ঢাকা, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১

পিটাস হাসের দৌড়ঝাঁপ

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: জুন ১০, ২০২৩, ০৩:২৫ রাত  

ফাইল ফটো

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৭-৮ মাস বাকি আছে। জাতীয নির্বাচন যে আসন্ন, তা, মনে হচ্ছে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের দৌড়াদৌড়িতে।  হাস দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন। 

কি কথা বলছেন, তা সংবাদ মাধ্যমগুলোতে তেমন নতুন কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। সংবাদ মাধ্যম হয়তো নতুন তথ্য না পাওয়ায় প্রকাশ করতে পারছে না। তবে যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বলে আসছে যে দেশটি বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু দেখতে চায়। এই চাওয়াটা অবশ্যই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তা নিয়ে কেউ সন্দেহ করবে না। 

এখনো যেটার সুরাহা হয়নি, তাহলো বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি ছেড়েছে তার স্পষ্ট ঘোষণা দলটির কাছ থেকে আসেনি। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির ২০০ বছরের ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। এতে নতুনত্ব কিছু নেই, স্রেফ এই ভিসানীতিতে বাংলাদেশের নামটি সংযুক্ত করা এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে কেউ অনিয়ম করলে, নির্বাচনের দিন ভোটারদের ভোট দিতে বাধাদান, এগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত হলে তাদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়া কঠিন হবে। 

সব ঘটনা ছাপিয়ে বলা যায়, দেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন সংবিধান অনুসারে হতে যাচ্ছে, এতে সব সংশয় কেটে গেছে। এ নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে আর কোনও দ্বিধা-সংকোচ-সংশয় নেই। 

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আওয়ামী লীগ যে পথে হেঁটে আদায়ে সক্ষম হয়েছিলো, সেই একই পধে হেঁটে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে, শুধু ব্যর্থ বললে কম বলা হয়, বলা যায়, চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে দলটির মধ্যে নতুন হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে। 

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি শুরুতেই অবাস্তব ও অযৌক্তিক দাবি হিসেবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলে আসছিলো। তারপরও দাবিটি আদায়ে বিএনপির চেষ্টার প্রতি অনেকে তাকিয়ে ছিলো। কিন্তু এটা নিয়ে যতটুকু সময় ব্যয় করেছে দলটি, তা না করে যদি আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিত, তাহলে ভালো হতো বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। 

সম্প্রতি ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূত পিটাস হাসের ব্যস্ততা, দৌড়ঝাঁপ আসলে কি নিয়ে, বিষয়টি কি এমন যে সব দলকেই ছাড় দিয়ে একটি জায়গায় আসতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ভাষ্যমতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে। নির্বাচনে ভোট ডাকাতি, ব্যালট পেপার ছিঁড়ে নিজের পক্ষের প্রার্থীকে ভোট দেওয়া, ভোট কেন্দ্র দখলে নিয়ে খুশিমতো ভোট দেওয়া, ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আসা ঠেকানো, ভোটকেন্দ্র পুড়িয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া, প্রিজাইডিং অফিসারকে ভয়ভীতি ও মারধর করা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর বোম ফোটানো-এসব যাতে কোনোভাবেই না হয়, এটাই চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। 

এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর দায় এড়ানো যায় না। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা উন্নত দেখার জন্য যে আশা করে আছে, তা এ দেশে নানা সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কারণে নির্বাচন ব্যবস্থা দুর্বল করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ভালোভাবেই জানে- এ কাজে কাদের কতটুকু দায় আছে। 

সামনে এসেছে বিগত ২০১৪ ও ২০১৯ সালের জাতীয় দুটি নির্বাচন। সংবিধান অনুসারে দুটি নির্বাচন হয়েছে। ’১৪ এর নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। দাবি ছিলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের। ফলে এটি পূরণ না হওয়ায় নির্বাচন বর্জন করে এবং নির্বাচন ঠেকাতে দলটি অগ্নিসংস্ত্রাস চালিয়ে ঘৃণা কুড়ায়। ’১৯ এর নির্বাচনে অংশ নেয়, কিন্তু জিততে পারেনি। 

এবার জিতার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছে। এ দাবি অর্জনের কোনোই সম্ভাবনা নেই। তাহলে এবারও কি দলটি ভোট বর্জন করবে, যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় থেকে কি ফর্মুলা দেবে? দেশটি শুরুতেই অবশ্য বলছে তারা কোনও দলকে সমর্থন করে না। কিন্তু সুক্ষ্ম কৌশল দিয়ে যদি প্রমাণ করে-একটা দিকে ঝোঁক অবশ্য আছে, তাতে কি যে দলটির প্রতি ঝোঁক-প্রবণতা, সেই দলটি ক্ষমতায় যাবার সুযোগ লাভ করতে পারবে? এ প্রশ্নটি রাজনৈতিক ভাষ্যকারদের বেশ কৌতূহলী করে তুলেছে। 

যুক্তরাষ্ট্র যদি অবাধ-সুষ্ঠু ভোট চায়, তাকে বাংলাদেশের  প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের খতিয়ান চুল-চেরা বিশ্লেষণ করতে হবে। এর পর তাদের একটি জায়গায় আসতে হবে, বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা কেন এখনো কাক্সিক্ষত উন্নতি হয়নি বা কাদের কারণে সম্ভব হয়নি। 

যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয় জানে-বাংলাদেশে দুটি অবৈধ সামরিক সরকার চেপে বসেছিলো। কোনও দেশে সামরিক সরকার চেপে বসলে শুধু নির্বাচন ব্যবস্থা নয়, সবদিকে কতটা অবক্ষয়ের সৃষ্টি করে তা দেশটির অজানা নয়।

আশার কথা-দেশের উন্নত নির্বাচন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যাই যে পদক্ষেপ নিয়েছে- তা প্রশংসার দাবি রাখে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রথমবার তিনিই সংবিধান অনুসারে গঠনে এগিয়ে এসেছেন। নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী হওয়ায় আমরা মনে করি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।

দৈনিক সরোবর/আরএস