ঢাকা, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১

বহুমুখী বিনিয়োগের কেন্দ্রে বাংলাদেশ

সম্পাদকের কলম

 প্রকাশিত: এপ্রিল ২৮, ২০২৩, ০৮:৫৫ রাত  

অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে একটি দেশের অভ্যুদয় ঘটে যখন দেশটি শিল্পোন্নতির দিকে এগিয়ে যায়। বিশ্বের যেসব দেশ শিল্পোন্নত তারা এটি অর্জনের জন্য দীর্ঘ একটি পথ পেরিয়ে এসেছে। 

বাংলাদেশও এখন দ্রুত সময়ের মধ্যে শিল্পোন্নত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের চেষ্টা করছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশকে শিল্পোন্নত দেশের তালিকায় নিয়ে যাবার লক্ষে শুরুতেই মহাপরিকল্পনা নেন। দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলায় মন দেন। ইতোমধ্যে এসব অঞ্চল বহুদূর এগিয়ে গেছে। বিশ্বের বড় বড় অর্থনৈতিক দেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করছে। এই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বাংলাদেশকে শিল্পোন্নতভুক্ত হতে বিশেষ সহায়তা করবে। 

আমরা লক্ষ্য করে আসছি যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশে সফলে কোনো দেশে গেলে সেখানকার ব্যবসায়ী সমাজসহ বাংলাদেশি প্রবাসীদের প্রতি বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলদেশ আজ বিনিয়োগের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে এটা আমাদের সরকার প্রধান বলতে ভুলে যাননি। এতে বিদেশি ব্যবসায়ী ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা বাংলাদেশে বিনিয়েগে বেশ উৎসাহিত হয়েছেন এবং বিনিয়োগের জন্য এগিয়েও এসেছেন। বিদেশি বিনিয়োগের জন্য আমাদের সরকার যেসব করণীয় তা করেছে। একটা সময় বিদেশিরা দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হলেও নানা বাধায় পিছিয়ে যেতেন। এখন আর বিনিয়োগে পিছিয়ে যাচ্ছেন না বিদেশিরা। ফলে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে দ্রুত বিনিয়োগ ঘটছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগের আঞ্চলিক কেন্দ্রে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল দেশের চেহারা আরো বদলে দিতে সহায়তা করবে। 

এইচএসবিসি গ্লোবাল রিসার্চ প্রজেকশন রিপোর্ট ইঙ্গিত করে, বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্য ও জার্মানিকে ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজার হয়ে উঠতে পারে। 

কোভিড-১৯ মহামারি বিশ্বব্যাপী বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে প্রভাবিত করেছে। তবে আমরা কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে সংকট মোকাবিলা করতে পেরেছি। আমাদের অর্থনীতি শক্তিশালী স্থিতিস্থাপকতা দেখিয়েছে, প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছে এবং এখনও অস্থির বিশ্ব আর্থিক পরিস্থিতি এবং সরবরাহের দিকের সীমাবদ্ধতার চাপকে ধরে রেখেছে। বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছে এবং ২০২১-২০২২ অর্থবছরে জিডিপি বৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ১ শতাংশ ধরে রেখেছি। 

ইউক্রেন যুদ্ধ সত্ত্বেও আমরা চলতি অর্থবছরে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার অর্জন করছি। আইসিটি, ইলেকট্রনিক্স, অবকাঠামো, চামড়া, টেক্সটাইল, আতিথেয়তা ও পর্যটন, ভারী শিল্প, রাসায়নিক ও সার এবং এসএমইর মতো বিভিন্ন খাতে সুযোগ অনেক বেড়েছে। আমাদের সরকার ব্যবসা করার সাবলীল, সহজ এবং কার্যকর উপায়গুলো সহজতর করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। বিদেশি বিনিয়োগের জন্য সরকার ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক এবং সফটওয়্যার পার্ক নির্মাণ করছে। 

আওয়ামী লীগ সরকারের রূপকল্প-২০২১ ও রূপকল্প-২০৪১ অনুযায়ী জনগণের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করে চলেছে। বাংলাদেশকে এখন ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে এবং দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, ডিজিটালাইজেশন, খাদ্য উৎপাদন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা থেকে শুরু করে অনেক ক্ষেত্রে উদাহরণ স্থাপন করেছে। বাংলাদেশের সহনশীল জনগণ এখন আশা ও আশাবাদ নিয়ে ২০২৬ সালের মধ্যে এলডিসি বিভাগ থেকে একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে একটি আধুনিক, উন্নত এবং জ্ঞানভিত্তিক ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর দিকে আমাদের যাত্রায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

আমরা মনে করি, বিনিয়োগবন্ধব দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ধারে কাছে কেউ নেই। ফলে জাপান অবলীলায় বাংলাদেশে মোটা দাগে বিনিয়োগ করতে পারে। দেশটি আমাদের শীর্ষ উন্নয়ন সহযোগী দেশ তা সবার জানা। জাপানের শ্রমিকের যে বাজার মূল্য, তার তুলনায় এখনও আমাদের দেশে কম। এ সুযোগটি দেশটি সহজেই নিতে পারে। এ ছাড়া আমাদের দেশে যে বিপুল মানবসম্পদ ও শ্রমশক্তি রয়েছে তা জাপান বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কাজে লাগে পারবে।

দৈনিক সরোবর/আরএস