুমোদন করায় অর্থনৈতিক দুর্গতির শঙ্কা কেটে গেছে। এই সংস্থাটি নানা ক্ষেত্রে সংস্কারের ব্যাপারে পরামর্শও দিয়েছে। এসব পরামর্শের ব্যাপারে অনেকেই আবার বিরোধীতা করে বক্তব্যও রেখেছেন। তবে এবার আইএমএফ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ক্ষমতা বাড়ানোর ব্যাপারে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে। এ ব্যাপারে সরকারের কাছে একটি প্রস্তাবও পেশ করেছে।
দেশে ভোগ্যপণ্য নিয়ে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজির বিষয়টিও সবার জানা। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কারসাজির মাধ্যমে ভোগ্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা পকেটস্থ করে চলেছে। অন্যদিকে নাভিশ্বাস চলছে সাধারণ ভোক্তাদের। বর্তমান সময়ে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভোজ্য তেল, চিনি, পেঁয়াজ এবং সবশেষ এসে কাঁচা মরিচের দাম প্রতি কেজি ৬০০ টাকায় উঠিয়েছে। এতে বাজারে চরম অস্থিতিশীল অবস্থা বিদ্যমান।
সরকার অবশ্য নানা চেষ্টা করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। অন্যদিকে প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের হতাশা ও ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিটি নিত্যপণ্য তাদের ক্রয়-ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এতে যে সরকারের ভাবমূর্তির গায়ে আঁচড় লেগেছে তাও সত্য। বিষয়টি সরকারের দায়িত্বশীলরা স্বীকার করে নিয়েছেন এবং পরিস্থিতি উন্নতির আশ্বাস দিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক পণ্যের দাম বেড়ে গেছে, তার প্রভাব পড়েছে দেশি বাজারেও। অবশ্য একটা কথা সত্য যে, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম যতটুকুই বাড়ুক, সেটাকে অজুহাত দেখিয়ে দেশি বাজারে ব্যবসায়ী পণ্যের দাম অনেক বাড়িয়ে মুনাফা করে। এটা যে কত বড় অনৈতিক কাজ তা সহজেই অনুমেয়।
এই প্রেক্ষিতে আইএমএফ ভোক্তা অধিকারের ক্ষমতা আরো বাড়ানোর ব্যাপারে সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে, আমরা মনে করি, তা সরকারের বিবেচনায় নিতে পারে।
জানা গেছে, বাজার সিন্ডিকেট প্রতিরোধ করে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের আরও ক্ষমতা চায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এ জন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের সংস্কার চাইছে সংস্থাটি।
একই ধরনের সুপারিশ জানিয়ে সম্প্রতি সরকারের কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ক্যাব। ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও করণীয়’ সম্পর্কিত ওই প্রতিবেদনে সংস্থাটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দুই ভাগ করার সুপারিশ করেছে। ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ‘ভোক্তা সম্পর্কিত’ একটি বিভাগ এবং বাণিজ্যনীতি, বৈদেশিক বাণিজ্য ও বাণিজ্যিক সংস্থার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আরেকটি বিভাগ তৈরির সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ভোক্তাস্বার্থ দেখতে ২০০৯ সালে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন এবং ২০১২ সালে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা আইনসহ আরও কয়েকটি আইন করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, বিএসটিআই, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরসহ রয়েছে নানা সংস্থা। ভোক্তা অধিকার রক্ষায় এসব সংস্থার সক্ষমতা সীমিত এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে একেবারে অকার্যকর।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান জানান, ভোক্তা অধিকারের সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে আইএমএফের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এ ছাড়া ক্যাবের প্রতিবেদনটি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। যে লক্ষ্যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বা প্রতিযোগিতা কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো করা হয়েছিল- তা অর্জিত হচ্ছে না। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কার্যক্রম বাজার পরিদর্শন ও কিছু জরিমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ। বাজার কারসাজির পেছনে জড়িত সিন্ডিকেট প্রতিরোধে এই প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা সীমিত।
ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট খুবই ক্ষমতাধর। কখনও মনে হয় এর সরকারের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। কিছুদিন আগে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন যে, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াটা সহজ নয়, ব্যবস্থা নিলে তারা ভোগ্যপণ্যের বাজার আরো অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। এ থেকে অনুমান করা যায়, দেশের ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কতটা ক্ষমতা ধারণ করে।
আমরাও মনে করি বাণিজ্যমন্ত্রণালয়কে দুই ভাগ করে ভোক্তা অধিকারের আরো বাড়ানো হলে তা মন্দ হবে না। অন্তত সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারবে। ভোক্তাদের অতিরিক্ত দামে পণ্য কিনতে হবে না। ভোক্তা অধিকারের ক্ষমতা বাড়ানো হলে আশা করা যায় বাজার পরিস্থিতি সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হবে।
দৈনিক সরোবর/আরএস